খামার পর্যায়ে ব্রয়লারের কেজি ১৯০-১৯৫ টাকা নির্ধারণ

ভোক্তা অধিকারের কাছে ৪ কোম্পানির প্রতিশ্রম্নতি

প্রকাশ | ২৪ মার্চ ২০২৩, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
ব্রয়লার খামার পর্যায়ে কেজি ১৯০ থেকে ১৯৫ টাকা নির্ধারণ করেছে কাজী ফার্মস, প্যারাগন পোল্ট্রি অ্যান্ড হ্যাচারি, আফতাব বহুমুখী ফার্মস ও সিপি বাংলাদেশ নামের চার কোম্পানি। শুক্রবার থেকে খামার পর্যায়ে এ দামে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হবে। তবে ভোক্তা পর্যায়ে মুরগির দাম কত হবে সেটা নির্ধারণ হয়নি। বৃহস্পতিবার অযৌক্তিক দামে বাজারে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি করায় চার কোম্পানিকে তলব করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। এরপর কোম্পানিগুলো খামার পর্যায়ে নির্ধারিত এ দামে মুরগি বিক্রি করার প্রতিশ্রম্নতি দেন। এর আগে কোম্পানিগুলো অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে ব্রয়লার মুরগির অযৌক্তিক মূল্যবৃদ্ধির কারণ ব্যাখ্যা করেছেন। এরপর সভাকক্ষে সংবাদ সম্মেলনে এ নির্ধারিত দামের কথা জানিয়েছেন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান। এ সময় তিনি বলেন, 'কোম্পানিগুলো আজ (বৃহস্পতিবার) ২৩০ টাকায় খামার পর্যায়ে ব্রয়লার বিক্রি করেছে। কাল (শুক্রবার) থেকে ১৯০-১৯৫ টাকায় বিক্রি করবে। আশা করছি ভোক্তা পর্যায়ে এখন দাম ৩০-৪০ টাকা কমবে। তিনি বলেন, গোয়েন্দা সংস্থা ও ভোক্তার কর্মকর্তারা আমাকে জানিয়েছেন সারাদেশের পাইকারিতে ২২০-২৩০ টাকায় ব্রয়লার বিক্রি হচ্ছে। সেটা হাত বদলে ২৬০ হচ্ছে খুচরায়। সফিউজ্জামান বলেন, প্রতিটি ভোক্তা এখন মুরগির দাম নিয়ে সাফার করছে। আশা করছি এ পদক্ষেপের কারণে দুই-তিন দিনের মধ্যে মুরগির দাম কমে আসবে। তিনি আরও বলেন, কোম্পানিগুলো আমাদের বলছে, ফিডের দাম বাড়ার কারণে এখন উৎপাদন খরচ বেড়েছে। তবে আমরা এও বলছি মুরগির দাম কোনোভাবেই ২০০ টাকার বেশি যৌক্তিক নয়। কোনোভাবে ৫০-৬০ টাকা বাড়তি দাম কাম্য নয়। আমরা কোম্পানিগুলোকে বলেছি, কোনো খাতে সরকার বেশি ইন্টারাপ্ট করলে সমস্যা, আমরা আপনাদের সাপোর্ট দেব। কিন্তু বাড়তি দাম মানবো না। তাই তারা দাম কমানোর বিষয়ে রাজি হয়েছে। এখন খামার পর্যায় থেকে দাম নির্ধারিত হবে। এরপর হাত বদলের দাম কত বাড়ছে, সেটা আমরা দেখব। গোয়েন্দা সংস্থা তদারকি করবে। এরপর কোনো সমস্যা হলে, সমাধান না হলে আমদানি উন্মুক্ত করে দেব। এ সময় কাজী ফার্মস গ্রম্নপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং কাজী ফার্মসের কর্ণধার কাজী জাহেদুল হাসান বলেন, অনেক ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছে। এ জন্য ফার্মসে দাম নির্ধারণ করে দেব। এরপর বাইরে অনেক হাতবদল হয়। তারপর দাম কত হচ্ছে, সেটা ভোক্তা অধিদপ্তর দেখবে। তিনি আরও বলেন, সারাদেশে মুরগি উৎপাদনে ঘাটতি হয়েছে। ৩০ বছরের ব্যবসায় এমন অবস্থা দেখিনি। সরবরাহ কম থাকার কারণে মুরগির দাম বাড়ছে। তিনি বলেন, আমরা যে চার কোম্পানি আছি, সে নির্ধারিত দামে বিক্রি করব। খাবারের দাম ও খরচ কমতে পারে, তখন সেটা আরও কমাব। অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সফিউজ্জামান বলেন, মার্কেট লিডাররা এ দাম নির্ধারণ করল। বাজারে এর প্রভাব আসবে। বাজারে এখন ভোক্তারা ৩০-৪০ টাকা কমে পাবে বলে আশা করি। ভোক্তা অধিদপ্তর বলেছে, এর আগে গত ৯ মার্চ পোলট্রি মুরগি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে অধিদপ্তরের সভাকক্ষে মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়েছিল। ওই সভায় পোলটি (ব্রয়লার) মুরগি উৎপাদন ব্যয় করপোরেট পর্যায়ে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা ও প্রান্তিক খামারি পর্যায়ে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা, খুচরা পর্যায়ে পোলট্রি (ব্রয়লার) মুরগির মূল্য ২০০ টাকার অধিক যৌক্তিক নয় বলে প্রতিষ্ঠানগুলো জানায়। এরপর বর্তমানে অস্থিতিশীল হয়ে পড়েছে মুরগির বাজার। খুচরা পর্যায়ে ব্রয়লার মুরগি ২৭০-২৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা যায়। পাশাপাশি কাপ্তান বাজারে পাইকারি পর্যায়ে ২৪৫ থেকে ২৫০ টাকা বিক্রয় করা হচ্ছে। গত ৯ মার্চ যৌক্তিক মূল্যে পোলট্রি (ব্রয়লার মুরগি) বিক্রি করবেন বলে ভোক্তা অধিদপ্তরের প্রতিশ্রম্নতি দিলেও ব্যবসায়ীরা সেটা করেনি। বরং আরও অধিক মূল্যে তা বিক্রি হচ্ছে, যা ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯-এর ২১ (খ) ধারা অনুযায়ী ভোক্তা- অধিকারবিরোধী অপরাধ। সেজন্য বৃহস্পতিবার মুরগির অযৌক্তিক মূল্য বৃদ্ধির বিষয়ে প্রয়োজনীয় তথ্যসহ উপস্থিত হয়ে ব্যাখ্যা প্রদানের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।