মাহে রমজানের দ্বিতীয় দশক 'মাগফিরাত' শেষ হয়ে চলছে নাজাতের দশক। এ সময় মুমিন বান্দারা জাহান্নামের আগুন থেকে নিষ্কৃতি লাভের আশায় আলস্নাহর দরবারে আকুল আবেদন জানাচ্ছেন। পাপী-তাপী বান্দারা তাদের বিগত জীবনের ভুলত্রম্নটি ক্ষমার জন্য রহমানুর রাহিমের কাছে কেঁদে কেটে বুক ভাসাচ্ছেন। পবিত্র এ মাসে কারো দোয়া আলস্নাহ রাব্বুল আল আমিন কবুল করে নিলে ওই মুমিন বান্দার জন্য জাহান্নামের আগুন হারাম হয়ে যাবে।
জাহান্নামের আাঁবের ভয়াবহতা, লেলিহান আগুনের তীব্রতা ও প্রখরতা অত্যন্ত কঠিন। এজন্য রাসূলুলস্নাহ (সা.) বলেছেন, 'তোমরা একটি খেজুর দান করে হলেও জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচ। যদি তাও না থাকে, তাহ'লে ভালো কথার মাধ্যমে হলেও (জাহান্নাম থেকে বাঁচ)।
এ প্রসঙ্গে মহান আলস্নাহ বলেন, 'হে ইমানদারগণ! তোমরা আলস্নাহ ও তার রাসূলের আনুগত্য কর, অতঃপর (তাদের আনুগত্য না করে) তোমাদের আমলসমূহকে বিনষ্ট কর না' (মুহম্মদ ৪৭/৩৩)। সুতরাং জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা পেতে কোরআন ও সহিহ হাদিস অনুযায়ী আমল করতে হবে। আর বিদ'আতকে সর্বদা পরিহার করতে হবে।
জাহান্নাম থেকে পরিত্রাণের মাধ্যমে জান্নাতের অধিবাসী হতে হলে ফরজ ইবাদত অবশ্যই যথাযথভাবে পালন করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে সালাত, সিয়াম, জাকাত ও হজ পালনের ক্ষেত্রে একনিষ্ঠ হতে হবে। সালাত আদায় সম্পর্কে মহান আলস্নাহ বলেন, 'অবশ্যই মুমিনগণ সফলকাম হয়েছে। যারা তাদের সালাত বিনয়-নম্রতা সহকারে আদায় করে' (মু'মিনূন ২৩/১-২)। অন্যত্র তিনি আরও বলেছেন, '(তারাও সফলকাম) যারা তাদের সালাতসমূহের হেফাজত করে' (মুমিনূন ২৩/৯)। সিয়াম সম্পর্কে রাসূলুলস্নাহ (সা.) বলেছেন, 'সিয়াম আলস্নাহর আজাব হতে পরিত্রাণের ঢালস্বরূপ, তোমাদের কারও যুদ্ধে ব্যবহৃত ঢালের ন্যায়'।
রাসূলুলস্নাহ (সা.) বলেন, 'তুমি আলস্নাহর ইবাদত এমনভাবে করবে যেন (মনে করবে) তুমি তাকে দেখছ। আর যদি তুমি তাকে দেখতে না পাও, তাহ'লে (অন্তত এতটুকু বিশ্বাস রাখবে যে) নিশ্চয়ই তিনি তোমাকে দেখছেন'।
হাদিসে এসেছে, জাহান্নাম থেকে পরিত্রাণের উপায় মূলত দুটি। প্রথমত, ইমান আনা ও সৎকর্ম সম্পাদন করা। দ্বিতীয়ত, জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সব সময় আলস্নাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করা।
জাহান্নামের আগুনে দগ্ধ হওয়ার মূল কারণ হলো কুফুরি। সুতরাং তা থেকে বেঁচে থাকাই জাহান্নাম থেকে মুক্তির প্রধান উপায়। সেক্ষেত্রে ইমানের ছয়টি রুকনের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা অত্যাবশ্যক। এ প্রসঙ্গে আলস্নাহ তা'আলার বাণী, 'যারা বলে, হে আমাদের রব! নিশ্চয়ই আমরা ইমান আনলাম। অতএব আমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করুন এবং আমাদের জাহান্নামের আজাব থেকে রক্ষা করুন' (আলে-ইমরান ২/১৬)।
অন্যত্র তিনি আরও বলেছেন, 'হে আমাদের রব! তুমি এসব অনর্থক সৃষ্টি করনি। তুমি পবিত্র। সুতরাং তুমি আমাদের জাহান্নামের আজাব থেকে রক্ষা কর। হে আমাদের রব! নিশ্চয়ই তুমি যাকে আগুনে প্রবেশ করাবে, অবশ্যই তুমি তাকে লাঞ্ছিত করবে। আর জালিমদের জন্য কোনো সাহায্যকারী নেই। হে আমাদের রব! নিশ্চয়ই আমরা একজন আহ্বানকারীকে ইমানের দিকে আহ্বান করতে শুনেছি যে, 'তোমরা তোমাদের রবের প্রতি ইমান আন'। তাই আমরা ইমান এনেছি। হে আমাদের রব! আমাদের গুনাহসমূহ ক্ষমা কর, বিদূরিত কর আমাদের ত্রম্নটি-বিচু্যতি এবং আমাদের মৃতু্য দাও নেককারদের সাথে। হে আমাদের রব! আর তুমি আমাদের তাই প্রদান কর যার ওয়াদা তুমি আমাদের দিয়েছ তোমার রাসূলগণের মাধ্যমে। আর কিয়ামতের দিনে তুমি আমাদের লাঞ্ছিত করবে না। নিশ্চয়ই তুমি অঙ্গীকার ভঙ্গ কর না' (আলে ইমরান ২/১৯১-১৯৪)।
এ ছাড়া অসংখ্য সৎকর্ম রয়েছে। যা সঠিক ও বিশুদ্ধভাবে সম্পাদনের মাধ্যমে জাহান্নাম থেকে পরিত্রাণ লাভ করা যায়। ইমানে মুফাছ্ছাল ও ইমানে মুজমালসহ পবিত্র কোরআন ও সহিহ হাদিসে বর্ণিত সব বিষয়ের ওপর দৃঢ় ইমান ও বিশুদ্ধ আকিদা পোষণ করতে হবে। যা জাহান্নাম থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার অন্যতম উপায়।
তবে নিয়ত পরিশুদ্ধ না হ'লে জীবনের উপার্জিত সব আমল বা ইবাদতই বরবাদ হয়ে যাবে। আর এ কথা স্বতঃসিদ্ধ যে, বিশ্ব মানবতার প্রত্যেক কাজ তার অন্তরে পরিকল্পিত চিন্তা-চেতনার বহিঃপ্রকাশ মাত্র। তাই মানুষের সব কাজ তার নিয়তের ওপর নির্ভরশীল। সুতরাং একনিষ্ঠচিত্তে ও নিবিষ্ট মনে কেবলমাত্র মহান আলস্নাহ তা'আলার সন্তুষ্টি ও রাসূলুলস্নাহ (সাঃ)-এর অনুসরণই হবে বিশুদ্ধ নিয়তের মৌলিক দাবি।
অন্যদিকে কোনো শিরককারীকে খালেছ তওবা ব্যতীত আলাহ ক্ষমা করেন না। এর মাধ্যমে জান্নাত হারাম হয়ে যায় এবং চিরস্থায়ী জাহান্নামের আগুনে দগ্ধীভূত হতে হয়। সুতরাং শিরক থেকে বেঁচে থাকতে হবে। এ মর্মে মহান আলস্নাহ বলেন, নিশ্চয়ই যে ব্যক্তি আলস্নাহর সাথে শরিক স্থাপন করবে তার ওপর জান্নাত হারাম এবং জাহান্নাম হবে তার চূড়ান্ত ঠিকানা। আর সেদিন জালেমদের কোনো সাহায্যকারী থাকবে না' (মায়েদা ৫/৭২)।
এ ছাড়া বিদ'আত আমল বিধ্বংসী এমন একটি অস্ত্র যার মাধ্যমে জাহান্নামের পথ সুগম হয়। মানুষ দ্রম্নত জান্নাতের রাস্তা থেকে দূরে সরে যায়। কিয়ামতের কঠিন ময়দানে আলস্নাহর রাসূল (সাঃ)-এর শাফা'আত থেকে বঞ্চিত হয়। সুতরাং বিদ'আত পরিহার করতে হবে এবং সুন্নাতের একনিষ্ঠ অনুসারী হতে হবে। রাসূলুলস্নাহ (সাঃ) বলেন, 'অতঃপর সকল নতুন আবিষ্কৃত বস্তুই নিকৃষ্ট এবং প্রত্যেক নতুন সৃষ্টিই বিদ'আত এবং প্রত্যেক বিদ'আতই ভ্রষ্টতা। আর প্রত্যেক ভ্রষ্টতাই জাহান্নামী'।