কাল ঢাবিতে শিক্ষকদের সংহতি সমাবেশ

কোটা: ঢাবি শিক্ষকরাও দুষলেন ছাত্রলীগকে

প্রকাশ | ১৮ জুলাই ২০১৮, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের একাংশের সংবাদ সম্মেলন
ঢাবি প্রতিনিধি ছাত্রলীগ নেতারা অস্বীকার এবং আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এড়িয়ে গেলেও শিক্ষক-শিক্ষাথীর্র ওপর চড়াও হওয়ার জন্য সরকার সমথর্ক সংগঠনটিকেই দুষলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষক। ‘নিপীড়নবিরোধী শিক্ষকবৃন্দ’ ব্যানারে মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলন থেকে গত রোববার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে কমর্সূচিতে হামলার জন্য ছাত্রলীগকে দায়ী করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আব্দুর রাজ্জাক খান বলেন, ‘মন্ত্রী বলুক আর যেই বলুক বা তাদের জেনারেল সেক্রেটারি (জাকির) বলুক, আমি নিদ্বির্ধায় বলতে চাই, এরা ছাত্রলীগের কমীর্, এরা গুÐাবাহিনীতে রূপান্তরিত হয়েছে।’ সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের ওপর গত কিছু দিনে কয়েক দফা হামলার জন্য ছাত্রলীগকেই দায়ী করে আসছিলেন আন্দোলনকারীরা। আন্দোলনকারী শিক্ষাথীের্দর মুক্তির দাবিতে গত রোববার শহীদ মিনারে মানববন্ধনে শিক্ষকদের ওপর চড়াও হন ছাত্রলীগের একদল নেতা-কমীর্; পরে তারা মারধর করেন দুজন শিক্ষাথীের্কও। ছাত্রলীগের বিদায়ী কমিটির সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন দাবি করেছেন, আন্দোলনকারীদের অভ্যন্তরীণ বিভেদ থেকে সংঘাত হচ্ছে। তাতে ছাত্রলীগের কেউ জড়িত থাকলেও এতে সংগঠনের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। সাংবাদিকদের প্রশ্নে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের রোববার বলেন, ছাত্রলীগের কোনো কমিটি এখন না থাকায় সংগঠনটির নামে কেউ কিছু করছে কিনা, তা তার জানা নেই। এদিকে ‘ছাত্রলীগের হামলার’ প্রতিবাদে ‘নিপীড়নবিরোধী শিক্ষাথীর্বৃন্দ’ ব্যানারে শিক্ষাথীের্দর কমর্সূচির পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের শিক্ষক লাউঞ্জে নিপীড়নবিরোধী শিক্ষকবৃন্দ ব্যানারে সংবাদ সম্মেলনে আসেন একদল শিক্ষক। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. ফাহমিদুল হক, সহযোগী অধ্যাপক রাজ্জাক খান, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. সামিনা লুৎফা, অথর্নীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. রুশাদ ফরিদী, আন্তজাির্তক সম্পকর্ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. তানজিম উদ্দীন খান, সহযোগী অধ্যাপক আব্দুল মান্নান, ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মুনাসির কামালসহ আরও কয়েকজন। ড. রাজ্জাক ছাত্রলীগের সমালোচনা করে আরও বলেন, ‘ছাত্রলীগ তাদের ইতিহাস জানে না, তাদের ঐতিহ্য জানে না। তোফায়েল সাহেব (বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ) আর রাজ্জাক সাহেবের (প্রয়াত মন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক) ছাত্রলীগ আর এই ছাত্রলীগ আপনি মেলাবেন? ‘এটা সিম্পলি গুÐাবাহিনী। যাদের শিক্ষকদের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ নেই, তারা কোথায় পড়েছে, আমি জানি না। এই ধরনের আচরণ আমি আমার ২০ বছরের শিক্ষক জীবন ও সাংবাদিকতা জীবনে দেখি নাই।’ শিক্ষাথীের্দর ওপর একের পর এক হামলার পরও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কোনো পদক্ষেপ না দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এই শিক্ষক। তিনি জানান, অপরিচিত ফোন নম্বর থেকে তাকে হুমকি-ধমকি দেয়া হচ্ছে, এজন্য তিনি থানায় জিডি করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে ড. সামিনা লুৎফা প্রশাসনের সমালোচনা করে বলেন, আন্দোলনে যুক্তদের ‘বাম ঘরানার শিবির’, ‘জঙ্গির মতো’, ‘জামাত-শিবির’ ইত্যাদি অভিধায় ভূষিত করা হচ্ছে। সবচেয়ে আশ্চযর্জনক ব্যাপার, যারা নিপীড়ক তাদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপই গ্রহণ করা হচ্ছে না। কেবল যারা নিপীড়িত, তাদের বিরুদ্ধেই পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে, বক্তব্য প্রদান করা হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দিক থেকে।’ শহীদ মিনারের ঘটনা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘সেই সমাবেশস্থলে প্রক্টরিয়াল বডির কেউ উপস্থিত ছিলেন না, পুলিশ বাহিনীর কেউ ছিলেন না, এভাবে নিপীড়নের জন্য একটি ক্ষেত্র প্রস্তুত করে দেয়া হয়েছিল। অনেক পরে প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা আসেন, তাও ঘটনাস্থলের শিক্ষকরা ডাকার পর। ‘প্রক্টর পুরো ঘটনার জন্য একরকম শিক্ষকদেরই দায়ী করেন। নিপীড়ক ছাত্রদের সাথে শিক্ষকদের একইভাবে জড়িয়ে প্রেসকে দেয়া প্রক্টরের বক্তব্য একই সাথে স্পধার্মূলক এবং তার বক্তব্যে আমরা বিক্ষুব্ধ।’ সংবাদ সম্মেলন থেকে এই শিক্ষকরা চারটি কমর্সূচি ঘোষণা করেন। তা হলো- ১৯ জুলাই সকাল ১১টায় অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে শিক্ষকদের সংহতি সমাবেশ, ২৩ জুলাই কলাভবনের সামনে বটতলায় নিপীড়নবিরোধী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শিক্ষক লাঞ্ছনার পরিপ্রেক্ষিতে পদক্ষেপ নিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির কাছে পত্র প্রেরণ, নিপীড়নের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আচাযের্র কাছে স্মারকলিপি প্রদান। পদাথির্বজ্ঞান বিভাগের মানববন্ধন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে শিক্ষক-শিক্ষাথীের্দর ওপর সম্প্রতি একের পর এক হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পদাথির্বজ্ঞান বিভাগের শিক্ষাথীর্রা। তারা জানান, যতক্ষণ পযর্ন্ত বিশ্ববিদ্যালয় কতৃর্পক্ষ ক্যাম্পাসে তাদের নিরাপত্তা না দেবে ততক্ষণ পযর্ন্ত ক্লাস ও পরীক্ষা বজর্ন কমর্সূচি অব্যাহত থাকবে। মঙ্গলবার বেলা ১২টার দিকে বিজ্ঞান গ্রন্থাগারের প্রবেশমুখে কালো ব্যানার নিয়ে এ মানববন্ধনে অংশ নেন বিভাগের অন্তত দুই শতাধিক শিক্ষাথীর্। ‘এমন ক্যাম্পাসই কি আমরা চেয়েছিলাম?’, ‘ক্যাম্পাস অনিরাপদ কেন?’, ‘আমাদের ক্যাম্পাসে আমরা কেন আক্রান্ত?’ লেখা প্ল্যাকাডর্ হাতে শিক্ষাথীর্রা মানববন্ধনে অংশ নেন। শিক্ষাথীর্রা বলেন, ‘আমাদের ক্যাম্পাসে আমরাই আজ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। আমাদের শিক্ষদের ওপর এভাবে হামলা করা হচ্ছে, আমাদের ওপর হামলা করা হচ্ছে, কিন্তু প্রশাসন চুপ করে বসে আছে। আমরা আমাদের ক্যাম্পাসে নিরাপদে থাকতে চাই। নিভের্য় ক্লাসে আসতে চাই।’ তারা আরও বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে যেসব অন্যায়-অত্যাচার হচ্ছে তার বিচার দাবির অধিকার আমাদের রয়েছে। কিন্তু সেই স্বাধীনতায় কেউ হস্তক্ষেপ করতে পারে না।’ পদাথির্বজ্ঞান বিভাগের শিক্ষাথীর্ সাডিড বলেন, ‘গত ২ জুন আমাদের বিভাগের প্রথম বষের্র শিক্ষাথীর্ মিঠুকে শাহবাগ ওভারব্রিজের ওপর থেকে ধরে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়েরই কিছু সন্ত্রাসী পাবলিক লাইব্রেরির মধ্যে নিয়ে মারে। সে এখনো অসুস্থ। তার চিকিৎসার দায়ভার বিশ্ববিদ্যালয় বহন করছে না।’ অন্য শিক্ষাথীর্ আব্দুর রহমান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়েরই ছাত্র হয়ে যারা অন্য ছাত্র ও শিক্ষকদের ওপর হামলা চালায় তারা যে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাথীর্ তা বলতে লজ্জা লাগে। তারা অন্তত শিক্ষাথীর্ নয়, তারা সন্ত্রাসী।’ এ সময় শিক্ষাথীর্রা কোটা সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত আটক শিক্ষাথীের্দর দ্রæত মুক্তির দাবি জানান। ঢাবির উপাচাযর্ বরাবর স্মারকলিপি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানির পদত্যাগের দাবিতে উপাচাযর্ বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন নিপীড়নবিরোধী শিক্ষাথীর্রা। মঙ্গলবার তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশ থেকে মিছিল নিয়ে উপাচাযের্র কাযার্লয়ে যান। সেখানে তারা উপাচাযের্ক স্মারকলিপি পড়ে শুনিয়ে প্রক্টরের পদত্যাগ এবং ১৪ জন ছাত্রলীগ নেতার নাম ও ছবি চিহ্নিত করে তাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের দাবি জানান। নিপীড়নবিরোধী শিক্ষাথীের্দর পক্ষ থেকে স্মারকলিপি পড়ে শোনান রেজা আবু রায়হান। এতে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক পরিবেশকে ধ্বংস করে এবং কোটা সংস্কার আন্দোলনে আটক ছাত্রদের মুক্তির দাবিতে লাগাতার প্রতিবাদের ধারাবাহিকতায় গত ১৫ জুলাই শহীদ মিনারে শান্তিপূণর্ মানববন্ধন করা হলে সেখানে শিক্ষকদের লাঞ্ছিত ও ছাত্রছাত্রীদের ওপর হামলা চালায় চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা। বারবার হামলা ও নিপীড়নে অংশ নেয়া এসব সন্ত্রাসীর ছবি ও ফুটেজ গণমাধ্যমে আসলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এতে শিক্ষাথীের্দর মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও হতাশা কাজ করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা প্রক্টর ও প্রক্টরিয়াল টিমের অব্যাহত ব্যথর্তায় তাদের প্রতি আর বিন্দুমাত্র আস্থা রাখতে পারছেন না শিক্ষাথীর্রা। তাই তারা অবিলম্বে প্রক্টরের পদত্যাগের দাবি জানিয়েছেন। ঢাবির ভিসি অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান স্মারকলিপি গ্রহণ করে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত কমিটি এবং নিয়মনীতি অনুসরণ করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ কত সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা নেয়া হবে শিক্ষাথীর্রা এমন প্রশ্ন করলে উপাচাযর্ এ বিষয়ে কোনো জবাব না দিয়ে লাউঞ্জ থেকে বেরিয়ে যান। এ সময় ভিসির সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. গোলাম রাব্বানি ও প্রোভিসি (প্রশাসন) অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ। তারিকুল একদিনের রিমান্ডে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় পুলিশের কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগে করা মামলায় তারিকুল ইসলাম তারেক (২২) নামের ছাত্রের এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। মঙ্গলবার দুপুরে শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম কায়সারুল ইসলাম এ আদেশ দেন। ১০ জুলাই তারিকুলের রিমান্ড শুনানির দিন ধাযর্ ছিল। সেই দিন তারিকুল ইসলাম আদালতের অনুমতি নিয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছেন জানিয়ে রিমান্ড শুনানি পেছানোর আবেদন করলে নতুন দিন ধাযর্ করেন।