আ’লীগের জয় ও বিএনপির হারের কারণ জানালেন শেখ হাসিনা

প্রকাশ | ২৬ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি রিপোটর্
একাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চনে আওয়ামী লীগের বিপুল বিজয় ও বিএনপি জোটের বড় পরাজয়ের কারণ জানালেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি আওয়ামী লীগের জয়কে প্রত্যাশিত উল্লেখ করে জয়ের পেছনে ১৪টি কারণ তুলে ধরেছেন। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ বিএনপি জোটের পরাজয়ের সাতটি কারণ উল্লেখ করেছেন। টানা তৃতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর শুক্রবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। ভাষণে শেখ হাসিনা যারা নৌকায় ভোট দিয়েছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ আর যারা ভোট দেননি তাদের ধন্যবাদ জানান নিবার্চনে অংশ নেয়ার জন্য। পাশাপাশি নিবার্চনে অংশগ্রহণকারী সব দল ও জোট এবং প্রাথীের্ক ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চনকে ঘিরে বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীদের হামলায় ২৪ জন নেতা-কমীর্ নিহত হয়েছেন। তিনি তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং আহতদের দ্রæত আরোগ্য কামনা করেন। যে কারণে আওয়ামী লীগের জয় : প্রধানমন্ত্রী বলেন, এবারের নিবার্চনে আওয়ামী লীগের বিপুল বিজয় ছিল খুবই প্রত্যাশিত। নিবার্চনের আগে দেশি-বিদেশি জরিপগুলোও এ রকমই ফলাফলের ইঙ্গিত দিয়েছিল। লন্ডন-ভিত্তিক ইকোনমিক ইনটেলিজেন্স ইউনিট এবং রিসাচর্ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট সেন্টারের জরিপের ফল মানুষ লক্ষ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগের ভূমিধস বিজয়ের পেছনের কারণ তুলে ধরেন। ১. বিগত ১০ বছরে দেশে যে উন্নয়ন হয়েছে, সাধারণ মানুষ তার সুফল পেয়েছেন। ২. দশ বছর আগে যে বালক/বালিকাটি হারিকেন বা কুপির আলোয় পড়ালেখা করত, গ্রামে পাকা রাস্তা দেখেনি, তরুণ বয়সে সে এখন বৈদ্যুতিক বাতির আলোয় পড়াশোনা করছে, মোটরযানে যাতায়াত করছে। ৩. যে বয়স্ক পুরুষ-নারী পরিবারে ছিল অবহেলিত-অপাঙক্তেয়, বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা তাকে সংসারে সম্মানের জায়গায় নিয়ে গেছে। ৪. গ্রাম বাংলার খুব কম পরিবারই আছে, যে পরিবার সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর উপকারভোগী নয়। কোনো না কোনোভাবে প্রতিটি পরিবার উপকৃত হচ্ছেন। ৫. কৃষিশ্রমিক, নিমার্ণশ্রমিক, ভ্যান বা রিকশাচালকসহ নিম্নবিত্তের মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটেছে। ১০ বছর পূবের্ একজন কৃষি শ্রমিক তার দৈনিক মজুরি দিয়ে বড়জোর ৩ কেজি চাল কিনতে পারতেন। এখন তিনি ১০ কেজি চাল কিনতে পারেন। ৬. সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতা বিগত ১০ বছরে আড়াই থেকে তিন গুণ বেড়েছে। ৭. সরকারি ও বেসরকারি খাতের শ্রমিক-কমর্চারীদের বেতন-ভাতাও সমহারে বেড়েছে। যেমন পোশাকশ্রমিকদের ন্যূনতম বেতন ১৬০০ টাকা থেকে ৫ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে ৮ হাজার টাকা হয়েছে। ৮. কৃষিজীবীদের সার, বীজসহ বিভিন্ন উপকরণে ভতুির্ক প্রদানের মাধ্যমে প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে। ৯. ব্যবসায় এবং শিল্পবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে একদিকে কমর্সংস্থান তৈরি হয়েছে, অন্যদিকে রপ্তানি বাণিজ্য প্রসারিত হয়েছে। যার সুবিধা সাধারণ জনগণ পাচ্ছেন। ১০. পদ্মা সেতু, ঢাকা মেট্রোরেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, মহাসড়কগুলোকে চার লেনে উন্নীতকরণসহ মেগা প্রকল্পগুলো দৃশ্যমান হওয়ায় সাধারণ মানুষের বতর্মান সরকারের ওপর আস্থা জন্মেছে। ১১. মানুষ নিজের এবং দেশের মযার্দা চায়। স্বাধীনতার ৪৪ বছর পর নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশ এবং ৪৬ বছর পর উন্নয়নশীল দেশের মযার্দা প্রাপ্তি জনগণকেও গবির্ত করেছে। ভিক্ষুকের দেশের দুনার্ম ঘুচেছে। যারা মানুষকে মযার্দার আসনে বসিয়েছেন, তাদের মানুষ মযার্দা দেবেন- এটাই স্বাভাবিক। ১২. আওয়ামী লীগ ২০১৪ সালের পর থেকেই নিবার্চনী প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। প্রতিটি সম্ভাব্য প্রাথীর্ নিজ নিজ এলাকায় জনসংযোগ বাড়িয়েছেন এবং এলাকার উন্নয়নে অবদান রেখেছেন। এবারের নিবার্চনে দলের প্রতিটি নেতাকমীর্ মনোনীত প্রাথীর্র জন্য কাজ করেছেন। ১৩. আওয়ামী লীগের নিবার্চনী প্রস্তুতি ছিল ব্যাপক। সরাসরি সাধারণ মানুষের সঙ্গে যোগাযোগের পাশাপাশি ইলেকট্রনিক, প্রিন্ট এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক প্রচারণা চালানো হয়েছে। ১৪. নিবার্চনী প্রচারকালে সমাজের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রতি সমথর্ন জানিয়েছেন। ব্যবসায়ী, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, কৃষিবিদ, শিক্ষাবিদ, সাবেক আমলা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য, শিল্পী-সাহিত্যিক, সাংবাদিক, ধমীর্য় নেতা- সকলেই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রতি প্রকাশ্যে সমথর্ন জানিয়েছেন। একটি সমাজের প্রায় সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ যখন কোনো দলের প্রতি সমথর্ন ব্যক্ত করেন, তখন তাকে কোনোভাবেই আটকে রাখা যায় না। যে কারণে বিএনপি জোটের পরাজয় : প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে বিএনপির পরাজয়ের পেছনে সাতটি কারণ উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ জোটের নিবার্চনী কৌশল সম্পকের্ জনগণ ভালোভাবেই জানেন। এ নিয়ে কথা বলতে চাই না। তাদের পরাজয়ের নানা কারণ রয়েছে : ১. এক আসনে ৩-৪ জন বা তারও বেশি প্রাথীর্ মনোনয়ন ২. মনোনয়ন নিয়ে ব্যাপক বাণিজ্যের অভিযোগ এবং দুবর্ল প্রাথীর্ মনোনয়ন ৩. নিবার্চনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলে কে প্রধানমন্ত্রী হবেনÑ সে বিষয়ে অনিশ্চয়তা ৪. নিজেরা জনগণের জন্য কী করবে, সে কথা তুলে ধরতে ব্যথর্ হয়েছে। অপরদিকে ক্ষমতায় গেলে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কী ধরনের প্রতিহিংসামূলক ব্যবস্থা নেবেÑ তাদের প্রচারণায় সেটি প্রাধান্য পেয়েছে। ৫. সোশ্যাল মিডিয়ায় আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বিষোদ্?গার করা ছাড়া নিজেদের সাফল্যগাথা তারা তুলে ধরতে পারেনি। ৬. ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পযর্ন্ত বিএনপি-জামায়াতের দেশব্যাপী অগ্নিসন্ত্রাস ও ধ্বংসাত্মক কমর্কাÐ সাধারণ মানুষের মন থেকে মুছে যায়নি। ৭. বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকে যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতাদের মনোনয়ন তরুণ ভোটাররা মেনে নিতে পারেনি। তরুণেরা আর যা-ই হোক, স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির পক্ষ নিতে পারে না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এগুলো ছাড়াও আরও বহু উদাহরণ দেয়া সম্ভব, যার মাধ্যমে প্রমাণ করা যাবে যে সাধারণ ভোটারেরা বিএনপির দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন এবং নৌকার অনুকূলে এবার গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছিল।