ডাকসু নিবার্চন

ছাত্রলীগের সরব প্রচারণা ক্যাম্পাসে নেই ছাত্রদল

প্রকাশ | ২৬ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

এস এম মামুন হোসেন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নিবার্চনকে সামনে রেখে ক্যাম্পাসজুড়ে ব্যাপক প্রচারণা শুরু করেছে ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ। তবে এখনো ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারেনি প্রধান বিরোধী ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। গত সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবেশ পরিষদের সঙ্গে ছাত্র সংগঠনগুলোর আলোচনা শেষে ছাত্রলীগ ও ছাত্রদল একত্রে সংবাদ সম্মেলন করে। সেখানে ছাত্রদলকে ক্যাম্পাসে আসার ক্ষেত্রে বাধা দেয়া হবে না বলে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে নিশ্চয়তা দেয়া হয়। এমনকি ছাত্রদলকে চায়ের আমন্ত্রণও জানানো হয়। কিন্তু এরপর প্রায় সপ্তাহ পার হয়ে গেলেও ছাত্রদলের ক্যাম্পাসে আসার বিষয়টি আর অগ্রসর হয়নি। গত কয়েক দিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি মোড়েই ছাত্রলীগের বিশাল বিশাল বিলবোডর্। যেখানে সাধারণ শিক্ষাথীের্দর কল্যাণে ছাত্রসংগঠনিটি কী করতে চায় সে সম্পকের্ বিভিন্ন ধরনের প্রতিশ্রæতি প্রদান করা হয়েছে। আবার প্রতিদিনের নিয়মিত মিছিল মিটিংয়েও সাধারণ ছাত্রদের কল্যাণে বিভিন্ন ধরনের প্রতিশ্রæতি দিচ্ছেন তারা। এরই মধ্যে ছাত্রলীগের নেতাদের মধ্যে যারা নিবার্চনে প্রাথীর্ হতে ইচ্ছুক তারা সাধারণ শিক্ষাথীের্দর সঙ্গে সুসম্পকর্ গড়ে তুলতেও চালাচ্ছেন বিভিন্ন ধরনের কাযর্ক্রম। প্রায় প্রতিদিন রাতেই ছাত্রলীগের নেতারা রুমে রুমে গিয়ে নিবাির্চত হলে সাধারণ ছাত্রদের পক্ষে কাজ করার প্রতিশ্রæতি দিচ্ছেন। এখন পযর্ন্ত তফসিল ঘোষণা বা আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু না হলেও ব্যক্তিগত এবং সাংগঠনিকভাবে প্রচার-প্রচারণা বেশ জমিয়ে তুলেছে ছাত্রলীগ। তাদের কাযর্ক্রমে এরই মধ্যে ক্যাম্পাসে একটি নিবার্চনী আবহাওয়াও তৈরি হয়েছে। তবে তফসিল ঘোষণা না হওয়ায় প্রচারণার বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করছে না সংগঠনটির নেতারা। বরং এটাকে তারা প্রথম বষের্র শিক্ষাথীের্দর ডাকসু সম্পকের্ ধারণা দেয়ার কমর্সূচি বলে বণর্না করছেন। তবে এর বিপরীতে প্রধান বিরোধী ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে ক্যাম্পাসে প্রবেশই করতে পারেনি। কবে প্রবেশ করবে তাও জানে না ছাত্র সংগঠনটির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। তারা অভিযোগ করেছেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতির উপস্থিতিতে সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী ছাত্রদলকে ক্যাম্পাসে আসার এবং মধুর ক্যান্টিনে চা খাওয়ার যে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল এখন তার কোনো প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। এমনকি ছাত্রদলের পক্ষ থেকে ছাত্রলীগ এবং প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও কোনো পক্ষই এ বিষয়ে কাযর্কর কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না বলেও অভিযোগ ছাত্রদলের। প্রশাসন এবং ছাত্রলীগের এমন আচরণে অংশগ্রহণমূলক নিবার্চন করার ইচ্ছা ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠন এবং প্রশাসনের আছে কিনা তা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছে ছাত্রদলের নেতারা। যদিও ছাত্রলীগ এবং প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি গ্রহণযোগ্য নিবার্চন আয়োজনের ব্যাপারে প্রতিশ্রæতি দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আকরাম হাসান যায়যায়দিনকে বলেন, ‘আমরা সব সময়ই ছাত্র সংসদ ও হল সংসদ নিবার্চনের পক্ষে। তবে আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি একটি সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নিবার্চন আয়োজন করতে হবে। গত সোমবার আমরা যখন গিয়েছিলাম তখন ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে আমাদের মৌখিকভাবে কিছু ভালো ভালো কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু এরপর সে বিষয় আর কোনো ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে এমনটি বলার মতো তথ্য আমার কাছে নেই। আমাদের পক্ষ থেকে ছাত্রলীগের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। তারা জানিয়েছে তারা এ বিষয়ে নিজেদের মধ্যে কিছু আলাপ-আলোচনা করবে। তারপর সিদ্ধান্ত জানাবে। কিন্তু এখনো কোনো সিদ্ধান্ত জানতে পারিনি।’ ছাত্রদলে সাধারণ সম্পাদক আরো বলেন, ‘আমরা প্রশাসনের সঙ্গেও কথা বলেছি। আমরা জানিয়েছি আমাদের ক্যাম্পাসে আসার সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে। তারা আমাদের মৌখিকভাবে আশ্বস্ত করেছে। কিন্তু কাযর্কর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। প্রশাসন কোনো ইতিবাচক উদ্যোগ নিয়েছে এটা আমাদের কাছে দৃশ্যমান নয়। আমরা আরো দাবি করেছি, সুষ্ঠু নিবার্চনের স্বাথের্ ভোটকেন্দ্র হলের বাইরে করা, ভোটকেন্দ্র সিসিটিভির আওতায় আনাসহ আরো কিছু বিষয়। এসব বিষয় বাস্তবায়নের পরেই আমরা তফসিল ঘোষণার দাবি জানিয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের দাবি না মেনেই এরই মধ্যে তারিখ ঘোষণা করেছে। তবে আমরা আশা করি, এসব বিষয় স্পষ্ট করেই চ‚ড়ান্ত তফসিল ঘোষণা করা হবে।’ এ বিষয়ে কথা বলার জন্য ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর সঙ্গে যোগাযোগ করেও তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সঞ্জিত চন্দ্র দাস যায়যায়দিনকে বলেন, ‘এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে আমরা কোনো প্রচারণা শুরু করিনি। তফসিল ঘোষণার পর সব নিয়ম মেনে প্রচারণা শুরু হবে। এখন যেহেতু নতুন শিক্ষাবষের্ ছেলেমেয়েরা এসেছে সে কারণে তাদের ডাকসু সম্পকের্ জানাতে আমরা ডাকসু-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিলবোডর্-প্ল্যাকাডর্ লাগিয়েছি। বিভিন্ন মিছিল-মিটিংয়ে ডাকসু নিয়ে কথা বলছি। এর উদ্দেশ্য নতুনদের ডাকসু সম্পকের্ জানানো।’ সঞ্জিত চন্দ্র দাস আরো বলেন, ‘ক্যাম্পাসে কেউ কাউকে চায়ের দাওয়াত দিয়েছে কিনা সেটি আমি জানি না। তবে তারা পরিবেশ পরিষদের মিটিংয়ে এলে তাদের সঙ্গে আমাদের আন্তরিক পরিবেশে কথা হয়েছিল। আমরা মনে করি ক্যাম্পাসে সহাবস্থান রয়েছে। যারা নিয়মিত ছাত্র তারা ক্যাম্পাসে এসে তাদের কাযর্ক্রম পরিচালনা করলে আমাদের কোনো আপত্তি থাকবে না। তবে যাদের ছাত্রত্ব নেই তাদের যদি সাধারণ শিক্ষাথীর্রা ধরে মারধর করে তবে তার দায় আমাদের ছাত্রলীগের নয়।’