স্বাগত মাহে রমজান

নামাজ আদায় করতে হবে সহিহ শুদ্ধভাবে

প্রকাশ | ২৭ মার্চ ২০২৩, ০০:০০

সাখাওয়াত হোসেন
ইমানদার নারী-পুরুষদের বিশেষ কোনো ওজর ছাড়া পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতেই হবে। পাঁচ ওয়াক্ত নিয়মিত নামাজ আদায় করলে এবং কবিরা গুনাহমুক্ত থাকলে দুনিয়ার সুখ-শান্তির পাশাপাশি পরকালীন মুক্তিও নিশ্চিত। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে 'যে ব্যক্তি যথারীতি নামাজ আদায় করবে, তা কিয়ামতের দিন তার জন্য মুক্তি অসিলা, আলোকবর্তিকা ও যুক্তি প্রমাণ হবে। আর যে যথারীতি নামাজ আদায় করবে না, তার জন্য তা আলোকবর্তিকাও হবে না, যুক্তি প্রমাণও হবে না এবং মুক্তির অসিলাও হবে না। অধিকন্তু সে কিয়ামতের দিন ফিরাউন, কারুন, হামান ও উবাই বিন খালাফের সঙ্গী হবে।' তবে নির্ধারিত সময়ে শুধু নামাজ পড়াই যথেষ্ট নয়, নামাজকে নিয়ম অনুযায়ী, যথাযথভাবে এবং সহিহ শুদ্ধভাবে পড়াও জরুরি। কারণ নিয়মবহির্ভূত নামাজ পড়া, অশুদ্ধ নামাজ পড়া নামাজ না পড়ারই সমতুল্য। পবিত্র কোরআনের সূরা মাউনের ৪ ও ৫ নং আয়াতে বর্ণিত হয়েছে, 'তারপর সেই নামাজিদের জন্য ধ্বংস, যারা নিজেদের নামাজে গাফিলতি করে।' তাফসিরে তাওজিহুল কোরআনে (মুফতি মোহাম্মদ তাকি ওছমানি) বর্ণিত হয়েছে, 'এটাও গাফিলতির অন্তর্ভুক্ত যে, কেউ নামাজ পড়ল তো বটে, কিন্তু সহিহ তরিকায় পড়ল না।' হাদিসে এসেছে, নামাজে সূরা কিরাত অশুদ্ধ পড়লে নামাজ ভঙ্গ হয়ে যায়। তাই সূরা ফাতিহা এবং কমপক্ষে ৪টি সূরা অথবা ছোট ছোট ১২টি আয়াত এবং নামাজ শুরুর আলস্নাহু আকবর থেকে শুরু করে নামাজ শেষের আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুলস্নাহ পর্যন্ত সহিহ শুদ্ধ করা এবং কোরআন শিক্ষা করা প্রত্যেক ইমানদার নারী-পুরুষের জন্য ফরজ। ইসলামি স্কলাররা বলেন, অনেকে নামাজ যথারীতি আদায় করলেও সূরা-কিরাত সহিহ ও শুদ্ধ করার ব্যাপারে সম্পূর্ণরূপে উদাসীন। সব ধরনের লাজলজ্জা ত্যাগ করে কোরআন শেখার ব্যাপারে কমপক্ষে নামাজ আদায়ের উপযোগী সূরা-কিরাত শেখার ব্যাপারে প্রত্যেক নামাজিকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ, পদক্ষেপ নেওয়া সব কাজের বড় কাজ, সব ধরনের ধর্মীয় কাজের আগের কাজ নিঃসন্দেহে। কোরআনে কারিমে ইরশাদ হচ্ছে, 'জমিন ও আসমানের সকল প্রশংসা একমাত্র তারই। অতএব তোমরা আলস্নাহর তাসবিহ করো (নামাজ পড়) সন্ধ্যায় (মাগরিব ও এশা) ও প্রতু্যষে (ফজর) এবং বিকালে (আসর) ও দ্বিপ্রহরে (জোহর)।' (সূরা রূম : ১৭-১৮) তবে তা অবশ্যই নির্দিষ্ট সময়ে নামাজ আদায় করতে হবে। এ প্রসঙ্গে আলস্নাহতায়ালা বলেন, 'নিশ্চয়ই নামাজ মুমিনদের ওপর সময়ের ভিত্তিতে ফরজ করা হয়েছে।' (সূরা নিসা : ১০৩) আর আলস্নাহর নির্দেশিত পন্থায় নামাজের মাধ্যমে মিলবে হেদায়েত। কোরআনে কারিমে এটা বলা হয়েছে এভাবে, 'কোরআন সেই মুত্তাকিদেরকে মুক্তির পথ দেখাবে যারা জীবনে নামাজ কায়েম করে।' (সূরা বাকারা : ২-৩) কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, 'এটা হেদায়েত ও সুসংবাদ ওই মুমিনদের জন্য যারা নামাজ কায়েম করে, জাকাত দেয় এবং আখেরাতের ওপর দৃঢ় বিশ্বাস রাখে।' (সূরা নামল : ২-৩) নামাজ না পড়ার পরিণতি অত্যন্ত করুণ। বেনামাজির চেহারা মলিন হবে বলে কোরআনে বলা হয়েছে, 'কিয়ামতের দিন তার চেহারা উদাস ও অন্ধকারাচ্ছন্ন হবে, যে কোরআনকে মেনে নেয়নি এবং নামাজ আদায় করেনি।' (সূরা কিয়ামাহ : ৩১) আখেরাতে নামাজের হিসাবই প্রথমে হবে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.)-এর বর্ণনায় হজরত রাসূলুলস্নাহ (সা.) বলেন, কিয়ামতে বান্দার আমলের মধ্যে নামাজের হিসাব সর্বপ্রথম নেওয়া হবে। যদি তা সঠিক হয় তাহলে সে সফল হবে, নাজাত পাবে। আর তা যদি খারাপ হয় তাহলে সে ব্যর্থ ও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। -তিরমিজি নামাজ ইসলাম ও কুফরের মধ্যে পার্থক্যকারী। হজরত জাবির (রা.)-এর বর্ণনায় হজরত রাসূলুলস্নাহ (সা.) বলেন, 'আনুগত্য ও কুফরের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে নামাজ।' সহিহ মুসলিম উলিস্নখিত আয়াত ও হাদিস থেকে আমরা বুঝতে পারি যে, মানবজীবনে নামাজের গুরুত্ব অপরিসীম। কোরআনে কারিমের অন্তত ৮২ জায়গায় নামাজের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে নামাজ পড়ার কথা না বলে সর্বত্রই নামাজ কায়েম করার কথা বলা হয়েছে। এ জন্য নামাজ কায়েমের তাৎপর্যটি বুঝে নেওয়া সবার জন্য একান্ত জরুরি। কোরআন ও হাদিস ভালোভাবে অধ্যয়ন করলে বোঝা যায় যে, আলস্নাহতায়ালা ও তাঁর রাসূল (সা.) নামাজ প্রসঙ্গে যেসব নির্দেশনা দিয়েছেন তার পূর্ণ বাস্তবায়নকেই বলা হয়- নামাজ কায়েম। নির্দেশনাগুলো বিবেচনায় নিলে আমরা বুঝতে পারব যে, অন্তত নিম্নোক্ত ছয়টি কাজ করলে নামাজের উদ্দেশ্য সফল হয় তথা নামাজ কায়েম হয়- ১. জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায়। ২. সহি শুদ্ধভাবে নামাজ আদায়। ৩. ধীরে ধীরে নামাজ আদায়। ৪. বিনীত ও বিনম্রভাবে নামাজ আদায়। ৫. বুঝে বুঝে নামাজ আদায়। ৬. নামাজের শিক্ষার আলোকে জীবন গড়া। এভাবে আদায়কৃত সুন্দর নামাজ হয়ে উঠতে পারে ক্ষমার কারণ। হাদিসে এ বিষয়ে বলা হয়েছে, হজরত উবায়দা বিন সামেত (রা.)-এর বর্ণনায় হজরত রাসূলুলস্নাহ (সা.) বলেন, আলস্নাহ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেছেন। যে ব্যক্তি সময় অনুযায়ী উত্তম রূপে অজু করে, রুকু-সিজদা পূর্ণ করে, মনোনিবেশ সহকারে নামাজ আদায় করবে, তার জন্য আলস্নাহর ওয়াদা- তিনি তাকে ক্ষমা করে দেবেন। যে তা করবে না, তার প্রতি আলস্নাহর কোনো দায়িত্ব নেই। ইচ্ছা করলে তাকে ক্ষমা করতে পারেন আবার না-ও পারেন। -সুনানে আবু দাউদ