অন্তত রোজার মাসে জনগণকে আন্দোলন থেকে নিস্তার দেন

বিএনপিকে শেখ হাসিনা

প্রকাশ | ২৮ মার্চ ২০২৩, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোমবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন -ফোকাস বাংলা
পবিত্র রমজান মাসে আন্দোলন ঘোষণা করায় বিএনপির সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, 'তারা (বিএনপি) এই রমজান মাসেও আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছে। অন্তত এই রমজান মাসে তো জনগণকে আন্দোলন থেকে নিস্তার দেন।' সোমবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগের আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি। এর আগেও রোজার মধ্যে বিএনপি আন্দোলন করেছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, 'রমজান মাসে বেতন বৃদ্ধির আন্দোলনে খালেদা জিয়া ১৭ শ্রমিককে গুলি করে হত্যা করেছিলেন। যারা রমজান মাসে মানুষকে গুলি করে হত্যা করে, তারা রমজান মাসের প্রতি সম্মান দেখাবে কী করে? তাইতো তারা এই মাসে আন্দোলনের ডাক দিয়েছে। পবিত্র রমজান মাস ও মানুষের দুর্ভোগের প্রতি তাদের কোনো অনুভূতিই নেই।' অন্যদিকে, দেশের মানুষকে 'উন্নয়নের বিরুদ্ধে' যে কোনো ধরনের আন্দোলনের বিষয়ে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগ এবার কোনো ইফতার পার্টির আয়োজন না করে দুস্থদের মধ্যে ওই অর্থ ও খাবার বিতরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানান দলের সভাপতি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারের প্রচেষ্টা আর গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত থাকায় ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে গত ১৪ বছরে দেশে 'ব্যাপক' উন্নয়ন হয়েছে। দেশের উন্নয়নে বিশ্ব সম্প্রদায় বাংলাদেশের প্রতি সম্মান দেখাতে 'বাধ্য' হলেও বিএনপি এবং 'বুদ্ধিজীবীদের' সেটি চোখে পড়ে না বলেও মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, 'বিশ্ব সম্প্রদায় বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে বর্ণনা করতে বাধ্য হয়েছে। তথাকথিত বুদ্ধিজীবীরা বাংলাদেশে কোনো উন্নয়ন হচ্ছে না বলার পাশাপাশি দেশে-বিদেশে (সরকারের) বদনাম করতে ব্যস্ত। কিছু তথাকথিত স্থানীয় বুদ্ধিজীবীর পাশাপাশি অনেক আন্তর্জাতিক শক্তি রয়েছে, যারা বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও উন্নয়ন অব্যহত রাখতে চায় না।' পঁচাত্তরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর '৯৬ সালে আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় আসার আগের ২১ বছর এবং ২০০১ সালে নির্বাচনের পর বিএনপির ক্ষমতায় থাকার পাঁচ বছর এবং পরবর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদসহ মোট ২৯ বছরকে বাংলাদেশের জন্য একটি 'কালো অধ্যায়' হিসেবে বর্ণনা করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, 'আমরা বাংলাদেশের মানুষের জন্য কালো মেঘ দূর করে একটি নতুন সূর্যের আলো নিয়ে এসেছি।' বিএনপি-জামায়াত গোষ্ঠী আওয়ামী লীগ ও সরকারের বিরুদ্ধে 'অপপ্রচার চালাচ্ছে' অভিযোগ করে শেখ হাসিনা বলেন, 'কোনো মিথ্যার দ্বারা বিভ্রান্ত হবেন না।' তিনি অবকাঠামো, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান, বিদু্যৎসহ নানা খাত এবং পদ্মা সেতু, মেট্রোরেলসহ মেগা প্রকল্পে সরকারের অবদানের কথা তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'বিএনপি নেতাদের তাদের আমলে এমন একটি উন্নয়ন দেখাতে বলেন।' আওয়ামী লীগ সভাপতি তার দলের নেতাকর্মীদের জনগণের নির্ভরতা ও আস্থা নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, বিএনপি নালিশ করে তাদের ওপরে নাকি খুব অত্যাচার করা হয়। অত্যাচার তো আমরা করি নাই। অত্যাচার করেছে বিএনপি-জামায়াত জোট। জিয়াউর রহমান এসে হাজার হাজার মানুষ হত্যা করেছে। সেনাবাহিনীর মুক্তিযোদ্ধা অফিসার, সৈনিক থেকে শুরু করে প্রায় ৫ হাজার মানুষকে নির্বিচারে ফাঁসি দিয়েছে, গুলি করেছে, হত্যা করেছে। পরিবারগুলো তাদের প্রিয়জনের লাশও পায়নি। সব লাশ গুম হয়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, অবৈধভাবে সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতা দখল করা এবং প্রথমে লেবাস পরে ক্ষমতা যাওয়া, রাজনীতিকে গালি দিয়ে ক্ষমতা দখল করে, আবার সেই লেবাস খুলে নিজেরাই রাজনীতিবিদ হয়ে যাওয়া, আর ক্ষমতা উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে দল গঠন করার কালচারটাই শুরু হয়েছিল বাংলাদেশে। তিনি আরও বলেন, অবৈধ দখলকারীদের হাতে তৈরি করা যে সংগঠন, তারা নাকি গণতন্ত্র চায়। যাদের জন্মই গণতন্ত্রের মধ্য দিয়ে হয়নি। যাদের জন্ম মিলিটারি ডিক্টেটরশিপের মধ্য দিয়ে, তারা আবার গণতন্ত্র চায়। আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র দেয়নি, তারা গণতন্ত্র দেবে। গণতন্ত্রের জন্য নাকি তারা লড়াই করে। ওদের জিজ্ঞেস করতে হয়, তাদের জন্মটা কোথায়? অবৈধ দখলদার এটা তো আমাদের কথা না। আমাদের উচ্চ আদালত বলে দিয়েছে, জিয়া-এরশাদ সম্পূর্ণ অবৈধ। তারপর তারাও নাকি গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রামও করে। আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খান এমপি, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, বীর বিক্রম, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপ-কমিটির চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির নানক, রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জমির, প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুর রহমান, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস এমপি, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মো. পারভীন জামান কল্পনা ও অ্যাডভোকেট সানজিদা খানম এমপি, ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক যথাক্রমে হুমায়ুন কবির, এসএম মান্নান কচি প্রমুখ। আলোচনা সভাটি যৌথভাবে সঞ্চালনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক আব্দুস সোবহান গোলাপ এবং উপ-প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক আব্দুস আউয়াল শামীম।