নিউ ইয়র্কের একটি রাস্তার নাম এখন 'বাংলাদেশ স্ট্রিট'

প্রকাশ | ২৮ মার্চ ২০২৩, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
বাংলাদেশের ৫৩তম স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে বাংলাদেশি অধু্যষিত জ্যাকসন হাইটসের একটি রাস্তা 'বাংলাদেশ স্ট্রিট' নামে নামফলক উন্মোচন করা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে নিউ ইয়র্কের প্রবাসী বাংলাদেশিদের স্বপ্ন পূরণ হলো। স্থানীয় সময় রোববার দুপুর ২টায় বাংলাদেশ স্ট্রিটের নামফলক উন্মোচন করেন জ্যাকসন হাইটস ও এলমহার্স্ট এলাকার নবনির্বাচিত সিটি কাউন্সিলম্যান উপ-মহাদেশীয় বংশোদ্ভূত শেখর কৃষ্ণান। এ সময় জ্যাকসন হাইটস বাংলাদেশি বিজনেস অ্যাসোসিয়েশনের (জেবিবিএ) সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তা, বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। যথাযথ আমন্ত্রণ না পাওয়ায় নিউ ইয়র্কের বাংলাদেশ দূতাবাসের কোনো সরকারি কর্মকর্তা সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। এ খবর জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম বাংলা প্রেস। জ্যাকসন হাইটসের একটি রাস্তা 'বাংলাদেশ স্ট্রিট' নামে নামকরণের জন্য প্রায় এক বছর ধরে জেবিবিএ সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তারা নানা তৎপরতা চালিয়ে আসছেন। তবে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তাদের কাউকেই কোনো রকম বক্তব্য দিতে না দেওয়ায় প্রবাসীদের মাঝে নানা ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। শুধু তাই নয়, সেখানে উপস্থিত সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক নেতারা উপস্থিত থাকলেও তাদেরও কথা বলার সুযোগ দেননি কাউন্সিলম্যান শেখর কৃষ্ণান। এ ঘটনায় হতবাক হয়েছেন প্রবাসীরা। এমনকি জ্যাকসন হাইটসে বসবাস করেন না- এমন এক ব্যক্তি শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত মিলন রহমানকে দিয়ে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করা হয়। এতে করে উপস্থিত প্রবাসীদের মাঝে নানা ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। বাংলাদেশ স্ট্রিটের নামফলক উন্মোচন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন- নিউ ইয়র্কের কংগ্রেসওমেন গ্রেস মেং, অ্যাসেম্বলিওম্যান ক্যাটালিনা ক্রুজ, স্টিভেন রাঘাব, কাউন্সিল মেম্বার জেসিকা গঞ্জালেজ-রোজাস, অ্যাসেম্বলিম্যান স্টিভেন রাগা, কাউন্সিল মেম্বার লিন্ডা লি, জেবিবিএর বর্তমান সভাপতি হারুন ভূঁইয়া ও সাধারণ সম্পাদক ফাহাদ সোলায়মান, অপর জেবিবিএর সভাপতি গিয়াস আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক তারেক হাসান খানসহ শত শত বাংলাদেশি। উলেস্নখ্য, নিউ ইয়র্ক প্রবাসী বাংলাদেশিদের দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৬ ফেব্রম্নয়ারি কাউন্সিলম্যানদের সাধারণ সভায় 'বাংলাদেশ স্ট্রিট' নামকরণের সিদ্ধান্ত গ্রহণের উদ্যোগ নিলে পরে ৪৭-০ ভোটে তা পাস হয়। সেই থেকে জ্যাকসন হাইটসের ৩৭ এভিনিউয়ের ৭৩ স্ট্রিটের নামকরণ করা হয় 'বাংলাদেশ স্ট্রিট'। বিলটির সিদ্ধান্ত নম্বর হলো- আইএনটি ৮৯৭। নিউ ইয়র্কের বাংলাদেশি অধু্যষিত জ্যাকসন হাইটসে 'বাংলাদেশ' নামে সড়ক করার জোর তৎপরতা চালান জেবিবিএর সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তারা। জেবিবিএর বর্তমান সভাপতি হারুন ভূঁইয়া ও সাধারণ সম্পাদক ফাহাদ সোলায়মান নিউ ইয়র্ক সিটির কর্মকর্তাদের কাছে প্রস্তাব পাঠান। তাদের দেওয়া তাগিদের ফলেই প্রস্তাবটি পাস করানোর চেষ্টা চালান সংশ্লিষ্ট কাউন্সিলম্যানরা। কাউন্সিলম্যান শেকার কৃষ্ণান, মেয়র এরিক এডামস, বরো প্রেসিডেন্ট ডনোভান রিচার্ডস গত নির্বাচনের আগেই প্রতিশ্রম্নতি দিয়েছিলেন, তারা জয়ী হলে এই নামকরণ বাস্তবায়ন করবেন। জানা যায়, গত ১৬ ফেব্রম্নয়ারি নিউ ইয়র্ক সিটির ১২৯টি স্ট্রিটের পুনর্নামকরণের বিলটি সভায় আলোচনায় আসে। এক এক করে ১২৯টি স্ট্রিটের নতুন নামকরণের প্রস্তাব শোনানো হয়। পাঁচ বরোতেই নতুন নামকরণ করা হয়েছে বিভিন্ন স্ট্রিটের বা এভিনিউয়ের। এসব নামকরণ করা হয়েছে বিভিন্ন কমিউনিটির নিজ দেশের বা বিশিষ্ট ব্যক্তির নামে। নিউ ইয়র্ক সিটিতে বাংলাদেশি প্রবাসীদের সবচেয়ে বড় ব্যবসাকেন্দ্র ও সাংস্কৃতিক প্রাণকেন্দ্র জ্যাকসন হাইটসের ৭৩ স্ট্রিটের এক বস্নকের নামকরণ করা হলো 'বাংলাদেশ স্ট্রিট'। এ ছাড়াও বাংলাদেশ কমিউনিটির বিশিষ্ট একটিভিস্ট, শিক্ষক ও লেখক লিজি রহমানের ছেলের নামে এলমহার্স্টের কুইন্স বুলোভার্ডে ৫৫ রোডের কর্নারে নামকরণ করা হলো আসিফ রহমান ওয়ে। ২০০৮ সালে ২৮ ফেব্রম্নয়ারি সাইকেল চালিয়ে কাজ থেকে বাড়ি ফেরার পথে কুইন্স বুলোভার্ডে ৫৫ রোডের কাছে ট্রাকের ধাক্কায় ঘটনাস্থলেই মৃতু্যবরণ করেন আসিফ রহমান। এই রাস্তাটিরও নামকরণ করা হলো কাউন্সিলম্যান শেখর কৃষ্ণানের উদ্যোগেই। এদিকে শুনানিতে যেমন এই ১২৯টি রাস্তার তালিকায় কুইন্স বরোতে 'লিটল বাংলাদেশ ওয়ে' নামে একটি রাস্তার নাম প্রস্তাব করা হয়েছিল। পাস হওয়া বিলেও সেই নামটি রয়ে গেছে। উলেস্নখ্য, কাউন্সিলম্যান শেখর কৃষ্ণান নিউ ইয়র্ক সিটি কাউন্সিলের পার্ক কমিটির চেয়ার। আর স্ট্রিটের পুনর্নামকরণ করার দায়িত্বটিও পার্ক কমিটির। সে কারণে নির্বাচিত হওয়ার ৬ মাস পর থেকেই তিনি ৭৩ স্ট্রিটের নাম বাংলাদেশ স্ট্রিট এবং ৫৫ রোডের নাম আসিফ রহমান ওয়ে রাখার লক্ষ্যে প্রস্তাবনা তৈরি শুরু করেন। এ জন্য কেন ৭৩ স্ট্রিটের নাম 'বাংলাদেশ স্ট্রিট' করতে হবে তার পক্ষে যুক্তি দাঁড় করান। অবশেষে পার্ক কমিটি তার প্রস্তাবনা মেনে নেয় এবং শুনানিতে তোলে। ৩১ জানুয়ারি শুনানিতে তা গৃহীত হলে ১৬ ফেব্রম্নয়ারি তা ফুল কাউন্সিলে ৪৭-০ ভোটে পাস হয়। এ সময় কাউন্সিলম্যান শেখর কৃষ্ণান সিটি কাউন্সিল চেম্বারে ৭৩ স্ট্রিটকে বাংলাদেশ স্ট্রিট ও ৫৫ রোডকে আসিফ রহমান ওয়ে ঘোষণার পক্ষে চমৎকার দুটি বক্তব্য রাখেন।