জীবনে প্রথম সংসদে ঢুকে অভিভূত সুবর্ণা মুস্তাফা

প্রকাশ | ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
সুবর্ণা মুস্তাফা
শৈশবেই অভিনয়ে হাতেখড়ি, তারুণ্যেই উঠে যান জনপ্রিয়তার শিখরে, সেই সুবর্ণা মুস্তাফা জীবনে প্রথমবার সংসদ ভবনে ঢুকে বললেন, তিনি অভিভূত। অভিনেত্রী সুবর্ণা মুস্তাফার সংসদ ভবনে এই প্রবেশ নিছক দেখার জন্য নয়, বাংলাদেশের আইনসভার সদস্য হিসেবে বুধবার শপথ নিয়েছেন তিনি। সংসদ সদস্যের পৃষ্ঠা ২ কলাম ২ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব নিয়ে আগামী পাঁচ বছর লুই আই কানের নকশায় গড়া এই ভবনই তার ঠিকানা। কাকতালীয়ভাবে বাবা অভিনেতা-আবৃত্তিশিল্পী গোলাম মুস্তাফার মৃতু্যবার্ষিকীতে সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নিয়েছেন সুবর্ণা; সেই আবেগও ছুঁয়ে গেল তাকে। শপথ নিয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, 'ফেব্রম্নয়ারি মাস আমার জন্য ডিপ্রেসিং ছিল। বাবার মৃতু্য হয়েছিল এই মাসে। ১৬ বছর পর ফেব্রম্নয়ারিতে বাবার মৃতু্যদিনে শপথ নিলাম। একটু পর আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে একুশে পদক নেব।' আওয়ামী লীগের মনোনয়নে এই প্রথম সংসদে নারী আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পাশাপাশি এবার একুশে পদকেও ভূষিত হয়েছেন জীবনের ৫৯ বছর পেরিয়ে আসা এই অভিনেত্রী। মঞ্চ ও টিভির গন্ডি ছাড়িয়ে চলচ্চিত্রে অভিনয়েও নিজের মেধার সাক্ষর রেখেছেন সুবর্ণা; সেই পরিচয়ে অতিপরিচিত সুবর্ণার কাছে সাংবাদিকদের প্রশ্ন ছিল, নতুন পরিচয় পাওয়া অনুভূতি কী? উত্তরে তিনি বলেন, 'খুবই ভালো। আমি খুবই এক্সাইটেড। আমি জীবনে সংসদ ভবনে এই প্রথম ঢুকলাম। এত বড় ... বিশাল লাইব্রেরি আছে।' সংসদ সদস্য হিসেবে নিজের দায়িত্ব কী হবে, সে বিষয়ে নিজের ধারণা এখনো যে স্পষ্ট নয়, সেটা অকপটে স্বীকার করেন এই অভিনেত্রী। তিনি বলেন, এখনো কাজ কী? সেটা জানি না। যে কাজটি দেয়া হবে, সেটা আমার শতভাগ দিয়ে করব। এ ব্যাপারে আমি নিশ্চিত। 'সঠিকভাবে কাজ করলে ক্ষমতার জায়গাটা বাড়ানো যায়। অনেক ক্ষমতাধর মানুষ এই সংসদে, এই টার্মে ক্ষমতায় নেই প্রায়। বোঝাতে পারলাম কথাটা,' যোগ করেন তিনি। সামাজিক প্রেক্ষাপটে কোন কাজগুলোকে চ্যালেঞ্জ মনে করছেন- এ প্রশ্নে সুবর্ণা মুস্তাফা বলেন, 'সবকিছুই চ্যালেঞ্জ। অনেকের মনে হয়, সংরক্ষিত বলে এখানে চলে আসাটা ইজি। আসলে তা নয়। মেয়েরা রাজনীতিতে এগোচ্ছে। সংরক্ষিত আসনটি তাদের এক ধরনের সাপোর্ট দেয়া। এখান থেকে বেরিয়ে অনেকেই সরাসরি নির্বাচন করেছেন। দেখতে চাইলে আমি অর্ধেক গস্নাস ভরা আবার খালি দেখতে পারি।' সুবর্ণা মুস্তাফাসহ ৪৯ জন বুধবার নারী আসনের সংসদ সদস্য হিসেবে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর কাছে শপথ নিয়েছেন। এর মধ্যে পাকিস্তান আমলে গণপরিষদে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলার প্রথম দাবি উত্থাপনকারী ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের নাতনি আরমা দত্তও রয়েছেন। সমাজসেবী আরমা দত্ত সাংবাদিকদের বলেন, 'ফেব্রম্নয়ারি মাসে শপথ নিয়ে আমি দায়বদ্ধ। ভাষা আন্দোলন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে, বঙ্গবন্ধুসহ যারা শহীদ হয়েছেন, তাদের কাছে আমি দায়বদ্ধ। যে দায়িত্ব দিয়েছেন প্রধানমনন্ত্রী, সেই দায়িত্ব যাতে পালন করতে পারি ...' আবেগাপস্নুত হয়ে তিনি বলেন, '২৫ ফেব্রম্নয়ারি করাচিতে আমার দাদু ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত প্রথম আইনসভায় ভাষার দাবি তোলেন। আর আজ আমি দাদুর উত্তরসূরি হয়ে বাংলাদেশের একজন সংসদ সদস্য হলাম। আমি যেন উনার এবং বঙ্গবন্ধুর রক্তের দাম দিতে পারি।' প্রথমবার সংসদ সদস্য হওয়া সৈয়দা রুবিনা মিরা বলেন, 'রাজপথে যেটুকু কাজ করতে পেরেছি, এখন আমি আরও দ্বিগুণ উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে এবং দ্বিগুণ বেগে কাজ করতে পারব।' বাসন্তী চাকমা বলেন, 'আমাদের চট্টগ্রাম হিল ট্রাকস এবং ওখানকার পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী বিশেষ করে নারীদের নিয়ে কাজ করার চেষ্টা করব।' জাতীয় পার্টির সালমা ইসলাম বলেন, 'বিরোধী দল হিসেবে আমি সরকারে ভালো কাজের কথা বলব এবং উনারা যদি ভুল করেন, তবে সেগুলো তুলে ধরব।' ওয়ার্কার্স পার্টির সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন দলটির সভাপতি রাশেদ খান মেননের স্ত্রী লুৎফুন নেসা খান। তিনি বলেন, 'স্বামী-স্ত্রী একসঙ্গে আগের পার্লামেন্টে মেম্বার হয়েছেন, আপনারা জানেন। রওশন এরশাদ-এইচএম এরশাদ, রুহুল আমিন হওলাদার আর তার মিসেস। এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী থেকেও হয়েছেন। আর আমরা।' তিনি বলেন, 'একটা জীবনে প্রথমসারির ছাত্রনেত্রী ছিলাম। বিভিন্ন কারণে সরকারি চাকরি নিতে হয়েছিল। রিটায়ারের পর সমাজসেবার কাজ করেছি। এমপি হওয়ার পর কাজের পরিধি বাড়বে।'