দেশে ফেরা ছেলের কাছে যাওয়া হলো না তাদের

প্রকাশ | ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
আগুনে ক্ষতিগস্ত মাইক্রোবাস
ছেলে দুবাই থেকে দেশে ফিরেছেন। তাকে চট্টগ্রাম থেকে কুমিল্লায় গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসতে দুই নাতিসহ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মাইক্রোবাস ভাড়া করে যাচ্ছিলেন স্বামী-স্ত্রী। পথে কাভাডর্ভ্যানের সঙ্গে তাদের বহনকারী মাইক্রোবাস আটকে গিয়ে আগুন ধরে গেলে পুড়ে মারা যান তারা। পুড়ে মারা গেছেন চালকও। এ ঘটনায় দগ্ধ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন দুই শিশু নাতি। মঙ্গলবার সকাল সাতটার দিকে চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার নিজামপুর এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে এ দুঘর্টনা ঘটে। নিহত স্বামী-স্ত্রী হলেন আবদুর রহমান (৬৫) ও কুলসুম বেগম (৫৫)। চালকের পরিচয় পাওয়া যায়নি। দগ্ধ নাতিরা প্রবাসী ছেলের সন্তান। তারা হলো রনি (১২) ও রাশেদ (১০)। মাইক্রোবাসের আরও দুজন যাত্রী অক্ষত রয়েছেন। তারা হলো নিহত আবদুর রহমানের ছেলে আবুল কালাম ও প্রবাসী ছেলের শ্যালক মো. হাসান। দুঘর্টনার সত্যতা নিশ্চিত করেন মিরসরাই ফায়ার সাভিের্সর স্টেশন কমর্কতার্ রবিউল আজম। তিনি জানান, ঘটনার পর কাভাডর্ভ্যান নিয়ে চালক পালিয়ে গেছেন। পুলিশ, ফায়ার সাভির্স ও প্রত্যক্ষদশীর্ সূত্রে জানা গেছে, কাভাডর্ভ্যান ও মাইক্রোবাস দুটোই চট্টগ্রাম যাচ্ছিল। পথে নিজামপুর এলাকায় কাভাডর্ভ্যানের পেছনে ছিল মাইক্রোবাসটি। একপযাের্য় মাইক্রোবাসের সামনের অংশ কাভাডর্ভ্যানের পেছনে আটকে যায়। ওই অবস্থায় কাভাডর্ভ্যানটি প্রায় ২০০ মিটার পযর্ন্ত টেনে নেয় মাইক্রোবাসটিকে। এতে মাইক্রোবাসে আগুন ধরে গেলে ঘটনাস্থলেই চালকসহ তিন যাত্রী পুড়ে মারা যান। দগ্ধ দুই শিশু যাত্রীকে উদ্ধার করে মিরসরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভতির্ করা হয়। ঘটনাস্থলে উদ্ধার অভিযান চালায় মিরসরাই থানার পুলিশ এবং মিরসরাই ও সীতাকুÐ ফায়ার সাভিের্সর কমীর্রা। নিহত আবদুর রহমানের ছেলে আবুল কালাম জানান, তাদের বাড়ি কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলার কমলনগর গ্রামে। গতকাল সোমবার তার ছোট ভাই আবদুল মোমিন দুবাই থেকে চট্টগ্রাম এসে এক আত্মীয়ের বাসায় ওঠেন। ভাইকে আনার জন্য তারা চার হাজার টাকায় একটি মাইক্রোবাস ভাড়া করে আজ ভোরে গ্রামের বাড়ি থেকে রওনা হন। মাইক্রোবাসে তার বাবা, মা, প্রবাসী ভাইয়ের দুই ছেলে, ভাইয়ের শ্যালক ও তিনি ছিলেন। আবুল কালাম অভিযোগ করেন, মাইক্রোবাসের চালক তন্দ্রাচ্ছন্ন ছিলেন। সকালে মিরসরাইয়ের হাদি ফকিরহাট এলাকায় এলে তাদের মাইক্রোবাসটি সামনে ধীরগতিতে চলা কাভাডর্ভ্যানের পেছনে গিয়ে ধাক্কা দিয়ে আটকে যায়। ধাক্কায় মাইক্রোবাসটি এমনভাবে দুমড়েমুচড়ে যায় যে গাড়ির দরজা খোলা যাচ্ছিল না। কাভাডর্ভ্যানটি প্রায় ২০০ মিটার পযর্ন্ত নিজামপুর বাজার এলাকা পযর্ন্ত মাইক্রোবাসকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যায়। ওই সময় মাইক্রোবাসটির চাকা বন্ধ হয়ে যায় এবং রাস্তার সঙ্গে টায়ারের ঘষায় আগুন লেগে যায়। নিজামপুরে এসে কাভাডর্ভ্যানটি ছুটে গেলে চালক তা নিয়ে পালিয়ে যান। আবুল কালাম জানান, তিনি ও প্রবাসী ভাইয়ের শ্যালক চালকের পাশের আসন ও মাঝের আসনে ছিলেন। মাইক্রোবাসের দরজা খোলা যাচ্ছিল না, তারা দুজন কোনো রকমে জানালা দিয়ে লাফিয়ে নামেন। চালকের পা আটকে যাওয়ায় নামতে পারেননি। তার বৃদ্ধ বাবা-মা ও শিশু ভাতিজারাও গাড়ি থেকে নামতে পারেনি। মাঝের আসনে তারা বাবা-মা এবং পেছনের আসনে দুই ভাতিজা ছিল।