অমর একুশে

পতাকা দিবস ঘিরে আন্দোলন বেগবান

প্রকাশ | ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:০০ | আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১১:১০

যাযাদি রিপোটর্

ভাষা প্রতিষ্ঠার দাবিতে ১৯৫২ সালের ১১ ফেব্রæয়ারি পতাকা দিবস পালন করা করা হয়। ১৩ ফেব্রæয়ারিও একই কমর্সূচির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এর আগে ৬ ফেব্রæয়ারি মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সবর্দলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। রাজধানীসহ আশপাশের এলাকাগুলো তখন ভাষার দাবিতে প্রতিবাদমুখর। দেশজুড়ে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ দাবিতে সেøাগান তোলে। সবর্ত্রই তখন বাংলা ভাষা প্রতিষ্ঠার আওয়াজ। উল্টোদিকে আন্দোলনকারীদের ঠেকাতে সরকারও নানা কূটকৌশলের আশ্রয় নেয়। কিন্তু কোনো কিছুকে তোয়াক্কা করে না ভাষার মযার্দা রক্ষার দাবিতে আন্দোলনরতরা। আন্দোলনকারীদের পিছু হটাতে না পেরে ক্ষোভে দমনপীড়নের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় পাকিস্তানি সরকার। চলে গ্রেপ্তার ও নিযার্তন। কিন্তু অদম্য বাঙালি সব কিছু তুচ্ছ করে আন্দোলন চালিয়ে যেতে থাকে। ১১ ফেব্রæয়ারি পতাকা দিবসে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ঢাকার নবাবপুর রোডে ছাত্র-জনতার বিশাল মিছিল বের হয়। মিছিল আর সেøাগানে উত্তাল রাজধানী। নবাবপুর রোড ও আশপাশের সব এলাকায় জনতার ঢল নামে। সবার এক আওয়াজ হয় বিজয়, নয় মৃত্যু। মায়ের ভাষার মযার্দা রক্ষায় জীবন দিতে রাজি তখন বাঙালিরা। নারী-পুরুষ, কৃষক-শ্রমিক মেহনতী মানুষ থেকে শুরু করে কবি, লেখক, বুদ্ধিজীবী, শিল্পী, সংস্কৃতিকমীর্সহ সব শ্রেণী-পেশার মানুষ তখন প্রতিবাদে সোচ্চার। প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে প্রতিরোধের। নারীরাও দলে দলে আন্দোলনে যোগ দিচ্ছেন। ১৯৫২ সালের আজকের দিনে পুরুষের পাশাপাশি নারী কমীর্রা পতাকা দিবস পালন উপলক্ষে ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ লেখা পতাকা বিক্রি করে। পতাকা বিক্রির এই টাকা দিয়ে ভাষা আন্দোলনের জন্য তহবিল গঠন করা হয়। এই টাকার একাংশ দিয়ে বদরুদ্দিন উমরের লেখা ‘আমাদের ভাষার লড়াই’ এবং আনিসুজ্জামানের লেখা ‘রাষ্ট্রভাষা কি এবং কেন?’ পুস্তিকা দুটি বের করা হয়। ২১ ফেব্রæয়ারির হরতাল সফল করতে গণসংযোগের কাজেও ব্যয় হয় এই টাকার একাংশ। অলি আহাদেও লেখা থেকে জানা যায়, ১২ ফেব্রæয়ারি কোনো কমর্সূচি না থাকলেও ১১ থেকে ১৩ ফেব্রæয়ারি টানা তিনদিন ধরেই চলে পতাকা বিক্রি কমর্সূচি। এতে টাকা খুব বেশি সংগ্রহ না হলেও পতাকা দিবসকে সামনে রেখে আরো নতুন কমীর্রা এসে যুক্ত হতে থাকে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে। সে সময় ৫০০ পোস্টার লেখার দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল নাদিরা বেগম ও ডা. সাফিয়াকে। তারা দুজন তাদের বান্ধবী ও অন্য ছাত্রীদের নিয়ে পোস্টার লেখার ব্যবস্থা করেন। ১৭ ফেব্রæয়ারি প্রকাশিত সাপ্তাহিক ‘ইত্তেফাকে’ প্রদেশের বিভিন্নস্থানে সভা, শোভাযাত্রা ও বিক্ষোভ অনুষ্ঠানের সংবাদ দেয়া হয়েছে। এ মাসের প্রথম দু’সপ্তাহের মধ্যে অনুষ্ঠিত এইসব বিক্ষোভের প্রত্যেকটির তারিখের উল্লেখ নেই। বেশকিছু স্থানে স্কুল কতৃর্পক্ষের সঙ্গে বেশ টানাটানি চলে এই ধমর্ঘট পালন নিয়ে। মাদারীপুরে ছাত্রছাত্রীরা ধমর্ঘট ও মিছিল করে। স্থানীয় বালিকা বিদ্যালয় ৪ ফেব্রæয়ারি ‘বিশেষ কারণে’ ধমর্ঘট করতে না পেরে ৫ তারিখে ধমর্ঘট আহŸান করলে কতৃর্পক্ষ ওইদিন ছুটি ঘোষণা করে। কিন্তু প্রতিবাদী ছাত্রীরা পরদিন ৬ ফেব্রæয়ারি সাফল্যের সঙ্গে ধমর্ঘট পালন করে।