কর্ণফুলীর পর যমুনা নদীতে টানেল নির্মাণের উদ্যোগ

প্রকাশ | ১৪ মার্চ ২০১৯, ০০:০০

জাহাঙ্গীর আলম
একটি টেনেলের ভেতরের দৃশ্য
চট্টগ্রামের কর্ণফুলী ট্যানেল (পাতাল পথ) নির্মাণ কাজ অনেকটা দৃশ্যমান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি এর নির্মাণ কাজ উদ্বোধনও করেছেন। সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এবারে যমুনা নদীতে ট্যানেল নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সিদ্ধান্ত হয়েছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় থেকে একটি ফিজিবিলিটি স্টাডি (সম্ভাব্যতা সমীক্ষা) করা হবে। এ জন্য গাইবান্ধার বালাশীঘাট ও জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ ঘাটকে প্রাথমিকভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে। এ প্রকল্প অনুমোদনের জন্য 'যমুনা নদীর তলদেশে ট্যানেল নির্মাণে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা পরিচালনা' শীর্ষক একটি প্রকল্প প্রস্তাব পাঠিয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। সূত্র জানায়, যমুনা নদী খুবই প্রশস্ত। বর্ষাকালে এ নদী ৮ দশমিক ১৩ কিলোমিটার প্রস্থ হয়। এ নদী পলি পরিবহনে বিশ্বে দ্বিতীয়। আর পানি প্রবাহে পঞ্চম। তাই পলি জমার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে যমুনা নদীতে সেতুর পরিবর্তে ট্যানেল নির্মাণ সুবিধাজনক মনে করছে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। তা আমলে নিয়ে গাইবান্ধা জেলার বালাশীঘাট এবং জামালপুর জেলার দেওয়ানগঞ্জ ঘাটকে প্রাথমিকভাবে বিবেচনা করা হয়েছে। তবে সম্ভাব্যতা সমীক্ষার মাধ্যমে প্রস্তাবিত ট্যানেলের প্রকৃত অবস্থান নিশ্চিত হওয়া যাবে বলে সূত্র জানায়। সূত্র আরও জানায়, নিজস্ব অর্থে যমুনা নদীতে ট্যানেল নির্মাণ অত্যন্ত ব্যয়বহুল। তাই প্রধানমন্ত্রী ২০১৪ সালের মে মাসে জাপান সফরকালে যমুনা নদীর তলদেশে ট্যানেলসহ বিভিন্ন অগ্রাধিকারমূলক প্রকল্পে জাপান সরকারের ঋণের ব্যাপারে যৌথ ইশতেহার সই করা হয়। সেই আলোকে তিন মাস পরে জাপান সরকারের কাছে অর্থায়নের জন্য প্রাথমিক উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব-পিডিপিপি জমা দেয়া হয়। এ প্রকল্পের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা শেষ করতে জাইকা মতামতও দেয়। কিন্তু কাজটি বাস্তবায়নে বিশ্বব্যাংক, আইডিবি ও জাইকার কারিগরি সহায়তা চাওয়া হলেও কোনো সাড়া দেয়নি। বাধ্য হয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্প বাস্তবায়ন করার সিদ্ধান্ত হয়। ২০১৬ সালের ১৮ এপ্রিলে মুখ্য সচিবের ডিও পত্রের মাধ্যমে জানানো হয় রেলপথ রাখার কারণে ব্যয় বেড়ে গেলে শুধু সড়ক পথ নির্মাণ যৌক্তিক হবে। একই সঙ্গে যমুনা নদীতে ট্যানেল নির্মাণের প্রয়োজনীয় সমীক্ষা শেষ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যও বলা হয়। এর পরই নড়েচড়ে বসে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। সম্ভাব্যতা যাচাই করতে সেতু বিভাগ একটি প্রকল্প তৈরি করে। ২০১৭ ও ২০১৮ সালের মধ্যে কাজটি শেষ করতে ব্যয় ধরা হয় ১৩২ কোটি টাকা। এর অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে প্রস্তাব পাঠানো হলে ২০১৭ সালের ২৭ মার্চ প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি-পিইসি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সিদ্ধান্ত হয় পূর্ণাঙ্গ ফিজিবিলিটি স্টাডি করার আগে নূ্যনতম ব্যয়ে একটি প্রি-ফিজিবিলিটি স্টাডি করতে হবে। এতে বাংলাদেশ নৌ-বাহিনী, জিওলজিক্যাল সার্ভে অব বাংলাদেশ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বুয়েটের সংশ্লিষ্ট বিভাগের বিশেষজ্ঞদের সম্পৃক্ত করা হবে। সেই সিদ্ধান্ত মোতাবেক সেতু বিভাগ থেকে ১৮ কোটি ২২ লাখ টাকা ব্যয়ের একটি প্রস্তাব পাঠায় পরিকল্পনা কমিশনে, তা যাচাই-বাচাই করতে ২০১৭ সালের ২২ অক্টোবর আবারো পিইসি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে তিন দশমিক চার কিলোমিটার দীর্ঘ স্বপ্নের ট্যানেল নির্মাণের কাজ গত ২৮ ফেব্রম্নয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেন। নয় হাজার ৮৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটির নির্মাণ কাজ শেষ হবে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে।