ছেলের লাশটাও কি পামু না?

প্রকাশ | ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
ভাইয়ের ছবি হাতে বোন রোজিনা
দুই হাতে পাসপোর্ট সাইজের দুটো ছবি নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন বোরকা পরা এক তরুণী। তার পাশেই মূর্তির মতো স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে এক বৃদ্ধ। কেউ পাশ দিয়ে গেলেই ছবিটা দেখিয়ে সেদিন দেখেছে কিনা জানতে চাচ্ছেন। যখন সবাই মাথা নাড়িয়ে না সূচক জবাব দিচ্ছেন তখনই চোখেমুখে চরম হতাশা ফুটে উঠছে তার। শনিবার সরেজমিন এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে বৃদ্ধ জানান, তার ছেলের নাম এনামুল হক। বুধবার রাতে চকবাজারের সাকুরা মার্কেটে নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে বেরিয়ে রিকশায় কেরানীগঞ্জের বাসায় ফেরার পথে নিখোঁজ হন। গত তিনদিন ধরে প্রতিদিনই চুড়িহাট্টায় অগ্নিকান্ডের ঘটনাস্থলে ছুটে আসছেন, যদি ছেলের খোঁজ মেলে সে আশায়। বোন রোজিনা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলছিলেন, 'ভাইটা কি বাঁইচ্যা আছে? আগুনে পুড়ে না জানি কত কষ্ট পাইছে।' এ সময় বৃদ্ধ বাবা পাশ থেকে অসহায়ের মতো জানতে চাইলেন, 'ছেলের লাশটাও কি পামু না?' পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টার ওয়াহেদ ম্যানশনে বুধবার রাতে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। রাত ১০টা ৩৮ মিনিটে আগুনের সংবাদ পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ৩৭টি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় শুক্রবার সকাল পর্যন্ত মোট ৭৮ জন নিহত হয়েছেন। আহত ও দগ্ধ অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৪১ জন। এদের মধ্যে দু'জনকে নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়েছে। বাকিদের অবস্থাও আশঙ্কাজনক। অগ্নিকান্ডের কারণ উদঘাটনসহ দুর্ঘটনার সার্বিক বিষয় তদন্তের জন্য সুরক্ষাসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (অগ্নি অনুবিভাগ) প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তীকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। কমিটিকে ৭ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। এছাড়াও দোষীদের চিহ্নিত করতে ১১ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি)। অগ্নিকান্ডের কারণ অনুসন্ধান, প্রাথমিক ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ এবং অগ্নিদুর্ঘটনা পুনরাবৃত্তিরোধে সুপারিশ প্রদানের জন্য ১২ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে শিল্প মন্ত্রণালয়।