আন্দোলনে কাঁধ মেলায় নারীরাও

প্রকাশ | ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
ভাষার দাবিতে তুঙ্গে ওঠা আন্দোলনে পুরুষের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যোগ দিয়েছিলেন নারীরাও। জীবন বাজী রেখে মিছিলে অংশগ্রহণ এবং রাত জেগে পোস্টারও লিখেছেন তারা। '৫২-এর ভাষা আন্দোলনে যারা সক্রিয় ভূমিকা রেখেছিলেন তাদের মধ্যে ডা. হালিমা খাতুন, রওশন আরা বাচ্চু, রওশন আরা রেণু, সুফিয়া আহমেদ, তৈফুরা, সুফিয়া খান, ড. শরীফা খাতুন প্রমুখ ছিলেন উলেস্নখযোগ্য। ড. সুফিয়া আহমদের স্মৃতিচারণা থেকে জানা যায়, ১৯৫২ সালের ৩১ জানুয়ারি ঢাকা বার লাইব্রেরি হলে গঠিত হয় 'সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ।' এ পরিষদ ২১ ফেব্রম্নয়ারি সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানে সভা, হরতাল, বিরুাভ মিছিল ইত্যাদি কর্মসূচির ঘোষণা দেয়। ২১ ফেব্রম্নয়ারি বিকেল ৩টায় ছিল গণপরিষদের অধিবেশন। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার জন্য স্মারকলিপি প্রদানের উদ্দেশ্যে গণপরিষদের দিকে মিছিল নিয়ে যাওয়ার কর্মসূচিও ছিল। ছাত্রসমাজের এমন কর্মসূচিতে বিচলিত বোধ করে সরকার। তখন পূর্ব পাকিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন নূরুল আমীন। তার সরকার ২০ ফেব্রম্নয়ারি থেকে এক মাসের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করে আন্দোলন দমন করার চেষ্টা করে। ২১ তারিখ সকাল থেকে ছাত্রছাত্রীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় জমায়েত হয়। কারণ ১৪৪ ধারা ভাঙার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী ড. সুফিয়া আহমদ স্মৃতিচারণে বলেছিলেন, তার ওপর দায়িত্ব পড়েছিল আনন্দময়ী ও বাংলাবাজার স্কুলের মেয়েদের জড়ো \হকরে বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় নিয়ে আসার। তিনি কাজটি করেছিলেন। সিদ্ধান্ত হয়েছিল, ছেলেরা দশজন করে এবং মেয়েরা চারজন করে বের হয়ে পুলিশের ব্যারিকেড পার হয়ে এগিয়ে যাবে। তিনি আরও বলেন, প্রথমে ছাত্রদের দুটি দল মিছিল নিয়ে বের হলে পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে ট্রাকে তোলে। তৃতীয় দল নিয়ে বের হয় মেয়েরা। কিছুদূর যাওয়ার পর শুরু হয় পুলিশের লাঠিচার্জ। টিয়ার গ্যাস ছোড়া হয়। তিনি সামান্য আহত হয়েছিলেন। ড. হালিমা খাতুন ছিলেন ভাষা আন্দোলনের অংশগ্রহণকারীদেরই একজন। তার স্মৃতিচারণে পাওয়া যায়, সক্রিয় অংশগ্রহণের চিত্র। তিনি বলেন, ১৪৪ ধারা ভাঙা নিয়ে তুমুল উত্তেজনা ছিল তাদের। তার ওপর দায়িত্ব ছিল মুসলিম গার্লস স্কুল এবং বাংলাবাজার গার্লস স্কুল থেকে মেয়েদের নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় আসা। ১৪৪ ধারা ভাঙার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তার দল ছিল মেয়েদের প্রথম দল। পুলিশ পথ আটকালে তারা পুলিশের রাইফেল ঠেলে স্স্নোগান দিতে দিতে এগিয়ে যান। পুলিশ লাঠিচার্জ করে এবং টিয়ারগ্যাস ছোড়ে। তারা বিন্দুমাত্র দমে না গিয়ে ঢাকা মেডিকেলের ইমার্জেন্সি থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে আবার রাস্তায় নেমে আসেন এবং গণপরিষদ ভবনের দিকে এগোতে থাকেন। কিন্তু বেশিদূর যেতে পারেননি তারা। শুরু হয় পুলিশের গুলিবর্ষণ। রওশন আরা বাচ্চু সেদিনের স্মৃতিচারণে বলেছেন, তিনি দেখতে পান, ছাত্রদের দুটো দল পুলিশের ব্যারিকেড টপকে চলে যায়। এর পরই তিনি অন্যদের নিয়ে সামনে গিয়ে দাঁড়ান। তাকে সামনে পেয়ে পুলিশের লাঠির আঘাত এসে পড়ে তার ওপরে। তিনি পুলিশের এলোপাথাড়ি লাঠিপেটায় আঘাতপ্রাপ্ত হন। গুলিবর্ষণ শুরু হলে রাস্তার পাশের একটি পুরনো রিকশার গ্যারেজে লুকিয়ে থাকেন। অনেকক্ষণ সেখানে থেকে সন্ধ্যায় ছাত্রী হোস্টেলে ফিরে যান। একুশের প্রথম শহীদ ছিলেন রফিকউদ্দীন। তার মাথার খুলি উড়ে গিয়েছিল। ঘটনার পরপরই এই ঐতিহাসিক দৃশ্যের ছবি তোলেন আমানুল হক কাজী ইদ্রিস এবং মেডিকেল ছাত্রী হালিমা খাতুনের সহযোগিতায়। সেদিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আহতদের সেবা দিতে গিয়ে ক্রোধে ফেটে পড়েছিলেন হাসপাতালের সেবিকা মেয়েরা। প্রতিরোধের জায়গাটি এভাবে তাদের সহযোগিতা, সমর্থনে দীপ্ত হয়ে উঠেছিল।