মেলায় কবি আল মাহমুদ

প্রকাশ | ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:০০ | আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:১৯

এস এম মামুন হোসেন
আল মাহমুদ। বাংলা সাহিত্যের এক কিংবদন্তি কবি ও লেখক। চলে গেলেন জীবনের অপরিসীম পূণর্তা নিয়ে। তার মৃত্যুতে লেখক-প্রকাশকদের মাঝে নেমে আসে শোকের ছায়া। বতর্মান সময়ের শ্রেষ্ঠ এই কবির পাঠকপ্রিয়তাও রয়েছে শীষের্। সঙ্গত কারণেই তার মৃত্যুর প্রভাব পড়ে শনিবারের বইমেলায়। পাঠকরা পুরো মেলায় এই কবিকে খঁুজে ফিরেছেন অন্তরের অন্তহীন আবেগে। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে কবির মরদেহ শ্রদ্ধা জানানোর জন্য নিয়ে এলে তার ভক্ত ও সাধারণ পাঠকরা আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন। একটি বই কিনে হলেও তার প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর উপায় খঁুজেছেন অনেকে। তাই মেলাজুড়ে ছিল আল মাহমুদের উপস্থিতি। পাঠকদের অভিব্যক্তিতে প্রকাশ পায়, সাহিত্যজগতে আল মাহমুদের শূন্যতা পূরণের নয়। মেলার বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখা যায়, পাঠকরা আল মাহমুদের বই কিনছেন। যদিও সব স্টলে এ লেখকের বই পাওয়া যায় না, তবুও পাঠকরা তার বইয়ের খেঁাজ নিয়েছেন। গতকাল বেলা ১১টায় শিশুপ্রহর উপলক্ষে বইমেলার দ্বার খোলার কিছুক্ষণ পর মেলায় গিয়ে দেখা যায়, শিশুরাও বড়দের মতো করেই আল মাহমুদের বই খঁুজছেন। তবে দুপুর তিনটায় দ্বিতীয়বার মেলার দ্বার খোলার পরই আল মাহমুদ ভক্তদের বই কেনার আগ্রহ বেশি লক্ষ করা যায়। এ সময় অনেককেই বলতে শোনা যায় আল মাহমুদের বই কোথায় পাব? ঐতিহ্য, আদশর্, অনন্যা, সমগ্রসহ যেসব স্টল আল মাহমুদের বই প্রকাশ করেছে তাদের স্টলের সামনে এ দিন ছিল পাঠকদের বাড়তি ভিড়। অনেক প্রকাশনা আবার আল মাহমুদের বই বিক্রিতে ছাড় দিয়েছে এ দিন। এতে করে বিক্রি আরও বেড়ে যায়। কবি আল মাহমুদের বই প্রকাশ করেছে, এমন একটি প্রকাশনা ঐতিহ্য। এর প্রধান সমন্বয়ক কাজল যায়যায়দিনকে জানান, ‘আল মাহমুদের ১৩ খÐের লেখা তারা প্রকাশ করেছেন। অন্য সময় পুরো ১৩ খÐ ৪ হাজার ৯শ’ টাকায় বিক্রি করলেও এদিন এর দাম কমিয়ে ৪ হাজার ৬শ’ টাকায় বিক্রি করছেন। বহু মানুষ আল মাহমুদের বই কিনেছেন।’ এ স্টলেই বই কিনতে আসা একজন পাঠক রাজ্জাক গাজী বলেন, ‘আমি আল মাহমুদের সোনালি কাবিন কাব্যগ্রন্থটি কিনতে এসেছি। তবে এসে দেখলাম ঐতিহ্য স্টলে আল মাহমুদের সমস্ত লেখা একত্রে পাওয়া যাচ্ছে। তাই পুরো ১৩ খÐ ধরেই কিনেছি। কারণ আমার দৃষ্টিতে তিনি বাংলা সাহিত্যের অনেক বড় একজন কবি।’ কাকলী প্রকাশনার প্রকাশক এ কে নাসির আহমেদ সেলিম যায়যায়দিনকে বলেন, ‘আল মাহমুদ শুধু এ বাংলায় নয়, ও বাংলাতেও অনেক বড় একজন কবি। তার মৃত্যুতে যে ক্ষতি বাংলা সাহিত্যের হয়েছে তা পূরণীয় নয়।’ বাংলা একাডেমিতে আল মাহমুদ কবি আল মাহমুদের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাতে শনিবার বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটে বাংলা একাডেমিতে আনা হয় কবির লাশের কফিন। বাংলা একাডেমির সম্মানিত এ ফেলোর লাশ শেষ শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের জন্য বাংলা একাডেমির নজরুল মঞ্চে রাখা হয়। এ সময় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ কবির প্রতি শ্রদ্ধা জানান। কবির সম্মানে এক মিনিট নীরবতাও পালন করেন। বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজীর নেতৃত্বে একাডেমির সব কমর্কতার্ ও কমর্চারীরাও এ সময় কবির প্রতি পুষ্পস্তবক অপর্ণ করে শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। উপস্থিত বক্তৃতা প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পবর্ গতকাল শনিবার সকাল ১০টায় অমর একুশে গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় শিশু-কিশোর সাধারণ জ্ঞান ও উপস্থিত বক্তৃতা প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত নিবার্চন। প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পবের্ ২১ জন প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করে। সাধারণ জ্ঞান প্রতিযোগিতায় মো. মুনতাজিম রহমান সায়মন (প্রথম স্থান), তাইয়্যেবা ও নুসাইবা নাজমী খান (দ্বিতীয় স্থান) ও মো. শাহারিয়ার আহম্মেদ (তৃতীয় স্থান) অধিকার করে। উপস্থিত বক্তৃতা প্রতিযোগিতায় নিসার বিন সাইফুল্লাহ জাহিন (প্রথম স্থান), কাশফিয়া কাওসার চৌধুরী (দ্বিতীয় স্থান) ও শঁাওলী সামরিজা (তৃতীয় স্থান) অধিকার করে। প্রতিযোগিতার বিচারক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিল্পী অণিমা মুক্তি গমেজ, হাসান মাহমুদ এবং ক্রীড়াবিদ রঞ্জিত চন্দ্র দাস। মূলমঞ্চের আয়োজন বিকাল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘চিত্রশিল্পী সৈয়দ জাহাঙ্গীর : শ্রদ্ধাঞ্জলি’ শীষর্ক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মইনুদ্দীন খালেদ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন ফরিদা জামান, নিসার হোসেন এবং মলয় বালা। সভাপতিত্ব করেন শিল্পী হাশেম খান। গ্রন্থমেলায় শিশুপ্রহর অমর একুশে গ্রন্থমেলায় গতকাল ছিল পঞ্চম শিশুপ্রহর। বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পযর্ন্ত চলে শিশুপ্রহর। এরপর সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। এ ছাড়াও ছিল সাধারণ জ্ঞান ও উপস্থিত বক্তৃতা প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পবর্। সকাল ১০টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় শিশু-কিশোর সাধারণ জ্ঞান ও উপস্থিত বক্তৃতা প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত নিবার্চন। প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পবের্ ২১ জন প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করে। মেলার আজকের অনুষ্ঠান আজ গ্রন্থমেলার ১৭তম দিন। মেলা চলবে বিকাল ৩টা থেকে রাত ৯টা পযর্ন্ত। বিকাল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক : শ্রদ্ধাঞ্জলি’ শীষর্ক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন খালেদ হোসাইন। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন মফিদুল হক, আসাদ মান্নান, শিহাব সরকার, আনিসুল হক। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন কবি মনজুরে মওলা। সন্ধ্যায় রয়েছে কবিকণ্ঠে কবিতাপাঠ, কবিতা-আবৃত্তি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।