কোটা সংস্কার আন্দোলন কি অবৈধ?

ঢাবি শিক্ষাথীের্দর প্রশ্ন

প্রকাশ | ১৯ জুলাই ২০১৮, ০০:০০

যাযাদি রিপোটর্
কোটা সংস্কারের জন্য আন্দোলন কোনো অবৈধ আন্দোলন কি না, জানতে চায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাথীর্রা। বুধবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গ্রেপ্তার শিক্ষাথীের্দর মুক্তি, শিক্ষকদের ওপর হামলাকারী ছাত্রলীগ কমীের্দর শাস্তি ও নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে মানববন্ধন কমর্সূচি পালন করেছেন তারা। শিক্ষাথীর্রা বলেন, তাদের দাবি আদায় না হওয়া পযর্ন্ত তারা কমর্সূচি চালিয়ে যাবেন। মানববন্ধনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের কয়েকশ শিক্ষাথীর্ অংশ নেন। দুদিন আগে যে জায়গায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-ছাত্রদের ওপর ছাত্রলীগের নেতাকমীর্রা হামলা চালিয়েছিল, গতকাল সকাল সোয়া ১১টায় ঠিক সেই জায়গায় প্রথমে মানববন্ধন ও পরে অবস্থান কমর্সূচি পালন করেন শিক্ষাথীর্রা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অথর্নীতি বিভাগের শিক্ষক রুশাদ ফরিদী ভয়ভীতি উপেক্ষা করে কমর্সূচি পালন করায় শিক্ষাথীের্দর অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, ‘কোটা সংস্কার নিয়ে যে আন্দোলন চলছে, তার সমাপ্তির মধ্য দিয়েই ছাত্র আন্দোলনের সমাপ্তি হওয়া ঠিক হবে না। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো কোনো ছাত্রসংগঠন কেন এত বেপরোয়া হয়ে উঠেছে, কারা এই ছাত্রদের ব্যবহার করছে, সেসব খুঁজে বের করে ব্যবস্থা নিতে হবে। কাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে ছাত্রলীগ এখন একটি ছায়া প্রশাসন চালাচ্ছে, সেটাও খুঁজে বের করা উচিত।’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষাথীর্ নাহিদ ইসলাম মানববন্ধনে অংশ নিয়ে বলেন, ‘আমরা জানতে চাই, কোটা সংস্কারের জন্য আন্দোলন কি কোনো অবৈধ আন্দোলন? যদি অবৈধ না হয়, তাহলে শিক্ষাথীের্দর গ্রেপ্তার করা হচ্ছে কেন? গ্রেপ্তার ছাত্রদের মুক্তির দাবি করলেই প্রশাসন বলছে আইন আইনের গতিতে চলবে। সমাজবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বষের্র ছাত্র মশিউরকে কি আইন মেনে গ্রেপ্তার করা হয়েছে? তাকে হল থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। দুদিন তার কোনো খোঁজ ছিল না।’ মানববন্ধনে ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা চেয়ে শিক্ষাথীর্রা বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকের সামনে শিক্ষাথীর্, শিক্ষাথীর্র সামনে শিক্ষক, অভিভাবকের সামনে সন্তানের ওপর হামলা করেছে শাসক দলের অনুগত ছাত্রসংগঠন। এর নজির আগে কখনো ছিল না। প্রশাসনের কাছে তারা জানতে চান, রাজনৈতিক দলের সদস্য না হলেই কেন তারা অনিরাপদ বোধ করবেন? তারা নিজের ভাষায় নিজের ক্যাম্পাসে কথা বলার জন্য কেন নিপীড়নের শিকার হবেন এবং বিচার চাইতে গেলে কেন উল্টো হয়রানির শিকার হবেন? অনুপ্রাণ বিভাগের শিক্ষাথীর্ নাহিদা সারওয়ার জানান, আবাসিক হলে, নিজের বিভাগে এবং ক্যাম্পাসে কথা বলতে পারছেন না তারা। আইন বিভাগের ছাত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস জানান, ক্লাস ফেলে মানববন্ধনে এসেছেন তার বন্ধুর জন্য। তারিকুল ইসলাম আদনানকে ২ জুলাই গ্রেপ্তার করা হলেও ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে উপস্থাপন করা হয়নি। এত অনিয়মের পরও প্রশাসন চুপ করে থেকেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন, সংবিধান বিষয়ে তাহলে কেন পড়ানো হচ্ছে, তা জানতে চান তিনি। আন্তজাির্তক সম্পকর্ বিভাগের শিক্ষাথীর্ আন্তারা ইসলাম বলেন, ‘আমরা যদি এখন অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ না করি, তাহলে পরবতীর্ প্রজন্মের কাছে আমরা প্রশ্নের সম্মুখীন হব, আমরা কবে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হারিয়ে ফেলেছিলাম।’ মানববন্ধন শেষে অবস্থান কমর্সূচি পালন করেন শিক্ষাথীর্রা। অবস্থান কমর্সূচিতে ‘ক্যাম্পাসের সন্ত্রাসীরা, হুশিয়ার সাবধান’, ‘সন্ত্রাসীরা মানুষ নয়, আবার তোরা মানুষ হ’ ইত্যাদি ¯েøাগান দেন তারা। গত রোববার কোটা সংস্কার আন্দোলনে হামলার প্রতিবাদ ও গ্রেপ্তার ছাত্রদের মুক্তির দাবিতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় শিক্ষক-শিক্ষাথীের্দর বিক্ষোভ কমর্সূচিতে দফায় দফায় বাধা দেয়া হয়। হামলা চালানো হয়। হামলাকারীরা ছাত্রলীগের কমীর্ বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। ওই দিন দুপুরের দিকে কমর্সূচির একপযাের্য় শিক্ষক-শিক্ষাথীর্রা মিছিল বের করলে তাদের ওপর হামলা চালানো হয়। এ সময় শিক্ষকদের সঙ্গে ছাত্রলীগ মারমুখী আচরণ করে। তারা ছাত্রীদের মারধর করে। ধাওয়া ও ধাক্কা দিয়ে মিছিল ছত্রভঙ্গ করে দেয়।