বিশ্বের ধনী দেশগুলোকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
জলবায়ু সংকট এড়াতে কাজ করতে হবে সততার সঙ্গে
প্রকাশ | ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০
সোহেল হায়দার চৌধুরী নিউ ইয়র্ক থেকে
সংকট এড়াতে বিশ্বের প্রধান অর্থনীতির দেশগুলোকে জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে সততার সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আশা করি বিশ্বের প্রধান অর্থনীতির দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তন এবং আসন্ন সংকট এড়াতে তাদের ন্যায্য অংশীদারিত্বের বিষয়ে সৎ থাকবে।
বুধবার প্রধানমন্ত্রী ইসিওএসওসি চেম্বারে 'জলবায়ু ন্যায্যতা প্রদান : ত্বরান্বিত উচ্চাকাক্ষা এবং অভিযোজন ও সবার জন্য প্রাথমিক সতর্কবার্তা বাস্তবায়ন' শীর্ষক জলবায়ু উচ্চাকাক্ষা শীর্ষ সম্মেলনের উচ্চ স্তরের বিষয়ভিত্তিক অধিবেশনে এই মন্তব্য করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা প্রমাণ করে যে অভিযোজন এবং আগাম সতর্কতায় বিনিয়োগ করা সঠিক।
শেখ হাসিনা বলেন, জাতিসংঘ মহাসচিবের দু'টি উদ্যোগে সমর্থন দিতে বাংলাদেশ এই অধিবেশনে যোগ দিয়েছে। বাংলাদেশ এই এজেন্ডাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার যে কোনো গঠনমূলক পদক্ষেপের প্রতি সমর্থন দিতে প্রস্তুত।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ভূমিকম্প মডেলিং নিয়ে দেশব্যাপী একটি প্রদর্শনী মহড়া করতে জাতিসংঘকে অনুরোধ জানিয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ দক্ষিণ-দক্ষিণ এবং ত্রিভুজাকার সহযোগিতার মাধ্যমে অন্যান্য দুর্বল দেশগুলোর সঙ্গে তার দক্ষতা বিনিময় করতে ইচ্ছুক।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭০ সালে ভোলা ঘূর্ণিঝড়ের সময় লক্ষাধিক লোক মারা গিয়েছিল। তার তুলনায় বাংলাদেশে প্রাণহানির সংখ্যা এক অঙ্কে নেমে এসেছে। তিনি বলেন, আমাদের ৬৫,০০০ উপকূলীয় মানুষের সমন্বয়ে বিশ্বের বৃহত্তম কমিউনিটি স্বেচ্ছাসেবক কর্মসূচি রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার জন্য বাংলাদেশ একটি সমন্বিত বহু-বিপত্তি প্রাথমিক সতর্কীকরণ পদ্ধতির সর্বশেষ জাতীয় পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। আমরা আবহাওয়ার পূর্বাভাসের নিয়মিত আপডেট দেওয়ার জন্য মোবাইল প্রযুক্তি ব্যবহার করছি।
ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের (সিভিএফ) বিষয়ভিত্তিক রাষ্ট্রদূত সায়মা ওয়াজেদ এ সময়ে উপস্থিত ছিলেন।
এসডিজি বাস্তবায়নে সরকার প্রতিশ্রম্নতিবদ্ধ
এদিকে, বুধবার জাতিসংঘ সদর দপ্তরের দ্বিপাক্ষিক বুথে মা, নবজাতক ও শিশু স্বাস্থ্যের জন্য অংশীদারিত্বের (পিএমএনসিএইচ) চেয়ার হেলেন ক্লার্কের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সরকার কোভিড-১৯ মহামারি, ইউক্রেন যুদ্ধ এবং জলবায়ু সংকট থেকে উদ্ভূত সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় 'সুস্বাস্থ্য ও কল্যাণ' বিষয়ে এসডিজি-৩সহ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাগুলো (এসডিজি) বাস্তবায়নে প্রতিশ্রম্নতিবদ্ধ।
তিনি আরও বলেন, 'আমরা কোভিড-১৯ মহামারি, ইউক্রেন যুদ্ধ এবং জলবায়ু সংকট থেকে উদ্ভূত চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও এসডিজি-৩'র অন্তর্ভুক্ত এসডিজিগুলো কার্যকরে প্রতিশ্রম্নতিবদ্ধ'।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডক্টর এ কে আব্দুল মোমেন পরে ৭৮তম জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) অধিবেশনের ফাঁকে প্রধানমন্ত্রীর দৈনন্দিন কর্মকান্ড সম্পর্কে গণমাধ্যমকে ব্রিফ করেন।
এ সময়ে প্রধানমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, সরকার তার স্বাস্থ্যসেবা সবার দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার অঙ্গীকার অনুযায়ী চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছর স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ ২৭ শতাংশ বৃদ্ধির পাশাপাশি জাতীয় স্বাস্থ্য খাতের কৌশলগত পরিকল্পনা (২০১১-২০৩০) বাস্তবায়ন করছে।
বৈঠকে হেলেন ক্লার্ক শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে স্বাস্থ্য খাতে সার্বিক উন্নয়নের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, 'সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করে মা ও শিশুমৃতু্যর হার কমানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ একটি বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।'
এ সময়ে অন্যান্যের মধ্যে ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের বিষয়ভিত্তিক রাষ্ট্রদূত সায়মা ওয়াজেদ এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডক্টর এ কে আব্দুল মোমেন উপস্থিত ছিলেন।
নারী নেতৃত্বে উদাহরণ সৃষ্টি করতে হবে
এদিকে, বুধবার জাতিসংঘ সদর দপ্তরে প্রতিনিধি ডাইনিং রুমে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) ৭৮তম অধিবেশনের ফাঁকে ইউএনজিএ পস্ন্যাটফর্ম অব উইমেন লিডারদের বার্ষিক সভায় ইতিবাচক সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রভাব তৈরিতে নারীদের নেতৃত্বের অবস্থানে থাকার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন. আমাদের কর্মকান্ডকে অংশগ্রহণ থেকে নেতৃত্বে উন্নীত করতে জাতিসংঘকে অবশ্যই উদাহরণ সৃষ্টি করতে হবে।
এ সময় তিনি বলেন, এটা দুঃখজনক যে জাতিসংঘের মহাসচিব হিসেবে এখন পর্যন্ত কোনো নারীকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। সময় এসেছে, আমরা শিগগিরই একজনকে পাবো।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের অবশ্যই নিজেদের অংশীদারিত্বের ভিত্তি বাড়াতে হবে, যাতে লিঙ্গ সমতা একটি আদর্শ হয়ে ওঠে। তিনি নারীর অংশগ্রহণকে উচ্চতর পর্যায়ে এগিয়ে নিতে বেসরকারি খাতকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
প্রতিটি দেশের আলাদা আলাদা এবং তাদের ভিন্ন চ্যালেঞ্জ এবং সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ভিন্নতা রয়েছে উলেস্নখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবাই যেহেতু ঐতিহাসিক এজেন্ডা ২০৩০ গ্রহণ করেছে, সেহেতু তাদের লিঙ্গ সমতা অর্জনে প্রতিশ্রম্নতিবদ্ধ থাকা উচিত। আমরা কোনো অবস্থাতেই সেই অঙ্গীকার থেকে পিছিয়ে যেতে পারি না। নারী নেত্রী হিসেবে, সব নারীর পাশে দাঁড়ানো এবং অন্যদের পথ দেখাতে পারে এমন উদাহরণ তৈরি করা আমাদের দায়িত্ব। একটি লিঙ্গ-সমতার বিশ্ব অর্জনের জন্য অবশ্যই আমাদের অবস্থান এবং শক্তিকে কাজে লাগাতে হবে।
ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম (সিভিএফ)-এর থিম্যাটিক অ্যাম্বাসেডর সায়মা ওয়াজেদ সভায় উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যের শুরুতেই উইভেন লিডারদের এই পস্ন্যাটফর্ম থেকে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বলে উলেস্নখ করেন। তিনি বলেন, ২০২১ সালে এর সূচনা পাওয়ার পর থেকে এই পস্ন্যাটফর্মে আমরা আমাদের অভিজ্ঞতা বিনিময় করি। একে অপরের কাছ থেকে শিখি, কীভাবে স্থানীয় সমাধানগুলো নিয়ে বিশ্বব্যাপী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বের অর্ধেক জনসংখ্যাকে পেছনে ফেলে শান্তি, সমৃদ্ধি, অগ্রগতি এবং স্থায়িত্ব অর্জনের জন্য আমাদের প্রচেষ্টা কোনো ফল দেবে না। লিঙ্গ সমতা একটি বিকল্প নয় বরং একটি ন্যায্য ও ন্যায়সম্মত বিশ্ব অর্জনের জন্য অপরিহার্য।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী নিজ দেশের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশ একটি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে জন্মগ্রহণ করেছে, যার ফলে জনগণ ছাড়া আর কোনো সম্পদ ছিল না। আমরা আমাদের সমগ্র মানব সম্পদ পুঁজিকে কাজে লাগানোর এবং একটি সমৃদ্ধ দেশ গঠনে আমাদের সমান অংশীদার হিসেবে নারীদের অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা জাতীয় জীবনের সব ক্ষেত্রে নারীদের সমান অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় আইন ও নীতি গ্রহণ করেছি। সরকার মেয়েদের শিক্ষা ও নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে ব্যাপক বিনিয়োগ করেছে।
মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি ও বিনামূল্যে বই দেওয়ার পাশাপাশি দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত মেয়েদের শিক্ষা অবৈতনিক করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে দেশের নারীদের জন্য গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা উলেস্নখ করে বলেন, বাংলাদেশের প্রাথমিক স্তরের ৬০ শতাংশ স্কুল শিক্ষক মহিলা এবং দেশের তৈরি পোশাক শিল্পে ৪০ লাখেরও বেশি মহিলা কর্মরত রয়েছেন। আমরা নারী উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করতে এবং তাদের অর্থায়নে সহায়তা করার জন্য নির্দিষ্ট নীতিগত পদক্ষেপ নিয়েছি। আমরা নারী উদ্যোক্তাদের জন্য রেয়াতি হারে ঋণ নিশ্চিত করেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার ব্যবসায়িক উদ্যোগে নারীদের প্রচার ও সহায়তার জন্য জয়িতা ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেছে এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানে উচ্চ পদে আসীন হওয়ার ক্ষেত্রে নারীদের জন্য দুয়ার অবারিত করেছে।
সে কারণে বাংলাদেশের নারীরা এখন সর্বোচ্চ আদালতের বিচারক, রাষ্ট্রদূত, বেসামরিক প্রশাসনের উচ্চ পদে আসীন, সশস্ত্র বাহিনী, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ইত্যাদি হচ্ছেন। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সরকারের শীর্ষ থেকে সর্বনিম্ন স্তর পর্যন্ত সকল স্তরে নারীদের প্রতিনিধিত্ব রয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার আইসিটি ও ডিজিটাল পস্ন্যাটফর্মে নারী ও মেয়েদের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করেছে। দেশে থাকা ১২,২৯২টি ইউনিয়ন এবং পৌর ডিজিটাল সেন্টার একজন মহিলা এবং একজন পুরুষ দ্বারা পরিচালিত হয়, পাশাপাশি সরকার নারীদের ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করার প্রশিক্ষণ দিচ্ছে।
তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য হলো প্রযুক্তিগত স্টার্ট আপ এবং ই-কমার্স সেক্টরসহ আইসিটি সেক্টরে লিঙ্গ সমতা অর্জন করা। আমরা জেন্ডার-সংবেদনশীল বাজেট প্রবর্তনকারী প্রথম দেশগুলোর অন্যতম। আমাদের বাজেটের ত্রিশ শতাংশ নারী উন্নয়ন কর্মকান্ডের জন্য বরাদ্দ করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের লিঙ্গ-সমতা ভিত্তিক দুর্যোগ মোকাবিলা পরিকল্পনা বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি অর্জন করেছে। নারী উন্নয়নে আমাদের বিনিয়োগ আমাদের লভ্যাংশ দিয়েছে। আজ জিডিপিতে নারীর অবদান ৩৪ শতাংশে পৌঁছেছে। অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন নারীকে তাদের পরিবার এবং সমাজ উভয় ক্ষেত্রেই সিদ্ধান্ত গ্রহণে আরও বেশি ভূমিকা রাখতে সক্ষম করেছে।
'মহামারি প্রতিরোধে কাঠামো তৈরি করুন'
এদিকে, বুধবার জাতিসংঘ সদর দপ্তরের সম্মেলন কক্ষে মহামারি প্রতিরোধ, প্রস্তুতি ও প্রতিক্রিয়া (পিপিপিআর) বিষয়ে ইউএনজিএ উচ্চ-পর্যায়ের বৈঠকে বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে পাঁচটি প্রস্তাব তুলে ধরে মহামারি প্রতিরোধের অংশ হিসেবে একটি বৈশ্বিক সহযোগিতা কাঠামো গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, কোভিড-১৯ মহামারি আমাদের সবার জন্য একটি টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে হাজির হয়েছে। আমরা সারা বিশ্বে অনেককে হারিয়েছি। আমরা বুঝতে পেরেছি যে মানুষের হস্তক্ষেপের জন্য প্রকৃতির নিজস্ব সীমা রয়েছে। আমরা বিশ্ব সংহতির অভূতপূর্ব অভিজ্ঞতাও পেয়েছি। আমরা স্বীকার করেছি যে সবাই নিরাপদ না হওয়া পর্যন্ত আমরা কেউই নিরাপদ নই। বুধবার জাতিসংঘ সদর দপ্তরের সম্মেলন কক্ষে মহামারি প্রতিরোধ, প্রস্তুতি ও প্রতিক্রিয়া (পিপিপিআর) বিষয়ে ৭৮তম ইউএনজিএ উচ্চ-পর্যায়ের বৈঠকে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
মানুষের উত্তম চর্চা বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব আরোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অতীতের ভুলগুলো এড়িয়ে আমাদের সম্মিলিত শিক্ষা নিতে হবে। সমতা ও সংহতি অবশ্যই আমাদের প্রচেষ্টার সহযোগিতা করবে।
মহামারি প্রতিরোধে প্রধানমন্ত্রীর তুলে ধরা পাঁচটি অগ্রাধিকার হলো- উন্নয়নশীল দেশগুলোতে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার জন্য রেয়াতযোগ্য আন্তর্জাতিক অর্থায়ন, মহামারি নজরদারি, প্রতিরোধ, প্রস্তুতি ও বিজ্ঞান-ভিত্তিক পদ্ধতিতে মোকাবিলার জন্য সম্পদ ও দক্ষতা একত্রিত করা, সবার জন্য ভ্যাকসিনসহ মানসম্পন্ন, সাশ্রয়ী ও কার্যকর মহামারি পণ্যগুলোর ন্যায়সঙ্গত ও অবাধ প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা, প্রযুক্তির প্রাপ্যতা ও বাস্তব জ্ঞানের মাধ্যমে মহামারি পণ্যগুলোর উৎপাদন বৈচিত্র্যকরণ এবং ডবিস্নউএইচও'র নেতৃত্বে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর মধ্যে প্রাপ্যতা ও সুবিধা ভাগ করে নেওয়ার জন্য একটি আন্তর্জাতিক সহযোগিতা কাঠামো তৈরি করা।
শেখ হাসিনা বলেন, এ লক্ষ্যে আমরা একটি মহামারি চুক্তি এবং আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য বিধিমালা (২০০৫) এর সংশোধনী থেকে ন্যায্য এবং সুনির্দিষ্ট ফলাফল দেখার আশা করি। বাংলাদেশ উভয় প্রক্রিয়ার সঙ্গে গঠনমূলকভাবে জড়িত থাকবে।
সভায় ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের (সিভিএফ) থিমেটিক দূত সায়মা ওয়াজেদ উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ কোভিড-১৯ এর প্রভাবের বাইরে ছিল না। তবু আমরা কোভিড-১৯ পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে বৈশ্বিক সূচকে পঞ্চম স্থানে রয়েছি। শুরু থেকেই, আমাদের জীবন বাঁচানো এবং জীবিকা রক্ষার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে হয়েছিল। প্রথম দিকে ডবিস্নউএইচও'র সহায়তায় একটি জাতীয় প্রস্তুতি ও পরিস্থিতি মোকাবিলা পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি আমরা। আমরা গরিবদের জন্য বিনামূল্যে ওষুধ ও পিপিই সরবরাহ এবং আইসিইউ শয্যা সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি করি। শূন্য থেকে ৮৮৫টি কেন্দ্রে পরীক্ষাগার স্থাপন করি। প্রায় সব হাসপাতালে অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করি। কয়েক মাসের মধ্যে প্রায় ১১,০০০ ডাক্তার ও ১৩,০০০ মেডিকেল সাপোর্ট স্টাফ নিয়োগ করি। মৃতু্যর হার ১.৪৬% সীমিত রাখাসহ আমাদের ফ্রন্টলাইন কর্মীরা বিস্ময়করভাবে কাজ করেছেন। সম্পূর্ণ বিনামূল্যে ভ্যাকসিন পরিচালনার জন্য একটি ডেডিকেটেড ডিজিটাল অ্যাপ চালু করি। আমরা কমপক্ষে দ্বিতীয় ডোজ দিয়ে ৯৩% ভ্যাকসিন কভার করেছি। আমি মহামারি ভ্যাকসিনগুলোকে বিশ্বব্যাপী জনসাধারণের পণ্য হিসেবে বিবেচনা করার আহ্বান জানিয়েছি।
তিনি বলেন, সরকার ২৬.৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের একটি প্রণোদনা প্যাকেজ চালু করে। আমরা ৪ কোটিরও বেশি নিম্ন আয়ের মানুষকে সরাসরি খাদ্য সহায়তা দিয়েছি। বাংলাদেশ অন্যান্য বন্ধুত্বপূর্ণ দেশগুলোর পাশাপাশি বিদেশে অবস্থানরত অভিবাসী কর্মীদের দিকেও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।
বিবিএনজে'তে স্বাক্ষর করলেন প্রধানমন্ত্রী
এদিকে, বেশি মাছ ধরা এবং অন্যান্য মানবিক কর্মকান্ডের কারণে ভঙ্গুর সামুদ্রিক পরিবেশের ক্ষতির হাত থেকে বিশ্বের মহাসাগর ও নদীগুলোকে রক্ষায় মেরিন বায়োডাইভারসিটি অব এরিয়াজ বিয়ন্ড ন্যাশনাল জুরিসডিকশন (বিবিএনজে) চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জেনারেল অ্যাসেম্বলি বিল্ডিংয়ের ট্রিটি ইভেন্ট চত্বরের গ্রাউন্ড ফ্লোরে স্থানীয় সময় বুধবার ইউনাইটেড নেশনস কনভেনশন অন দ্য ল অব দ্য সি'র অধীনে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর কর্মসূচি সম্পর্কে ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডক্টর এ কে আব্দুল মোমেন এ কথা জানান। চুক্তিতে সাধারণ ঐতিহ্য হিসেবে বর্ণিত জেনেটিক সম্পদের ব্যবস্থাপনা ও সংরক্ষণের কথা বলা হয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তিনি সিঙ্গাপুরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভিভিয়ান বালাকৃষ্ণান এবং নেদারল্যান্ডের বৈদেশিক বাণিজ্য ও উন্নয়ন সহযোগিতা বিষয়ক মন্ত্রী লিজে শ্রেইনেমাচারের সঙ্গে কয়েকটি দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে যোগদানের পাশাপাশি জলবায়ু গতিশীলতার ওপর সম্মেলন এবং ১৮তম এশিয়া সহযোগিতা সংলাপসহ বেশ কয়েকটি উচ্চ পর্যায়ের ইভেন্টে অংশ নিয়েছেন।
মোমেন বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় বাংলাদেশ বাকি দেশগুলোর জন্য রোল মডেল হয়ে উঠেছে। ধনী দেশগুলো মূলত কার্বন নির্গমনের জন্য দায়ী। এক্ষেত্রে উন্নয়নশীল দেশগুলোর অবদান মাত্র ০.৪৭ শতাংশ। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ধনী দেশগুলোকে প্রতি বছর জলবায়ু তহবিলে ১০০ বিলিয়ন ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রম্নতি মেনে চলার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, দুর্ভাগ্যবশত ধনী দেশগুলো তাদের প্রতিশ্রম্নতি পালন করে না। তাদের প্রতিশ্রম্নতি রক্ষা করা উচিত।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে জলবায়ু তহবিল থেকে নামমাত্র অর্থ পেয়েছে। প্রতিশ্রম্নতি মেনে চলার জন্য ধনী দেশগুলোর রাজনৈতিক অঙ্গীকার দরকার।
এ সময় অন্যদের মধ্যে ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের (সিভিএফ) বিষয়ভিত্তিক রাষ্ট্রদূত সায়মা ওয়াজেদ উপস্থিত ছিলেন।