জামায়াতের নতুন দলের নাম থেকে 'ইসলাম' বাদ!

জামায়াতে ইসলামী নামটি বহাল রেখে সেটিকে সামাজিক সংগঠন হিসেবে পরিচালনা করা হতে পারে। আর নতুন নামে নতুন দল রাজনীতি করবে

প্রকাশ | ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
যাযাদি ডেস্ক ইসলামপন্থি দল জামায়াতে ইসলামীর গুরুত্বপূর্ণ একজন নেতা ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের পদত্যাগের পর দলটি সংস্কার করা না করার প্রশ্নে সুপারিশ তৈরির জন্য পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে জামায়াতের ভূমিকার জন্য ক্ষমা চাওয়া এবং জামায়াত বিলুপ্ত করে নতুন দল গঠনের প্রস্তাবে সাড়া না পেয়ে জামায়াতের অন্যতম সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক পদত্যাগ করার পরই দলের এই উদ্যোগ। জামায়াতে ইসলামীর একজন ঘনিষ্ঠ পর্যবেক্ষক শাহ আব্দুল হান্নান বলেছেন, জামায়াত নেতৃত্ব রাজনীতিকে আলাদা করে একটি নতুন দল গঠনের ব্যাপারে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে বলে তিনি জানতে পেরেছেন। শাহ আব্দুল হান্নান বলেন, এই পার্টির মূল লক্ষ্য থাকবে, একটা কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা। এই পার্টি আলাদা নামে হবে। মনে করেন, এ রকম নাম হতে পারে, যেমন বাংলাদেশ ওয়েলফেয়ার পার্টি বা বাংলাদেশ জাস্টিস পার্টি, এ রকম একটা নাম হবে। এই প্রস্তাব এসেছে। এই নামের সাথে 'ইসলাম' শব্দ নাও থাকতে পারে। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী একটা নতুন চিন্তা এসেছে যে, রাজনীতি আর দাওয়াত বা রাজনীতি এবং প্রচারকে আলাদা করা। যেমন তিউনিসিয়া, মিসর এবং তুরস্ক করেছে। এইটা নিয়ে চিন্তা হচ্ছিল তাদের মধ্যে। সেই দিকটাকে সামনে রেখে তারা নতুন পার্টির চিন্তা করছেন। তিনি তাদের যতটুকু জানেন বা বুঝেন, তাতে তারা নতুন পার্টি করে ফেলবেন।' এমন প্রস্তাব নিয়ে দলটিতে আলোচনা রয়েছে বলে দলের নেতাদেরও অনেকে বলেছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের অনেকে এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, একটি নতুন দল গঠনের বিষয়ে তাদের সেক্রেটারি জেনারেলের নেতৃত্বাধীন কমিটি কাজ করছে। কিন্তু জামায়াতে ইসলামীকে দলটির পুরনো বা বয়স্ক নেতাকর্মীরা বিলুপ্ত করতে চান না। এটিও ব্যারিস্টার রাজ্জাকের পদত্যাগের অন্যমত একটা কারণ ছিল। তিনি মনে করেন, ৭১ সালের ভূমিকার জন্য জামায়াত নামটি বিতর্কিত এবং এটি বিলুপ্ত করা উচিত। শাহ আব্দুল হান্নান বলেন, জামায়াতে ইসলামী নামটি বহাল রেখে সেটিকে সামাজিক সংগঠন হিসেবে পরিচালনা করা হতে পারে। আর নতুন নামে নতুন দল রাজনীতি করবে। এমন প্রস্তাব দলটি এখন সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করছে বলে তার ধারণা। তিনি বলেন, 'সামাজিক মানে রাজনীতি ছাড়া তারা সব কাজ করবে। যেমন ধরেন, জামায়াতে ইসলামী বই প্রকাশ করা, বই লেখা, প্রকাশনা চালানো, স্কুল কলেজ মাদ্রাসা এবং ক্লিনিক হাসপাতাল- এ ধরনের প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা। মানে জামায়াত সমাজসেবামূলক কাজ করবে। তারা ব্যাপকভাবে এমন কাজ করবে। তারা শুধু জাতীয় রাজনীতির কাজ থেকে সরে আসবে। আলাদা নামে যে নতুন দল হবে, তারা জাতীয় রাজনীতিতে কাজ করবে।' নতুন দল হলে তার নেতৃত্বে কারা থাকবেন? জামায়াতের সূত্রগুলো জানিয়েছে, জামায়াতের নেতাকর্মীদের বড় অংশকেই নতুন রাজনৈতিক দলে নেয়া হবে। আর যাদের ব্যাপারে '৭১ সালে ভূমিকার জন্য বিতর্ক আছে, তাদের জামায়াতে ইসলামী নামে সামাজিক সংগঠনেই রাখা হবে। এমন আলোচনা জামায়াতে রয়েছে। পাঁচ সদস্যের কমিটি এসব বিষয়ও তাদের সুপারিশের আওতায় আনতে পারে বলে দলটির নেতাকর্মীদের অনেকে ধারণা করছেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধী ভূমিকার জন্য গত ১০ বছর ধরে জামায়াত চরম সংকটের মধ্যে রয়েছে। এমনকি দলটির বিতর্কিত ভূমিকা নতুন প্রজন্ম নতুন করে সামনে আনছে। দলে নতুনদের ভেড়ানোটাও এখন অনেক কঠিন হয়েছে বলে দলটি নেতাদের অনেকে বলছেন। জামায়াতে তৃণমূলের নেতাকর্মীদেরও অনেকে মনে করেন, পরিস্থিতি এবং বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে তাদের দলের পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। ফেনী জেলার জামায়াতের আমির এ কে এম শামসুদ্দিন বলেন, তাদের নেতৃত্ব প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে বলে তারা বিশ্বাস করেন। আসলে ১০ বছর ধরে সারাদেশে জামায়াতের সব কার্যালয় বন্ধ হয়ে রয়েছে। নির্বাচন কমিশনে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল হয়েছে। তাদের যে গোপন সংগঠনের মতো কাজ করতে হচ্ছে তাতে দলটি অস্তিত্বের সংকটে পড়েছে। এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে জামায়াতের সব পর্যায় থেকে দলটির নীতি নির্ধারকদের ওপর তাগিদ রয়েছে। ফলে দল থেকে নানা কৌশলের কথা আসছে। জামায়াত আসলে কতটা সংস্কার করবে? রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী বলেন, 'জামায়াত রক্ষণশীলদের দখলেই থাকবে। সেই দলটার কোনো ভবিষ্যত এদেশে থাকবে না বলে আমার মনে হয়।' তিনি বলেন, 'তাদের সংকট থেকে বেরিয়ে আসতে হলে, '৭১ এর বিষয়টিকে সামনে আনতে হবে। মাফ চাওয়ার প্রশ্ন আসবে। তাদের সংকট থেকে বেরিয়ে আসতে হলে তাদের গঠনতন্ত্র পরিবর্তন করতে হবে। তাদের গঠনতন্ত্র বাংলাদেশের সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক। সেটাকে তাদের পরিবর্তন করতে হবে। এগুলো কি তারা করবে, আমার তো মনে হয় না।' এদিকে, জামায়াতের নেতাদের অনেকে বলছেন, নতুন একটি সংগঠন করার ব্যাপারে দলের ভেতর আলাপ আলোচনা শুরু হয়েছে এবং অল্প সময়ের মধ্যে বিষয়গুলোতে তাদের দলের পরিষ্কার ধারণা তুলে ধরা হতে পারে। কিন্তু দলটি আসলে কতটা সংস্কার আনবে, তা নিয়ে বিশ্লেষকদের অনেকে সন্দেহ রয়েছে। ব্যারিস্টার রাজ্জাকের পদত্যাগ এবং তার পরপরই জামায়াতের সংস্কারপন্থি একজন কেন্দ্রীয় নেতা মুজিবুর রহমান মঞ্জুকে বহিষ্কারের ঘটনায় দলটিতে মতবিরোধ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। দলে সংস্কার না করার অভিযোগ তুলে ব্যারিস্টার রাজ্জাকের পদত্যাগের ঘটনা, সংস্কার ইসু্যতে দলটির নেতৃত্বকে একটা চাপে ফেলেছে বলা যায়। বিবিসি বাংলা