অমর একুশে

ভাষাশহীদের সঠিক পরিসংখ্যান মেলেনি

প্রকাশ | ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি রিপোটর্
একুশের ভাষাশহীদের সংখ্যা কত? এ নিয়ে আজও সঠিক পরিসংখ্যান উদ্ঘাটনে কাউকে ব্রত হতে দেখা যায়নি। ভাষা আন্দোলনে জ্ঞাত ভাষাশহীদের সংখ্যা অনেকে ৫ বলে উল্লেখ করেন। শহীদ অহিউল্লাহকে নিয়ে জ্ঞাত ভাষাশহীদের সংখ্যা হবে সম্ভবত ৬। আট বছরের বালক অহিউল্লাহ রাষ্ট্রভাষা বাংলার জন্য বুকের রক্ত ঢেলে দিয়ে শহীদ হন। বিভিন্ন পুস্তকে উল্লিখিত রেফারেন্স অনুযায়ী তিনি ছিলেন ঢাকার নবাবপুর রোডে বসবাসকারী রাজমিস্ত্রি হাবিবুর রহমানের ছেলে। শহীদ হওয়ার সময় তিনি তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। অহিউল্লাহ শহীদ হন ১৯৫২ সালের ২২ ফেব্রæয়ারি নবাবপুর রোডে খোশমহল রেস্টুরেন্টের সামনে। শহীদ হওয়ার সময় তার মুখে একটুকরো কাগজ ছিল। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে এবং ২১ ফেব্রæয়ারির হত্যাকাÐের প্রতিবাদে ২২ ফেব্রæয়ারি ঢাকায় মিছিল বের হয়। মিছিলটি নবাবপুর রোড দিয়ে অতিক্রম করার সময় বালক অহিউল্লাহ কাগজ চিবুতে চিবুতে মিছিলে শরিক হন। এমন সময় তিনি গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান। ২২ ফেব্রæয়ারি দৈনিক আজাদ পত্রিকায় ৪ জন ভাষাশহীদ সালাউদ্দীন, আবদুল জব্বার, আবুল বরকত এবং রফিকউদ্দিনের তালিকা প্রকাশ করে। কিন্তু ওইদিন সালাউদ্দীন নামে কেউ শহীদ হয়নি। রফিকউদ্দিনকে সালাউদ্দীন ভাবা হয়েছিল। তারই সূত্র ধরে বদরুদ্দীন উমর ‘পূবর্ বাংলার ভাষা আন্দোলন ও তৎকালীন রাজনীতি’ গ্রন্থে ২১ ফেব্রæয়ারির শহীদ সংখ্যা নিধার্রণে সালাউদ্দীনের নামসহ তালিকাটি প্রকাশ করেন। সে হিসাবে ২১ ফেব্রæয়ারিতে ভাষাশহীদের সংখ্যা দঁাড়ায় ৩ জন। প্রাপ্ত গ্রন্থটিতে ২২ ফেব্রæয়ারির শহীদের সংখ্যা ২ এবং একজন আহত কিশোরের উল্লেখ করা হয়েছে। তাহলে বদরুদ্দীন উমরের গ্রন্থে ২১-২২ ফেব্রæয়ারিতে ৫ জন শহীদের সন্ধান মিলছে। আহমেদ রফিক ‘একুশের ইতিহাস আমাদের ইতিহাস’ গ্রন্থে ২১ ফেব্রæয়ারি ৩ জন শহীদের নিহত হওয়ার বণর্না দিয়েছেন। তবে তিনি ২২ ফেব্রæয়ারির শহীদের উল্লেখ করেননি। ভাষাশহীদের সংখ্যা সম্পকের্ সবচেয়ে ব্যতিক্রম তথ্য দিয়েছেন গবেষক ও লেখক গোলাম মুরশিদ ‘মুক্তিযুদ্ধ ও তারপর’ গ্রন্থে। তিনি ২১ ফেব্রæয়ারি রফিকউদ্দিন, আবুল বরকত, বছর দশেকের একটি ছেলে, এক রিকশাওয়ালা উল্লেখ করে আবার বলেছেন ‘মোটকথা এদিন রফিক, সালাম, বরকত, জব্বার প্রমুখ বেশ কয়েকজন নিহত হন।’ আবার ২২ ফেব্রæয়ারির ‘আজাদ’ পত্রিকার বরাত দিয়ে বলেন ‘গুলিতে ঘটনাস্থলে চারজন নিহত ও সতেরো জন আহত হয়েছিল। আহতদের মধ্যে পরে হাসপাতালে মারা যান তিনজন।’ ২২ ফেব্রæয়ারির শহীদ সম্পকের্ বলেন, ‘এতে কয়েকজন নিহত হয়েছিল’ বলে শফিউর রহমান ও কিশোর অহিউল্লাহর নাম উল্লেখ করেন। ফলে শেষ পযর্ন্ত তারিখ অনুসারে এবং সবের্মাট ভাষাশহীদের সংখ্যা নিধার্রণে ভ্রান্তিতে ফেলে দেয়। হাসান হাফিজুর রহমান সম্পাদিত ‘একুশে ফেব্রæয়ারি’ সংকলনে অন্তভুর্ক্ত কবির উদ্দিন আহমদ ‘একুশের ইতিহাস’ নিবন্ধে বলেছেনÑ ‘আটজনের মৃত্যুর কথা সন্দেহাতীতভাবে জানা যায়।’ এই সূত্র ধরে এম. আর আখতার মুকুল ৮ জন ভাষাশহীদের একটি তালিকা তৈরি করেছেন। তালিকাটিতে ২১ ফেব্রæয়ারি রফিকউদ্দিন আহমদ, আবুল বরকত, আবদুল জব্বার, আবদুস ছালাম এবং ২২ ফেব্রæয়ারি শফিকুর রহমান, আব্দুল আওয়াল, অহিউল্লাহ ও অজ্ঞাত বালককে অন্তভুর্ক্ত করেছেন।