খালেদা জিয়াকে নিয়ে বিএনপির দুশ্চিন্তা বাড়ছে

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে দল ও পরিবারে হতাশা

প্রকাশ | ০১ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০ | আপডেট: ০১ অক্টোবর ২০২৩, ০০:৩৭

যাযাদি রিপোর্ট
একদিকে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক জটিলতা বাড়ছে। অন্যদিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। বিদেশে পাঠানোর ইসু্যতে প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ বক্তব্য দলটির নেতাকর্মীদের আরও হতাশ করেছে। সবমিলে দলীয় প্রধানকে নিয়ে দুঃশ্চিন্তা বাড়ছে বিএনপিতে। শনিবার খালেদা জিয়ার সর্বশেষ শারীরিক অবস্থার খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। লিভারের সমস্যা জটিল হওয়ায় তাঁর কিডনি, হার্ট ও ফুসফুসের সমস্যা বেড়েছে। ফলে কিছুদিন পরপর তার পেটে পানি জমছে এবং সেগুলো অপসারণ করতে হচ্ছে। বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম বলেন, দুই বছর আগেই মেডিকেল বোর্ড বিদেশে মাল্টি ডিসিপিস্ননারি সেন্টারে নিয়ে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার সুপারিশ করেছিলেন। কিন্তু সেটা হচ্ছে বলেই তাঁর অবস্থান দিনদিন খারাপের দিকে যাচ্ছে, শারীরিক জটিলতা বাড়ছে। বাংলাদেশে প্রকৃতপক্ষে তাঁর মূল চিকিৎসার আর কিছু নেই। রফিকুল ইসলাম বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসন মেডিকেল বোর্ডের নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছেন। কিন্তু বোর্ডের সুপারিশ অনুযায়ী দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসা না হওয়াতে মূল সমস্যাগুলো আরও জটিল আকার ধারণ করেছে। এদিকে খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসা করাতে তাঁর ভাইয়ের আবেদনের জবাব আজ রোববার আইন মন্ত্রণালয় দিতে পারে। তবে এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী েেশখ হাসিনার বক্তব্যের জবাবের পর বিএনপির কাছে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট বলে মন্তব্য করেছেন দলের কয়েকজন নেতা। যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম ভয়েস অব আমেরিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে হলে এখন যে সাজা স্থগিত করে তাকে বাসায় থাকার অনুমতি দিয়েছি, তা প্রত্যাহার করে নিতে হবে। আবার তাকে জেলে যেতে হবে, আদালতে যেতে হবে। আদালতের কাছ থেকে তাকে অনুমতি নিতে হবে। এছাড়া দুর্নীতি মামলায় বিএনপি প্রধানের সাজা হওয়ার বিষয়েও কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। এই বক্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে শনিবার বিকালে 'শ্রমিক-কর্মচারি কনভেনশনে' বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, 'শুধমাত্র রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় খালেদা জিয়াকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী মিথ্যাচার করেছেন।' ভয়েস অব আমেরিকার সঙ্গে সাক্ষাতকারে শেখ হাসিনা সম্পূর্ণ মিথ্যাচার করেছেন। মির্জা ফখরুল বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে কোনো দুর্নীতির মামলা নেই। যে টাকা তারা বলে ২ কোটি ৩৩ লক্ষ টাকা সেই টাকা এখন ৮ কোটির ওপরে চলে গেছে, ব্যাংকে জমা আছে। শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে বেগম খালেদা জিয়া যাতে রাজনীতি করতে না পারেন তাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে আটক করে রাখা হয়েছে। এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার সংকটজনক অবস্থার জন্য সরকারকে দায়ী করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'এই সরকার তাকে অন্যায়ভাবে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে আটক করে রেখে তাকে চিকিৎসার সুযোগ না দিয়ে মৃতু্যর দিকে ঠেলে দিচ্ছে।' প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, 'এই প্রত্যাখ্যানের মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে চিকিৎসা না দেওয়ার দায়িত্ব নিজের হাতে নিয়েছেন। শেখ হাসিনা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তা তাকে তার পরিণতির দিকে নিয়ে যাবে। ' একই বিষয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, খালেদা জিয়াকে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করছে সরকার। তাকে মুক্ত করতে হলে রাস্তায় গিয়ে দাঁড়াতে হবে। এছাড়া শ্রমিক দল ও সম্মিলিত শ্রমিক পরিষদের (এসএসপি ) উদ্যোগে জাতীয় শ্রমিক-কর্মচারী কনভেনশনে এ সময়ে প্রায় প্রত্যেক নেতা বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও চিকিৎসা নিয়ে বক্তব্য রাখেন। তারা বলেন, সরকার রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে খালেদা জিয়াকে মৃতু্যর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। তার উপর অত্যাচার করা হচ্ছে। সরকারের অবহেলায় আর প্রতিহিংসায় যদি তার কিছু ঘটে যায় তাহলে সহজে ছেড়ে দেওয়া হবে না। সরকারকে উৎখাতের কর্মসূচি দেওয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তারা। প্রসঙ্গত, নানা জটিলতায় আক্রান্ত খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় শুক্রবার সকালে তাকে সিসিইউতে নেওয়া হয়েছিল। অবশ্য অবস্থার উন্নতি হওয়ায় ওইদিন রাত ৮টার পর তাকে কেবিনে নিয়ে যাওয়া হয়।