কাতর চোখে মর্গে খোঁজে প্রিয়মুখ

প্রকাশ | ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
রাজধানীর চকবাজার এলাকার চুড়িহাট্টায় বুধবার রাতে আগুন লাগার পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছুটে যান মো. হোসেন। কারণ, তার ছেলে রোহান আগুন লাগার সময় চুড়িহাট্টাতেই ছিল। এদিক-সেদিক খুঁজে ছেলের সন্ধান না পেয়ে বাবা ঢাকা মেডিকেলে যান। বৃহস্পতিবার দুপুর গড়িয়ে গেলেও ছেলের খোঁজ পাননি বাবা। ছেলে বেঁচে আছে কি নেই- সে খবর মিলছে না। শুধু রোহান নয়, ঘটনার সময় সেখানে থাকা অনেকেরও হদিস নেই। নিখোঁজ ব্যক্তিদের খোঁজে স্বজনরা ভিড় করেন হাসপাতালে। ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগের সামনে থেকে ভিড় মর্গের সামনে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে মর্গে। ডেন্টাল কলেজের ছাত্র মাঈনুদ্দীন রাত থেকে তার দুই সহপাঠীকে পাচ্ছিলেন না। সকালে মর্গে এসে খুঁজে পেয়েছেন তাদের একজন ইমতিয়াজ ইমরোজকে। অপরজন আশরাফুল হক কী অবস্থায় আছেন, কোথায় আছেন, জানতে পারেননি। মাঈনুদ্দীন বলেন, তারা ধানমন্ডিতে থাকেন। চুড়িহাট্টায় মদিনা মেডিকেল হল নামের একটা ফার্মেসিতে চিকিৎসকের সহকারী হিসেবে কাজ করতেন ইমরোজ ও আশরাফুল। আগুন লাগার পর থেকে তাদের মোবাইল বন্ধ। সকালে ইমতিয়াজকে পেয়েছেন। তার শরীরের অর্ধেক পুড়ে গেছে। পা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। যে ফার্মেসিতে শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজ করছিলেন ইমতিয়াজ ও আশরাফুল, সেটির মালিক মো. কাওসার মারা গেছেন। বৃহস্পতিবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গের সামনে যমজ শিশু নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন কয়েকজন। তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ চতুর্থ বর্ষের ছাত্র কাওসার আহমেদের স্বজন। পড়াশোনার পাশাপাশি চকবাজারে মদিনা মেডিকেল হল চালাতেন কাওসার। ঘটনার সময় সেখানেই ছিলেন তিনি। কাওসারের ভাই ইলিয়াস মর্গের সামনে দাঁড়িয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলেন, 'ও নেই জানতে পারছি। লাশ মর্গে আসছে। তবে দেখতে পাচ্ছি না, খুঁজছি। মর্গে থাকা লাশের সারির মধ্য থেকে নিজের স্বজনদের শনাক্ত করতে ছোটাছুটি করছেন লোকজন। কেউ পারছেন, কেউ পারছেন না। কারণ, কিছু কিছু লাশ পুড়ে কয়লা হয়ে গেছে। বুধবার রাত থেকে নূর-ই-তানহা ছবি হাতে ভাইকে খুঁজছিলেন। ভাইকে জীবিত ফিরে পাবেন- সেই আশা ছিল তার মনে। কিন্তু বৃহস্পতিবার সকাল নয়টার কিছু পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে ভাইয়ের লাশ পান তানহা। বশিরউদ্দীন আহমেদও তানহার মতো একজন। তিনি তার দুই বন্ধুর লাশ পেয়েছেন। কিন্তু পাশের দোকানি হাজি ইসমাইলকে পাননি। ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সোহেল মাহমুদ বলেন, পুড়ে যাওয়া অনেক লাশ চেনা যাচ্ছে না। তাদের শনাক্ত করতে ডিএনএ পরীক্ষা করতে হবে।