সমালোচনা সত্তে¡ও হাসিনায় আস্থা কেন পশ্চিমাদের?

প্রকাশ | ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
শেখ হাসিনা
একাদশ জাতীয় নিবার্চনের আগে এবং পরে পশ্চিমা বিশ্বের কিছু দেশ এবং সংস্থা নিবার্চন প্রক্রিয়া এবং ফলাফল নিয়ে সমালোচনা করেছিল। নিবার্চন পযের্বক্ষক পাঠানোর প্রশ্ন প্রথমেই নাকচ করে দিয়েছিল ইউরোপীয় ইউনিয়ন। তারা এই নিবার্চন বা ফলাফল নিয়ে কোনো মন্তব্যও করবে না বলেও জানিয়েছিল। কিন্তু সেই নিবার্চনের পরেই ইউরোপের কয়েকটি দেশের সরকারপ্রধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিবার্চনে জেতার জন্য অভিনন্দন জানায়। আর বৃহস্পতিবার শেখ হাসিনা ইউরোপের অন্যতম গুরুত্বপূণর্ দেশ জামাির্নতে গেছেন। নিবার্চনের আগে যে পশ্চিমা দেশগুলো সমালোচনা করেছিল তারা কেন শেখ হাসিনার সরকারকে স্বাগত জানিয়ে তাদের আস্থা প্রকাশ করছে? এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তজাির্তক সম্পকর্ বিভাগের শিক্ষক রোকসানা কিবরিয়া বলেন, একটি নিবাির্চত সরকারের সাথে যদি বৃহৎ শক্তির নীতির কোনো বিঘœ না ঘটে সেক্ষেত্রে সেই দেশের সাথে সম্পকের্র ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা তারা দেখবে না। তিনি বলেন, ‘নিবার্চনের আগে কী বলেছে, নিবার্চনে কী হয়েছে-সেটা তাদের জন্য বড় কথা না। তাদের কথা হলো নিবার্চনের পরে সরকার কী ধরনের পলিসি (নীতি) নেয় সেটা।’ রোকসানা কিবরিয়া বলেন, পশ্চিমা বিশ্ব দেখবে সেই নীতিগুলো তাদের স্বাথের্র পক্ষে আসছে নাকি বিপক্ষে আসছে। পক্ষে থাকলে তারা অনেক কিছুই দেখবে না। সেটা নিয়ে তারা ততটা ইস্যু করবে না। আন্তজাির্তক রাজনীতির এটাই ট্রেন্ড।’ এদিকে গত ১১ ফেব্রæয়ারি বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে রক্ষার জন্য ট্রাম্প প্রশাসনকে ব্যবস্থা নেয়ার আহŸান জানিয়েছে মাকির্ন কংগ্রেসের ফরেন অ্যাফেয়াসর্ কমিটি। কমিটির সদস্যরা একটি চিঠিতে গত বছরের ৩০ ডিসেম্বরের নিবার্চনে কারচুপির অভিযোগগুলোকে কংগ্রেসের সদস্যরা ‘গণতন্ত্রের জন্য হুমকি’ বলেও অভিহিত করেছেন। এ ব্যাপারে সাবেক রাষ্ট্রদূত নাসিম ফেরদৌস বলেন, আন্তজাির্তক সম্পকের্র বড় বিষয় প্রত্যেকটা দেশ নিজের স্বাথর্টা দেখে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশে উন্নয়ন এবং স্থিতিশীল থাকলে তারাও অংশীদার হবে। তিনি বলেন, ‘পশ্চিমা দেশ বলেন বা অন্য যে দেশ বলেন তারা আশা করছে বাংলাদেশে স্থিতিশীলতা আসুক, সেখানে কোনো সন্ত্রাসবাদের স্থান থাকবে না। সেটা আমাদের প্রতিবেশী দেশরাও আশা করছে, পশ্চিমারাও।’ কারণ এখানে যদি অশান্তি হয় সেটা স্ফুলিঙ্গের মতো অন্য জায়গায় উড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। ‘সুতরাং শান্তি বজায় রেখে প্রবৃদ্ধির হার বাড়ানো এবং প্রগ্রেস যেটা বলে আন্তজাির্তকভাবে সেই পথে যদি বাংলাদেশ এগিয়ে যেতে পারে তাহলে পশ্চিমা দেশ এবং অন্য দেশের স্বাথর্ পূরণ হবে,’ এমনটাই মনে করেন সাবেক এই রাষ্ট্রদূত। ‘তাই তাদের কাছে এটা গ্রহণযোগ্য এবং এই সরকারকে তারা এভাবেই গ্রহণ করেছে।’ দেশীয় কয়েকটি পযের্বক্ষণ সংস্থায় আথির্ক সহায়তা করলেও সরকারি পযের্বক্ষক পাঠায়নি যুক্তরাজ্য, সুইডেন, নরওয়ে, ডেনমাকর্। নিবার্চন নিয়ে যেমন প্রশ্ন তোলে তেমনি বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক চচার্ নিয়ে প্রশ্ন তোলে কিছু দেশ এবং পশ্চিমা সংস্থা। যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে নিবার্চনকে ঘিরে এসব অভিযোগকে দুঃখজনক বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। নানা অভিযোগ নিবার্চনকে কলুষিত করেছে বলে মন্তব্য করেছিল ইয়োরোপীয় ইউনিয়ন। অনিয়মের অভিযোগের বিষয় সব পক্ষকে একসঙ্গে কাজ করতে বলছিল যুক্তরাষ্ট্র। আবার একই সঙ্গে নিবাির্চত হওয়ায় শেখ হাসিনার সরকারকে অভিনন্দন জানিয়েছে তারা। এ প্রসঙ্গে সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ূন কবির বলেন, বাংলাদেশের নানা দিকে ইতিবাচক যে বিবতর্ন হয়েছে সেটা দীঘের্ময়াদে আঞ্চলিক শান্তির জন্য গুরুত্বপূণর্ বলে তারা মনে করছেন। ‘প্রশ্ন যেটা আছে সেটা তারা রাখছে একটা ট্র্যাকে। কিন্তু পাশাপাশি এই যে বাংলাদেশের ইতিবাচক বিবতর্ন সেটাকে তারা মনে করে দীঘের্ময়াদে বাংলাদেশের ইতিবাচক পরিবতর্ন যেমন বাংলাদেশের মানুষের জন্য গুরুত্বপূণর্ তেমন আঞ্চলিক উন্নয়নের জন্যও গুরুত্বপূণর্।’ হুমায়ুন কবির বলেন, ‘সেটাকে তারা ইতিবাচক দৃষ্টান্ত হিসেবে গ্রহণ করে। আমি মনে করি এই জায়গাটাতে বাংলাদেশের সাথে কাজ করা প্রয়োজন এবং সেই জায়গায় তারা সকলেই কাজ করতে আগ্রহী।’ বিবিসি