রাসায়নিকের মজুদ সরানো শুরু, মেয়রের হুশিয়ারি

প্রকাশ | ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন শনিবার চকবাজারের চুড়িহাট্টা মোড়ের ওয়াহেদ মঞ্জিলে রাখা বিপুল পরিমাণ রাসায়নিক সরানোর কাজ শুরু করেন -যাযাদি
ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টা মোড়ের অগ্নিকান্ডে হাজী ওয়াহেদ মঞ্জিল নামের যে ভবনটি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তার বেইজমেন্টে বেআইনিভাবে রাখা বিপুল পরিমাণ রাসায়নিক সরাতে কাজ শুরু করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ। এর মধ্য দিয়ে পুরান ঢাকার সব রাসায়নিকের গুদাম ও কারখানা অপসারণের কাজ শুরু হল জানিয়ে মেয়র সাঈদ খোকন বলেছেন, সিটি করপোরেশনের অভিযানের সময় কারো বাড়িতে অবৈধ কেমিক্যালের মজুদ পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। শনিবার দুপুরে ঘটনাস্থলে এসে ওয়াহেদ মঞ্জিলের রাসায়নিকের গুদাম ঘুরে দেখেন মেয়র। এরপর দুই দফায় দুটি ট্রাকবোঝাই করে ওই মালামাল সরিয়ে নেয়া শুরু হয়। চকবাজার থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মুরাদ বলেন, সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধানে এ সব রাসায়নিক দ্রব্য কেরানীগঞ্জের ঝিলমিল প্রকল্প এলাকায় নিয়ে রাখা হবে। কারো বাড়িতে রাসায়নিকের মজুদের খোঁজ জানা থাকলে তা সিটি করপোরেশনের অফিস, কাউন্সিলরের অফিসে বা থানায় জানাতে অনুরোধ করেন মেয়র। তিনি বলেন, একটি সিসিটিভি ভিডিওতে দেখা গেছে, গাড়ির গ্যাস সিলিন্ডার থেকেই আগুনের সূত্রপাত হয়েছে। বুধবার রাতে চকবাজারের চুড়িহাট্টা মোড়ে ভয়াবহ ওই আগুনে চার তলা হাজী ওয়াহেদ মঞ্জিলসহ পাঁচটি ভবন পুড়ে গেছে। অগ্নিদগ্ধ হয়ে প্রাণ গেছে অন্তত ৬৭ জনের। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, একটি পিকআপ ভ্যানের সিলিন্ডার বিস্ফোরণের মাধ্যমে আগুনের সূত্রপাত হয়। তবে আশপাশের দোকান আর ভবনে থাকা রাসায়নিক এবং পস্নাস্টিক ও প্রসাধনীর গুদাম চুড়িহাট্টার আগুনকে ভয়াবহ মাত্রা দেয় বলে ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের ধারণা। ক্ষতিগ্রস্ত পাঁচটি ভবনের মধ্যে ওয়াহেদ মঞ্জিলের নিচতলায় ডজনখানেক দোকান, আর দোতলায় পারফিউম ও পস্নাস্টিক সামগ্রীর গোডাউন ছিল। আগুনে ওই দুটি ফ্লোরের পুরোটাই পুড়ে গেছে। বৃহস্পতিবার সকালে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা ওই বাড়ির বেইজমেন্ট খুলে সারিসারি রাসায়নিকের ড্রাম ও বস্তার স্তূপ দেখতে পান। আগুন বেইজমেন্টে পৌঁছালে পরিস্থিতি আরও কতটা ভয়াবহ হতে পারত, তা অনুমান করে আঁৎকে ওঠেন তারা। এদিকে অগ্নিকান্ডের পর চুড়িহাট্টা মোড়ে রাস্তা থেকে পোড়া আবর্জনা সরিয়ে নিয়েছে সিটি করপোরেশন। চারটি ভবনকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে টানিয়ে দেয়া হয়েছে সতর্কবার্ত। আশপাশের ভবনগুলোতে আবার বিদু্যৎ, গ্যাস ও পানি সরবরাহ শুরু হয়েছে। চুড়িহাট্টা শাহী জামে মসজিদের দক্ষিণ এবং উত্তর-পূর্ব কোণে নতুন দুটো খুঁটি বসাচ্ছে বিদু্যতের লালবাগ বিভাগ। বুধবারের আগুনে ওই এলাকার মোট চারটি বৈদু্যতিক খুঁটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ঠিকাদার আবুল কাসেম বলেন, 'আগের চারটি খুঁটি ছোট ছিল। এই দুটি খুঁটি বড়। তাই দুটি দিয়েই কাজ চলবে।' দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যরা সকালে ঘটনাস্থল ঘুরে দেখেন। এ কমিটির আহ্বায়ক মো. আকরাম হোসেন জানান, অগ্নিকান্ডের কারণ অনুসন্ধানের পাশাপাশি ভবিষ্যতে করণীয় নির্ধারণে কাজ করছেন তারা। পাশাপাশি নিখোঁজদের একটি তালিকাও তারা করছেন। তদন্তে কী পাওয়া গেছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'ওয়াহেদ ম্যানশনের দোতলায় পস্নাস্টিকের দানা আর প্রচুর স্প্রে বোতল ছিল। আগুন ছড়িয়ে পড়ার বড় কারণ এটা।' 'দ্বিতীয় বিষয়টি হল, এখানে রাস্তা সরু, এলাকা ঘনবসতিপূর্ণ। আগুন লাগার পর যানবাহন দ্রম্নত মুভ করতে পারেনি। তা করতে পারলে রাস্তায় এত মানুষ মারা যেত না।' শনিবারই কমিটির প্রতিবেদন চূড়ান্ত করে মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া হবে বলে জানান আকরাম।