অমর একুশে

১৪৪ ধারা ভাঙার পক্ষে জনমত

প্রকাশ | ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি রিপোটর্
২১ ফেব্রæয়ারি ডাকা সাধারণ ধমর্ঘটের পরিপ্রেক্ষিতে ১৮ ফেব্রæয়ারি পাকিস্তান সরকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও সংলগ্ন এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে এবং সব সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধের ঘোষণা দেয়। ১৯ ফেব্রæয়ারি বন্দি মুক্তির দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি ছাত্রসভা আহŸান করা হয়। এতে বক্তৃতা করেন জিল্লুর রহমান, নাদেরা বেগম ও শামসুল হক চৌধুরী। সভায় সব রাজবন্দির মুক্তির দাবি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় রাজবন্দি মুক্তি আন্দোলন কমিটি নামে একটি কমিটিও গঠন করা হয়। ২০ ফেব্রæয়ারি ১৪৪ ধারা জারির পরিপ্রেক্ষিতে সবর্দলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে আবুল হাশিমের সভাপতিত্বে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় উপস্থিত সদস্যরা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করার ব্যাপারে নেতিবাচক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। সভার একটি বড় অংশ ১৪৪ ধারা ভঙ্গের ব্যাপারে মত দিলেও অনেকেই এতে সহিংসতার আশঙ্কায় বিপক্ষে মত দেন। সভাপতিও তাদের বক্তব্য সমথর্ন করেন। তবে সংগ্রাম পরিষদের সিদ্ধান্তে আপত্তি জানান যুবলীগের অলি আহাদ, বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম কমিটির আহŸায়ক আবদুল মতিন ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ ইউনিয়নের ভিপি গোলাম মাওলা। তাদের মত হলো ১৪৪ ধারা অমান্য করে নিধাির্রত কমর্সূচি চালিয়ে যেতে হবে। ১১-৩ ভোটের সংখ্যাগরিষ্ঠতায় জয়ী হলেও ভিন্নমতের গুরুত্ব উপেক্ষা করতে পারেননি বৈঠকের সভাপতি। তাই ঘোষণা হয়, পরদিন সকালে আমতলায় উপস্থিত ছাত্রদের মতামতই চ‚ড়ান্ত বলে গণ্য হবে। তবে সভাপতি সেই সঙ্গে শতর্ জুড়ে দেন, যদি ছাত্রসভার মতামত সংগ্রাম পরিষদের সিদ্ধান্তের বিপক্ষে যায়, তাহলে এই পরিষদ বিলুপ্ত গণ্য হবে। সন্ধ্যায় একই বিষয়ে আরেকটি সভায় সলিমুল্লাহ হলে ফকির শাহাবুদ্দীনের সভাপতিত্বে ১৪৪ ধারা ভঙ্গের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। অন্যদিকে ফজলুল হক মুসলিম হলে অনুষ্ঠিত সভায় নেতৃত্ব দেন আবদুল মোমিন। শাহাবুদ্দিন আহমদের প্রস্তাব অনুযায়ী, রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদকে এই সিদ্ধান্তটি জানিয়ে দেয়ার দায়িত্ব নেন আবদুল মোমিন ও শামসুল আলম। রাজনীতি-সচেতন সাধারণ ছাত্রদের মনোভাব ছিল সম্পূণর্ ভিন্ন। তারা যেকোনো মূল্যে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করার পক্ষে। একই মনোভাব ছিল যুবলীগ ও ছাত্র নেতৃত্বের বাম অংশের। ফজলুল হক হল, ঢাকা হল, মেডিকেল কলেজ এবং জগন্নাথ কলেজের ছাত্রসংগঠনসহ অধিকাংশ ছাত্রাবাসের ইউনিয়ন নেতাদের মনোভাব ছিল নিষেধাজ্ঞা ভাঙার পক্ষে। সেই রাতে ছাত্রাবাসগুলোতে ছাত্রদের চোখে ঘুম ছিল না। গভীর রাত পযর্ন্ত তারা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেছেন। কেউ কেউ পোস্টার-ব্যানার লেখায় ব্যস্ত, কেউ কেউ অন্যান্য ছাত্রাবাসের ছাত্রদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। এসব আলোচনার মূল কথা ছিল একটাইÑ ১৪৪ ধারা অমান্য করার সিদ্ধান্তে নিশ্চিত থেকে নিধাির্রত কমর্সূচি পালন করা। সবোর্পরি রাষ্ট্রভাষার দাবি মেনে নিতে আইনসভার সদস্যদের বাধ্য করা। এই আপসহীন অবস্থানের অন্য একটি তাৎপযর্ আছে। তারা বুঝতে পেরেছিলেন, ১৪৪ ধারা আসলে একটি শেকল। এই শেকল তাদের আন্দোলনকে লাগাম পরিয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্র। এই শেকল ভাঙতে না পারলে সামনে আর কোনো ন্যায়সঙ্গত দাবিতে তারা এগোতে পারবেন না।