বাংলাদেশ ব্যাংকের দাবি

সোনা নিয়ে গÐগোল ইংরেজি-বাংলায় লেখার ভুলে

প্রকাশ | ১৮ জুলাই ২০১৮, ০০:০০

যাযাদি রিপোট
র্ কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা রাখা সোনায় অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক কতৃর্পক্ষ। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিবার্হী পরিচালক রবিউল হোসেন এবং ভল্টের দায়িত্বে থাকা কারেন্সি অফিসার আওলাদ হোসেন চৌধুরী বলেছেন, ভল্টে রক্ষিত সোনায় কোনো ধরনের হেরফের হয়নি। জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে নথিভুক্ত করার সময় স্বণর্কারের লেখার ভুলে। শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর যেভাবে ভল্টে সোনা রেখেছিল, তা সেভাবেই রয়েছে বলে মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই দুই কমর্কতার্। আওলাদ বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের ত্রæটি বলতে যা আছে, নথিভুক্ত করার সময় ইংরেজি-বাংলার ভুল। এর বাইরে অন্য ত্রæটি বাংলাদেশ ব্যাংকের নেই।’ একটি জাতীয় দৈনিকে ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে ভুতুড়ে কাÐ’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশের পর এই সংবাদ সম্মেলন ডাকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের এক অনুসন্ধানের তথ্যের ভিত্তিতে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে রক্ষিত শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের ৯৬৩ কেজি সোনা পরীক্ষা করে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অনিয়ম ধরা পড়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা রাখা ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম ওজনের সোনার চাকতি ও আংটির জায়গায় এখন আছে মিশ্র বা সংকর ধাতু। ২২ ক্যারেট সোনা হয়ে গেছে ১৮ ক্যারেট। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকষর্ণ করলে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সহিদুল ইসলাম বলেন, ‘এক বছরের বেশি সময় অনুসন্ধান করে তারা ওই অনিয়ম পেয়েছেন। ‘বাংলাদেশ ব্যাংক যেহেতু একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, তারা বিষয়টি অনুসন্ধান করে জড়িতদের খুঁজে বের করে শাস্তি নিশ্চিত করবেন বলে আশা করছি।’ কিন্তু অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংবাদ সম্মেলনে আওলাদ বলেন, ২২ ক্যারেটের জায়গায় ১৮ ক্যারেট হওয়ার বিষয়টি দুটি ভিন্ন যন্ত্রে পরিমাপের কারণে হয়েছে। ‘শুল্ক গোয়েন্দারা যখন সোনা জমা রাখেন, তখন হয়তো তাদের মেশিনে ২২ ক্যারেট দেখিয়েছিল, কিন্তু আমাদের মেশিনে সেটি ১৮ ক্যারেটই হয়েছিল।’ চিঠি দিয়ে বিষয়টি শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগকে অবহিত করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা বলেছিলাম, আণবিক শক্তি কমিশনের মেশিন দিয়ে ওই সোনা মাপা হোক। তখন তারা রাজি না হয়ে বিষয়টি মেনে নিয়েছিলেন। ‘শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তর এবং এনবিআর যখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে এ বিষয়ে জানতে চেয়েছিল, তখন সাবির্ক বিষয়টি তাদের কাছে স্পষ্ট করা হয়েছে। সবের্শষ ১১ জুলাই এনবিআর চেয়ারম্যানকে অবহিত করা হয়েছে।’ শুল্ক গোয়েন্দাদের অনুসন্ধানের ভিত্তিতে প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৫ সালের ২৩ আগস্ট কাস্টম হাউসের গুদাম কমর্কতার্ হারুনুর রশিদ গোলাকার কালো প্রলেপযুক্ত একটি সোনার চাকতি এবং একটি কালো প্রলেপযুক্ত সোনার রিং বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দেন। ‘বাংলাদেশ ব্যাংক তখন ওই চাকতি এবং আংটি যথাযথ ব্যক্তি দিয়ে পরীক্ষা করে ৮০ শতাংশ (১৯ দশমিক ২ ক্যারেট) বিশুদ্ধ সোনা হিসেবে গ্রহণ করে প্রত্যয়নপত্র দেয়। ‘কিন্তু দুই বছর পর শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের পরিদশর্ন দল ওই চাকতি ও আংটি পরীক্ষা করে তাতে ৪৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ (১১ দশমিক ২ ক্যারেট) সোনা পায়। আংটিতে পায় ১৫ দশমিক ১২ শতাংশ সোনা (৩ দশমিক ৬৩ ক্যারেট)। ধারণা করা হচ্ছে ভল্টে রাখার পর এগুলো পাল্টে ফেলা হয়েছে। ‘প্রতিবেদন বলছে, ভল্টে থাকা সোনার চাকতি এবং আংটি পরীক্ষার পর দেখা গেল এগুলো সোনার নয়, অন্য ধাতুর মিশ্রনে তৈরি। এতে সরকারের ১ কোটি ১১ লাখ ৮৭ হাজার ৮৬ টাকা ৫০ পয়সা ক্ষতি হয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়।’ এর জবাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংবাদ সম্মেলনে আওলাদ হোসেন বলেন, শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের দেয়া সোনা জমা রাখার সময় খঁাটি সোনা ৪০ শতাংশই ছিল। ‘কিন্তু ইংরেজি-বাংলার হেরফেরে সেটা ৮০ শতাংশ লিখে ভুলবশত নথিভুক্ত করা হয়েছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের তালিকাভুক্ত শখ জুয়েলাসের্র স্বণর্কার এই ভুলটি করেছিলেন।’ নিবার্হী পরিচালক রবিউল বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভল্টে ছয় স্তরের কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে। এমনকি গভনর্র ও ডেপুটি গভনর্রকেও সেখানে প্রবেশ করতে অনুমতি নিতে হয়। ইচ্ছাকৃতভাবে কেউ কোনোভাবে এখানে প্রবেশ করতে পারে না। ‘নথিভুক্ত করার সময় ইংরেজি-বাংলার ত্রæটি ছাড়া কোনো ধরনের ভুল বাংলাদেশ ব্যাংকের নাই।’