অপরাধের কৌশল পরিবর্তন ব্যবহার করছে নম্বরবিহীন মোটর সাইকেল

ফের আলোচনায় কিশোর গ্যাং

প্রকাশ | ০৩ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০

গাফফার খান চৌধুরী
ফের আলোচনায় এসেছে কিশোর গ্যাং। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গ্যাংগুলো তাদের অস্তিত্ব জানান দেওয়ার চেষ্টা করছে। তারা অপরাধের কৌশল পরিবর্তন করেছে। ঢাকার যেসব এলাকায় মাদকের আখড়া, ওইসব এলাকায় কিশোর গ্যাংগুলোর তৎপরতা তুলনামূলক অনেক বেশি। গ্যাংগুলো অপরাধ সংঘটিত করতে ব্যবহার করছে সস্তা পুরনো ও নম্বরবিহীন মোটর সাইকেল। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের প্রথম থেকেই কিশোর গ্যাংগুলো যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণের মধ্যে ছিল। যদিও কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা মাদকের টাকা যোগাড় করতে ছিনতাইয়ের মতো অপরাধ করে আসছিল। তবে তা বিচ্ছিন্ন। দলবদ্ধভাবে অপরাধ করার ঘটনা ছিল না বললেই চলে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ফের কিশোর গ্যাংগুলোর তৎপরতা চোখে পড়ছে। স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তি বা দল কিশোর গ্যাংগুলোকে নতুনভাবে সক্রিয় করার চেষ্টা করছে। মূলত এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করতেই কিশোর গ্যাংগুলোকে ব্যবহার করছে তারা। গ্যাংগুলোর পেছনে অর্থ খরচ করছে এক শ্রেণির অসাধু রাজনীতিবিদ ও স্থানীয় প্রভাবশালীরা। সূত্রটি বলছে, কিশোর গ্যাংয়ের মধ্যেও তাদের শক্তিমত্তা জাহির করতে এক ধরনের অসুস্থ প্রতিযোগিতা চলছে। নিজেদের শক্তিমত্তার জানান দিতে তারা নানা ধরনের অপরাধ সংঘটিত করছে। তারই ধারাবাহিকতায় গত ২৯ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যার পর অন্তত ৫টি কিশোর গ্যাংয়ের কমপক্ষে ৪০ সদস্য মোহাম্মদপুরের চন্দ্রিমা হাউজিং, তুরাগ নদের পাশ ঘেঁষে গড়ে তোলা ওয়াকওয়েতে গণহারে ছিনতাই করে। যারাই ছিনতাইয়ে বাধা দিয়েছে, তাদের অনেককেই কুপিয়ে জখম করেছে। অন্তত ২০টি দোকান ভাঙচুরসহ মালামাল লুট করে নিয়ে গেছে। সোমবার বিষয়টি সম্পর্কে ডিএমপির নবনিযুক্ত কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেন, বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। ওই ঘটনায় মোহাম্মদপুর থানায় মামলা হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শুধু কিশোর গ্যাং নয়, সব ধরনের অপরাধীদের গ্রেপ্তারেই ডিএমপির প্রত্যেক থানাকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কিশোর গ্যাংয়ের মূল উদ্দেশ্য ছিল এলাকায় তাদের আধিপত্য বিস্তার, শক্তিমত্তা ও অবস্থান জানান দেওয়া। এজন্য তারা ছিনতাই ও দোকানপাট ভাঙচুর করে মালামাল লুটে নিয়েছে। অপরাধ করার আগে ও পরে গ্যাং সদস্যরা রীতিমতো পুরো এলাকায় অস্ত্র হাতে মহড়া দিয়েছে। এ ধরনের অপরাধ সংঘটিত করার সময় তারা ব্যবহার করেছে সস্তা ও পুরনো এবং নম্বরবিহীন মোটর সাইকেল। সূত্রটি বলছে, ওইসব মোটর সাইকেলগুলোর কোনো বৈধ কাগজপত্র নেই। মোটর সাইকেলগুলোর পেছনে লাগানো নম্বর ভুয়া। যাতে করে কোনো পরিস্থিতিতে পড়লে বা অপরাধ করার সময় তারা অনায়াসে মোটর সাইকেল ফেলেই পালিয়ে যেতে পারে। আর সেই মোটর সাইকেলের সূত্র ধরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের সহজেই যেন শনাক্ত বা গ্রেপ্তার করতে না পারে। এমন কৌশলের অংশ হিসেবেই তারা অপরাধ সংঘটিত করতে বেআইনি যানবাহন ব্যবহার করছে। গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, খোদ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে আবারও কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাতের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখার নির্দেশনা এসেছে।র্ যাবসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হওয়া তিন শতাধিক কিশোর গ্যাং সদস্যদের মধ্যে দুই শতাধিক সদস্য জামিনে মুক্ত হয়েছে। গ্যাং সদস্যরা মাদকাসক্ত। তারা জামিনে মুক্ত হয়ে কিছুদিন আড়ালে থাকলেও সম্প্রতি আবার তারা সামনে চলে এসেছে। জামিনে মুক্তদের অধিকাংশ সদস্যই মাদকের টাকা জোগাড় করতে ছিনতাই, চুরি, ছোঁ মেরে মোবাইল ফোন ও হাত ব্যাগ ছিনিয়ে নিচ্ছে। ঢাকায় সবচেয়ে বেশি কিশোর গ্যাং রয়েছে মোহাম্মদপুর এলাকায়। যেজন্য এলাকাটিতে ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ছোঁ পার্টির তৎপরতা বেশি। কিশোর গ্যাংগুলো পরিবহণ ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায় করছে। মোহাম্মদপুরে টোয়েন্টি ফাইভ, লাড়া দে, লেভেল হাই, দেখে ল-চিনে ল, কোপাইয়া দে, ফিলিম ঝিরঝির, ভাইভ্যা ল ছাড়াও নামে বেনামে অনেক কিছু গ্যাং সক্রিয় রয়েছে। র্ যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন যায়যায়দিনকে বলেন, সম্প্রতি ঢাকায় কিশোর গ্যাংয়ের তৎপরতা চোখে পড়ছে। গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি অভিযান অব্যাহত আছে।