রনির ঝড়ের পর তাসকিনের আগুনে পুড়ল আয়ারল্যান্ড

বাংলাদেশ-আয়ারল্যান্ড টি২০ সিরিজ

প্রকাশ | ২৮ মার্চ ২০২৩, ০০:০০

ক্রীড়া প্রতিবেদক
চট্টগ্রামে টি২০ সিরিজের প্রথম ম্যাচে সোমবার আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে উইকেট নেওয়ার পর টাইগার পেসার তাসকিন আহমেদের উচ্ছ্বাস -ওয়েবসাইট
ঘরের মাঠে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টি২০ ম্যাচে ক্যারিয়ার সেরা বোলিং করেছেন টাইগার পেসার তাসকিন আহমেদ। তার বিধ্বংসী বোলিংয়ে বৃষ্টি আইনে আইরিশদের ২২ রানে হারিয়েছে সাকিব বাহিনী। তার আগে রনি তালুকদারের হাফ সেঞ্চুরিতে বড় সংগ্রহ পায় স্বাগতিক বাংলাদেশ। রনি ৩৮ বলে ৬৭ রান করেন। ১৬ রানে ৪ উইকেট নিয়ে ক্যারিয়ার সেরা বোলিং করেন তাসকিন। এই জয়ে তিন ম্যাচ সিরিজে ১-০ তে এগিয়ে গেল লাল সবুজের প্রতিনিধিরা। একই ভেনু্যতে সিরিজের দ্বিতীয় টি২০ ম্যাচ আগামী ২৯ মার্চ। এ দিন আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে টি২০ খেলতে নেমেই একটি রেকর্ড গড়েছে বাংলাদেশ। এই ম্যাচ দিয়ে আন্তর্জাতিক টি২০তে ঘরের মাটিতে ম্যাচ খেলার সেঞ্চুরি করেছে টাইগাররা। আন্তর্জাতিক টি২০ ম্যাচ শুরু হয় ২০০৬ সাল থেকে। শুরু থেকেই বাংলাদেশ দল ক্রিকেটের ছোট এই ফরম্যাট খেলে আসছে। তবে কখনো দাপটের সঙ্গে নিজেদের মেলে ধরতে পারেনি। তবে ক্রিকেটের মারকাটারি এই ফরম্যাটে বাংলাদেশ খেলে ফেলেছে ১৪৮টি ম্যাচ। গতকাল ঘরের মাটিতে ১০০ ম্যাচ পূর্ণ করলেও বিদেশের মাটিতে এখনো হাফ সেঞ্চুরি ছুঁতে পারেনি বাংলাদেশ। মোট ম্যাচের দুই-তৃতীয়াংশই খেলেছে দেশে। আর ঘরের বাইরে খেলেছে মোট ৪৮ ম্যাচ। দলীয় রেকর্ডের দিনে টাইগার ওপেনার লিটন দাস গড়েছেন নিজের রেকর্ড। বাংলাদেশ দলের হয়ে টি২০ ইতিহাসে দ্রম্নততম ১৫০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেছেন তারকা এই ওপেনার। এই ওপেনারের ১৫০০ রান করতে ম্যাচ খেলেছেন ৬৯টি। টি২০ ক্যারিয়ারে অভিষেক হাফ সেঞ্চুরি করেছেন রনি তালুকদার। সেই সুবাদে ম্যাচসেরা পুরস্কারও উঠেছে তার হাতে। গতকাল সোমবার চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে টসে হেরে প্রথমে ব্যাটিংয়ে নেমেছিল বাংলাদেশ। তবে ব্যাট করতে নেমে বৃষ্টির কারণে চার বল আগেই থেমে যায় বাংলাদেশের ইনিংস। যার কারণে ১৯.২ ওভারে ৫ উইকেটে ২০৭ রান সংগ্রহ করে সাকিব বাহিনী। বৃষ্টি থামার পর ডার্ক লুইস পদ্ধতিতে আইরিশদের সামনে লক্ষ্য দাঁড়ায় ৮ ওভারে ১০৪ রান। সেই লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুটা দারুণ করেছিল সফরকারীরা। তবে তাসকিনের ক্যারিয়ার সেরা বোলিং ফিগারে (৪/১৬) নির্ধারিত সময়ে ৮১ রানেই থেমে যায় আইরিশদের ইনিংস। ফলে ২২ রানের শ্বাসরুদ্ধকর জয় পায় স্বাগতিকরা। আন্তর্জাতিক টি২০ ক্রিকেটে ৫০তম ম্যাচ খেলার মাইলফলক স্পর্শ করলেন বাংলাদেশের পেসার তাসকিন আহমেদ। সিরিজের প্রথম ম্যাচে খেলতে নেমেই দেশের দশম ক্রিকেটার হিসেবে টি২০তে ৫০ ম্যাচ খেলার মাইলফলক স্পর্শ করেন তাসকিন। ২০১৪ সালের এপ্রিলে মিরপুরে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে অভিষেক হয় তাসকিনের। এ ম্যাচের আগে টি২০তে তাসকিনের পরিসংখ্যান ৪৯ খেলায় ৪০ উইকেট ও ১১৫ রান। তাসকিনের আগে বাংলাদেশিদের মধ্যে ৫০ বা তার বেশি ম্যাচ খেলেছেন মাহমুদউলস্নাহ রিয়াদ (১২১টি), সাকিব আল হাসান (১১২টি), মুশফিকুর রহিম (১০২টি), মুস্তাফিজুর রহমান (৮১টি), তামিম ইকবাল (৭৪টি), সৌম্য সরকার (৭২টি), লিটন দাস (৬৮টি), আফিফ হোসেন (৬২টি), মাশরাফি বিন মর্তুজা (৫৪টি)। জয়ের জন্য ১০৪ রান তাড়া করতে নেমে নাসুম আহমেদের করা প্রথম ওভারে ১৮ রান তুলে নেয় আয়ারল্যান্ড। আইরিশ দলের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক পল স্টার্লিং প্রথম ৪ বলের মধ্যে তিনটি বলকেই সীমানা ছাড়া করেন, একটি মারেন আরেক ওপেনার রস এডাইয়ার। দ্বিতীয় ওভারে মুস্তাফিজুর রহমানের ওভার থেকে ১৪ রান নেন আইরিশরা। যার মধ্যে দু'টি বাউন্ডারি মারেন এডাইয়ার, আরেকটি বাউন্ডারি আসে লেগ বিফোরের সুবাদে। তাতে দুই ওভার শেষে বিনা উইকেটে ৩২ রান তুলে ফেলেছিল সফরকারীরা। তবে বোলিংয়ে এসেই আইরিশদের চেপে ধরেন তরুণ পেসার হাসান মাহমুদ। ডানহাতি এই মিডিয়াম পেসার বুদ্ধিদ্বীপ্ত বোলিংয়ে নিজের করা প্রথম তিন বল ডট দেন। এরপর চতুর্থ বলে এডাইয়ারকে ক্লিন বোল্ড করেন তিনি। ওই ওভারে হাসান দেন মাত্র ৫ রান। চতুর্থ ওভারে তাসকিন বোলিংয়ে এসেই আইরিশদের ব্যাটিং লাইনআপ লন্ডভন্ড করে দেন। ডানহাতি এই গতি তারকা ৭ রানের বিনিময়ে ৩ উইকেট তুলে নিয়ে বাংলাদেশকে ম্যাচে ফেরান। অধিনায়ক স্টারলিংসহ দুই ব্যাটারকে বোল্ড, একজনকে ক্যাচ বানান ডানহাতি এই পেসার। পঞ্চম ওভারে হাসান মাহমুদকে ৩ বাউন্ডারিসহ ১৬ রান তুলে নিয়ে ফের উত্তেজনা তৈরি করে আয়ারল্যান্ড। কিন্তু ষষ্ঠ ওভারে সাকিব করেন দুর্দান্ত বোলিং। চার ডট দিয়ে ওভারে মাত্র ৫ রান খরচ করেন টাইগার অধিনায়ক। এরপর আর আইরিশরা রান তাড়ায় ছুটতে পারেনি। ফলে ৫ উইকেটে ৮১ রানেই থামতে হয় তাদের। তাসকিন ২ ওভারে ১৬ রান খরচায় একাই নেন ৪টি উইকেট। আরেকটি শিকার হাসানের। এর আগে টস হেরে প্রথমে ব্যাটিংয়ে নামে স্বাগতিকরা। প্রথম দুই ওভারে জোড়া ছক্কা হাঁকিয়ে আগ্রাসী শুরু করেন টাইগার দুই ওপেনার লিটন ও রনি। পাওয়ার পেস্নতে ৮১ রান তুলেন তারা। যা বাংলাদেশের হয়ে প্রথম ৬ ওভারে সর্বোচ্চ সংগ্রহ। তবে দলীয় ৯১ রানের মাথায় অতি আত্মবিশ্বাসী লিটন থেমে গেছেন ব্যক্তিগত মাইলফলকের একটু আগেই। ক্রেইগ ইয়ংয়ের করা ইনিংসের অষ্টম ওভারের প্রথম বলে পল স্টার্লিংয়ের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন লিটন। ৪টি বাউন্ডারির সঙ্গে ৩টি ছক্কার মার মারেন তিনি। এরপর আক্রমণে যাওয়ার লক্ষ্যে ঝোড়ো ব্যাটিং করতে গিয়ে বিদায় নিয়েছেন নাজমুল হোসেন শান্তও। ১৩ বলে ১৪ রান করে উইকেটে সেট হওয়ার চেষ্টা করছিলেন তিনি। কিন্তু হ্যারি টেক্টরের বলে স্ট্যাম্পিংয়ের ফাঁদে পড়েন শান্ত। ১১৮ রানের মাথায় লিটন আর শান্ত আউট হয়ে গেলেও রনি তালুকদারের বিধ্বংসী ব্যাটিং অব্যাহত রাখেন। এই ব্যাটার মাত্র ২৪ বলেই হাফ সেঞ্চুরি পূরণ করেন। যা তার আন্তর্জাতিক টি২০তে অভিষেক ফিফটি। যদিও শেষ পর্যন্ত ৩৮ বলে ৬৭ রানে আউট হয়ে যান ডানহাতি এই ব্যাটার। তার ঝোড়ো ইনিংসে ৭টি বাউন্ডারির সঙ্গে ছিল ৩টি ছক্কার মার। চার নম্বরে ব্যাট করতে নামা শামীম হোসেন পাটোয়ারী ২০ বলে ২ চার আর ১ ছক্কায় ৩০ রান করে আউট হন। তাওহিদ হৃদয় ৮ বলে এক ছক্কায় করেন ১৩। এরপর সাকিব আল হাসান ১৩ বলে ২০ রানে এবং মেহেদী হাসান মিরাজ ১ বলে ৪ রান করার পরই বৃষ্টি নামে। সংক্ষিপ্ত স্কোর: বাংলাদেশ: ১৯.২ ওভারে ২০৭/৫ (লিটন ৪৭, রনি ৬৭, শান্ত ১৪, শামীম ৩০, হৃদয় ১৩, সাকিব ২০*, মিরাজ ৪*; টেক্টর ১/১৬, অ্যাডায়ার ১/৪৮, হিউম ১/৩৫, ইয়াং ২/৪৫, ডেল্যানি ০/২১, হোয়াইট ০/৩৭)। আয়ারল্যান্ড: (লক্ষ্য ৮ ওভারে ১০৪) ৮ ওভারে ৮১/৫ (স্টার্লিং ১৭, রস অ্যাডায়ার ১৩, টাকার ১, টেক্টর ১৯, ডকরেল ০, ডেল্যানি ২১*, ক্যাম্পার ১*; নাসুম ০/১৮, মুস্তাফিজ ০/১৬, হাসান ১/২০, তাসকিন ৪/১৬, সাকিব ০/৫)। ফল: ডিএলএস পদ্ধতিতে বাংলাদেশ ২২ রানে জয়ী। সিরিজ: ৩ ম্যাচ সিরিজে বাংলাদেশ ১-০তে এগিয়ে। ম্যাচসেরা: রনি তালুকদার।