মুক্তিপণ না পেয়েই ইমতিয়াজকে হত্যা
তিন জেলা থেকে গ্রেপ্তার ৩
প্রকাশ | ২৮ মার্চ ২০২৩, ০০:০০
যাযাদি রিপোর্ট
অবশেষে ইন্টেরিয়র ডিজাইনার ইমতিয়াজ মোহাম্মদ ভুঁইয়া হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। ইমতিয়াজের ক্ষত-বিক্ষত লাশ অজ্ঞাত হিসেবে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলামের মাধ্যমে দাফন হয়েছিল। পরে আদালতের নির্দেশে লাশ তোলার পর পরিচয় শনাক্ত হয়। ইমতিয়াজকে প্রলোভনে ফেলে জিম্মি করেছিল গ্রেপ্তাররা। মুক্তিপণের টাকা না পেয়ে তাকে হত্যা করে লাশ গুম করার চেষ্টা করেছিল।
ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) ডিআইজি মোহাম্মদ হারুন-অর-রশীদ এমন তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, চলতি বছরের ৭ মার্চ ইমতিয়াজ দুপুর সোয়া ১টার দিকে ঢাকার কলাবাগান থানাধীন ক্রিসেন্ট রোড থেকে কাজের উদ্দেশে বেরিয়ে নিখোঁজ হন। তিনি তেজগাঁও থানাধীন ডমিসাইল এলাকায় নিজের ফ্ল্যাটে সপরিবারে বসবাস করতেন। নিখোঁজের পরদিন তার স্ত্রী ফাহমিদা আক্তার কলাবাগান থানায় একটি জিডি করেন। ৯ মার্চ থেকে ডিবির তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার গোলাম সবুরের সার্বিক তত্ত্বাবধায়নে তদন্ত শুরু হয়।
ডিবি প্রধান বলেন, তদন্তের এক পর্যায়ে জানা যায় নিখোঁজের পরদিনই মুন্সীগঞ্জ জেলার সিরাজদিখান থানাধীন চিত্রকোট ইউনিয়নের কামারকান্দা গ্রামের নবাবগঞ্জ হাইওয়ের পাশের একটি ঝোঁপ থেকে অজ্ঞাত
এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। পরিচয় না পাওয়া যাওয়ায় যাবতীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ৯ মার্চ লাশটি আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামের কাছে হস্তান্তর করে। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটি যথারীতি লাশটির
দাফন করে। দাফনের ১০ দিন পর গণমাধ্যমে নিখোঁজ ইমতিয়াজ খুন হয়েছেন বলে প্রকাশ হয়। যা ইমতিয়াজের পরিবার পুলিশের মাধ্যমে জানতে পারে।
পরে আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে লাশ তোলার পর নিহত ব্যক্তি ইমতিয়াজ বলে তার পরিবার শনাক্ত করে। নিহত ইমতিয়াজ তেজগাঁও থানা এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ হোসেন ভূঁইয়ার ছেলে। নিহতের এক ছেলে, দুই মেয়ে ও এক স্ত্রী আছে। ইমতিয়াজ বিভিন্ন বাসাবাড়িতে এবং অফিসের ইন্টেরিয়র ডিজাইনের কাজ করতেন।
ডিআইজি মোহাম্মদ হারুন-অর-রশীদ বলছেন, ইমতিয়াজ হত্যায় জড়িত বেশ কয়েকজনকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়। তারই ধারাবাহিকতায় ২৬ মার্চ মধ্যরাতে ঢাকাসহ আশপাশের জেলায় অভিযান চালিয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার করা হয় তিনজনকে। তারা হলেন, মিলস্নাত হোসেন মুন্না (১৯), আনোয়ার হোসেন (৩৮) ও তৃতীয় লিঙ্গের এহসান ওরফে মেঘ (২৩)।
ডিবিপ্রধান বলছেন, গ্রেপ্তাররা একটি সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্র। তারা সমকামী এবং হিজড়া। তারা গ্রিনডার নামক একটি 'গে' (সমকামী) চ্যাটিং অ্যাপসের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তিদের টার্গেট করত। টার্গেটকৃত ব্যক্তি সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য জেনে নিত। যে ব্যক্তি যে কাজ করত। তাকে সেই কাজের অফার করত। কাজের জন্য টার্গেটকৃত ব্যক্তিকে নির্দিষ্ট জায়গায় যেতে বলত।
এমন কাজের প্রলোভনে ফেলে ইমতিয়াজকে গ্রেপ্তাররা কলাবাগানের ক্রিসেন্ট রোডে আরাফাতের বাড়িতে যেতে বলে। ইমতিয়াজ সেখানে যান। এরপর তার হাত পা বেঁধে তাকে আটকে ফেলে। এরপর প্রথমে তার কাছে এবং পরে তার স্বজনদের কাছে মোটা অঙ্কের টাকা মুক্তিপণ হিসেবে দাবি করে। টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় মূল পরিকল্পনাকারী আলিফের সহযোগী আরাফাত, মেঘ, মুন্না ও আনোয়ার তাকে বেধড়ক মারধর করে। মারধরের এক পর্যায়ে ইমতিয়াজ মারা যান।
ডিবিপ্রধান বলেন, হত্যার পর ইমতিয়াজের লাশ মেঘের ব্যক্তিগত প্রাইভেটকার দিয়ে নবাবগঞ্জ হাইওয়ের পাশে ওই ঝোঁপে ফেলে দেয় হত্যাকারীরা। এরপর তারা আলিফকে ঢাকার বাসাব, আনোয়ারকে গ্রিন রোড নামিয়ে দেয়। আরাফাত, মেঘ, মুন্না প্রথমে নারায়ণগঞ্জ পরে চাঁদপুর, মুন্সীগঞ্জ ও কুমিলস্না হয়ে ব্রাক্ষণবাড়িয়ার আখাউড়া সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালিয়ে যায়। কিছুদিন ভারতে থাকার পর আবার তারা দেশে ফেরে। এরপর গ্রেপ্তার করা হয় তিনজনকে।