পঞ্চগড়ে আহমদীয়াদের ওপর হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ

প্রকাশ | ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

পঞ্চগড় প্রতিনিধি
পঞ্চগড়ে আহমদনগর এলাকায় মঙ্গলবার রাতে আহমদীয়া মুসলিম জামাতের বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা হয়
কয়েকটি ধমীর্য় সংগঠন ও তৌহিদী জনতার বিক্ষোভের মুখে আহমদীয়া মুসলিম জামাতের পূবর্ ঘোষিত বাষির্ক সালানা জলসা বন্ধ করে দীয়েছে প্রশাসন। পঞ্চগড় সদর উপজেলার আহমদনগরে ২২-২৪ ফেব্রæয়ারি অনুষ্ঠিতব্য জলসা বন্ধের দাবিতে বিক্ষুব্ধ জনতা জেলা শহর ও আহমদনগরে তাÐব চালিয়েছে। কাদিয়ানি বিরোধী হাজার হাজার মানুষ গত মঙ্গলবার রাত ৯টার পর থেকে ঘণ্টাব্যাপী আহমদনগর এলাকার আহমদীয়া মুসলিম জামাতের লোকজনদের বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালায়। এ সময় তারা ৮টি বাড়ি, ৫টি দোকানে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এ ঘটনায় আহত হয় অন্তত ২১ জন। এদের মধ্যে ৫ জনকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। এতে উভয়পক্ষের কমপক্ষে অধর্শত আহত হয়। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তাদের সাথে যোগ দেয় বিজিবি। বতর্মানে ওই এলাকায় থম থমে অবস্থা বিরাজ করছে। প্রশাসন, পুলিশ. বিজিবি ও র‌্যাব এলাকায় টহল দিচ্ছে। ঘটনার পর রাতেই রংপুরের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার আব্দুল্লাহ সাজ্জাদ, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মজিদ আলী, জেলা প্রশাসক সাবিনা ইয়াসমিন ও পুলিশ সুপার মো. গিয়াসউদ্দিন আহমদ, পঞ্চগড় ১৮ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কনের্ল মহিউস সুন্নাহ, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এহেতেশাম রেজা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাঈমুল হাছানসহ জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের কমর্কতার্রা ঘটনাস্থল পরিদশর্ন করেন এবং পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহতদের দেখতে যান। তারা ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ^াস দেন। জেলা প্রশাসন এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে তৌহিদী জনতা ও বিভিন্ন সংগঠনের নেতাদের নিয়ে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে বৈঠকের আয়োজন করে। বৈঠকে জলসা স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বৈঠক শেষ হওয়ার আগেই সম্মিলিত খতমে নবুওয়ত সংরক্ষণ পরিষদ, ঈমান আকিদা রক্ষা কমিটি ও পঞ্চগড় যুব সমাজ নামে কয়েকটি সংগঠনসহ তৌহিদী জনতা ও কাদিয়ানি বিরোধী বিক্ষুব্ধ জনতা শহরে বিক্ষোভ মিছিল করে শেরেবাংলা পাকর্ মোড় সংলগ্ন পঞ্চগড়-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে। অবরোধের ফলে মহাসড়কের উভয় পাশে শত শত যানবাহন আটকা পড়ে। এ সময় কাদিয়ানি বিরোধী বিক্ষুব্ধ লোকজন আহমদনগর এলাকায় যেতে চাইলে পুলিশ করতোয়া ব্রিজের ওপর তাদের পথরোধ করে। পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে বিক্ষুব্ধ লোকজন লাঠিসোটা নিয়ে আহমদনগরের দিকে রওয়ানা হলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এক পযাের্য় বিক্ষুব্ধ লোকজন পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করলে পুলিশও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে। প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে পুলিশ ও মুসল্লিদের ধাওয়া পাল্টাধাওয়া চলে। এতে কয়েকজন পুলিশসহ বিক্ষুব্ধ লোকজন আহত হয়। এ সময় আতঙ্কে পঞ্চগড় বাজারের প্রায় সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। পুলিশ ও জনতার ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার এক পযাের্য় তৌহিদী জনতা ও কাদিয়ানি বিরোধী বিক্ষুব্ধ অপর একটি গ্রæপ শহরের রাজনগর এলাকা দিয়ে করতোয়া নদী পার হয়ে আহমদীয়া মুসলিম জামাতের আহমদনগর এলাকায় গিয়ে বাড়ি-ঘর দোকান পাটে হামলা চালায়। রাত সোয়া ১১টার দিকে পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সাবির্ক) মোহাম্মদ গোলাম আজম পঞ্চগড় বাজার জামে মসজিদের মাইকে জেলা প্রশাসন কতৃর্ক জলসা অনুষ্ঠানের অনুমতি বাতিলের সিদ্ধান্ত জানিয়ে সবাইকে শান্ত থাকার আহŸানসহ কারও প্ররোচনায় বিভ্রান্ত না হয়ে সবাইকে বাড়ি ফিরে যাওয়ার অনুরোধ করেন। এরপর থেকে বিক্ষুব্ধ লোকজন বাড়ি ফিরতে শুরু করলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করে। আহমদনগর মুসলিম জামাতের প্রেসিডেন্ট তাহের যুগল দাবি করে বলেন, তাদের ৪০ জনের মত লোক আহত হয়েছে। মেয়েদের টেনে হিঁচড়ে লাঞ্ছিত করা হয়েছে। বেশ কয়েকটি বাড়ি ও দোকানে অগ্নিসংযোগ করাসহ লুটপাট, সীমানা প্রাচীর ও আসবাবপত্রের ব্যাপক ভাঙচুর ও ক্ষতিসাধন করা হয়। জলসার অনেক মালামাল ভাঙচুর করা হয়েছে। তারা প্রায় দুই ঘন্টা তাÐব চালালেও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষেত্রে তেমন একটা ভূমিকা লক্ষ্য করা যায়নি। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার সাদাত স¤্রাট বলেন, পৌর মেয়র তৌহিদুল ইসলাম ও আন্দোলনকারী সংগঠনের নেতাদের নিয়ে তারা অবস্থানরত লোকজনকে প্রশাসনের জলসা স্থগিতের কথা জানান। কিন্তু তারা নানাভাবে বিভ্রান্ত হয়ে বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করে রাখে। পরবতীের্ত কিছু লোকজন করতোয়া নদী পার হয়ে শহরতলির আহমদ নগরে জলসা স্থলে যায়। পঞ্চগড় থানার অফিসার ইনচাজর্ (ওসি) আবু আক্কাস আহমদ জানান, রাতে জেলা প্রশাসন জলসা স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেয়। তবে তার আগেই বিভিন্ন স্থান থেকে মুসল্লি ও সাধারণ মানুষ বিভিন্ন সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে। তাদের ছত্রভঙ্গ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও শান্ত করতেই পুলিশ ৫১ রাউন্ড রাবার বুলেট ও ১৭ রাউন্ড টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. প্রতীক কুমার বণিক বলেন, মঙ্গলবার রাতে ৪০ জনকে হাসপাতালে আনা হয়। এদের মধ্যে ৮ জনকে হাসপাতালে ভতির্র পর আশঙ্কাজনক অবস্থায় ৫ জনকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। বাকিরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে যায়। পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, ঘটনা তদন্তে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এহেতেশাম রেজাকে প্রধান করে ৫ সদস্যের একটি তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী তিনদিনের মধ্যে রিপোটর্ দিতে বলা হয়েছে।