২৩ মার্চ ডাকসুর অভিষেক

ডাকসুর পুনর্নির্বাচন দাবিতে উপাচার্যের কার্যালয় ঘেরাও

প্রকাশ | ১৯ মার্চ ২০১৯, ০০:০০ | আপডেট: ১৯ মার্চ ২০১৯, ০০:২৭

যাযাদি রিপোর্ট
ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন বাতিল, পুনঃতফসিল ঘোষণাসহ পাঁচ দফা দাবিতে সোমবার ভিসি কার্যালয় ঘেরাওয়ের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলে স্বতন্ত্র ভিপি প্রার্থী অরণি সেমন্তি খান -যাযাদি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের ফলাফল বাতিল এবং পুনঃতফসিল ঘোষণাসহ পাঁচ দফা দাবিতে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী পাঁচ প্যানেলের প্রার্থী ও সমর্থকরা। তবে মিছিলে ছিলেন না ডাকসুর সদ্য নির্বাচিত সহ-সভাপতি (ভিপি) নুরুল হক নুর ও প্রগতিশীল জোট প্যানেল থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী ভিপি প্রার্থী লিটন নন্দী। এমনকি তাদের কেউই ক্যাম্পাসেও যাননি। পরিবারের সদস্যের অসুস্থতার কারণে দুজনই মিছিলে আসতে পারেননি বলে জানা গেছে। সোমবার দুপুর ১২টার দিকে রাজু ভাস্কর্য থেকে বিভিন্ন প্যানেলের প্রতিনিধি সমর্থকদের নিয়ে মিছিলটি শুরু হয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবন, গ্রন্থাগার, মধুর ক্যান্টিন, ব্যবসা অনুষদসহ বিভিন্ন সড়ক ঘুরে মিছিলটি ভিসি কার্যালয়ের সামনে গিয়ে শেষ হয়। স্বতন্ত্র ভিপি প্রার্থী অরণি সেমন্তি খান, স্বতন্ত্র জিএস প্রার্থী এ.আর.এম. আসিফুর রহমান, সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের জিএস প্রার্থী মোহাম্মদ রাশেদ খান, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন প্যানেল থেকে জিএস পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী উম্মে হাবিবা বেনজির, প্রগতিশীল ছাত্রজোটের জিএস প্রার্থী ফয়সাল মাহবুব মিছিলে নেতৃত্ব দেন। মিছিল শেষে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী আন্দোলনকারীরা ভিসি কার্যালয় ঘেরাও করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির সঙ্গে দেখা করার অনুমতি না মেলায় তারা কার্যালয়ের ভেতরে প্রবেশ করতে পারেননি। এদিকে বোন অসুস্থ থাকায় কর্মসূচিতে অংশ নিতে পারেননি বলে জানিয়েছেন ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুর। তার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে আমান নামে একজন ফোন রিসিভ করেন। আমান জানান, তিনি সম্ভবত বের হবেন না। ওর (নুর) বোন একটু অসুস্থ। অন্যদিকে রাশেদ খান বলেন, 'নুর শারীরিকভাবে খুবই অসুস্থ। তাই আসবে না। এছাড়া সে তো তার অবস্থান রোববার পরিষ্কার করেছে, তাই তার না আসার অন্য কোনো কারণ নেই।' উপাচার্য কার্যালয়ের সামনে অবস্থান এছাড়া মা অসুস্থ থাকায় মিছিলে অংশ নিতে না পারলেও প্যানেলগুলোর কর্মসূচিতে অংশ নেবেন বলে জানিয়েছেন লিটন নন্দী। তিনি বলেন, 'আমার মায়ের বস্নাডপ্রেসার বেড়ে যাওয়ায় তাকে নিয়ে হাসপাতালে এসেছি। মিছিলে যেতে পারিনি। কর্মসূচিতে অংশ নেব।' রোববার ক্লাস বর্জনের কর্মসূচি ঘোষণা করে ডাকসু নির্বাচনে অংশ নেয়া পাঁচ প্যানেলের প্রতিনিধিরা। তাদের দাবির মধ্যে রয়েছে, জালিয়াতির ডাকসু নির্বাচন বাতিল, পুনঃতফসিল ঘোষণা, ভিসির পদত্যাগ দাবি, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও হামলাকারীদের শাস্তি প্রদান। তবে সোমবার সরেজমিন দেখা যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের ক্লাস-পরীক্ষা স্বাভাবিক ছিল। ক্যাম্পাসে সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হারও ছিল স্বাভাবিক। অনশনকারীদের সঙ্গে কথা বললেন উপাচার্য এদিকে ডাকসু নির্বাচনে অনিয়মের সুষ্ঠু তদন্তের দাবিতে সোমবার উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন রাজু ভাস্কর্যে অনশন করা শিক্ষার্থীরা। অনশনকারীরা জানান, সেই বৈঠকে উপাচার্য বলেছেন, ডাকসুর আগের নির্বাচনগুলোতে বেশি অনিয়ম হয়েছে। সংঘর্ষ ও খুনের ঘটনাও ঘটেছে। সেই তুলনায় এই নির্বাচনের অনিয়মগুলো 'নরমাল'। গত শুক্রবার রাতে উপাচার্যের সঙ্গে নির্বাচনে অনিয়ম নিয়ে কথা বলার আশ্বাসে অনশন ভাঙেন সাত শিক্ষার্থী। সোমবার বেলা ১১টার দিকে উপাচার্যের কার্যালয়ে সেই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে অনশনকারীদের মধ্যে তাওহীদ তানজিম, শোয়েব মাহমুদ, রাফিয়া তামান্না ও রবিউল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। প্রায় এক ঘণ্টার বৈঠক শেষে শোয়েব মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, 'নির্বাচনে ভোট কারচুপি, ভোট প্রদানে বাধা ও প্রার্থীদের ওপর হামলার বিষয়গুলো উপাচার্যকে জানানো হয়েছে। প্রমাণ হিসেবে বিভিন্ন হলে ভোটের অনিয়ম, ভোটারদের লিখিত অভিযোগ ও হামলার ভিডিও ফুটেজ দেয়া হয়েছে। উপাচার্য স্যার বলেছেন, নির্বাচন নিয়ে নানা অভিযোগ খতিয়ে দেখতে ১৩ মার্চ যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, তাদের কাছে এই ডকুমেন্টগুলো সরবরাহ করা হবে। শোয়েব বলেন, এসব অনিয়ম নিয়ে আলোচনার সময় উপাচার্য স্যার বলেছেন, 'আগের ডাকসু নির্বাচনগুলোয় অনেক বেশি অনিয়ম হয়েছে। সেগুলোর চেয়ে এই নির্বাচনে অনেক নরমাল অনিয়ম হয়েছে। নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে।' অনশনকারী মঈন উদ্দিন বলেন, 'এই বৈঠক নিয়ে আমরা সন্তুষ্ট না। যেহেতু আমাদের উত্থাপিত অনিয়মগুলো নিয়ে তদন্ত করা হবে বলে উপাচার্য জানিয়েছেন, সেহেতু আমরা কিছুদিন অপেক্ষা করব। দ্রম্নত তদন্তের ফল প্রকাশ না করলে আমরা চলমান আন্দোলনে যোগ দেব।' উপাচার্য, চিফ রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ রিটার্নিং কর্মকর্তাদের অপসারণ, পুনর্র্নির্বাচন ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজু ভাস্কর্যে আমরণ অনশনে বসেছিলেন সাত শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ছয়জন ডাকসু ও হল সংসদে বিভিন্ন প্যানেলের প্রার্থী ছিলেন। অনশনের চতুর্থ দিনের মাথায় গতকাল রাতে সহউপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ, শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মাকসুদ কামালসহ ডাকসুর ভিপি, জিএস ও এজিএস গিয়ে অনশনকারীদের অনশন ভাঙান।

এদিকে আগামী ২৩ মার্চ (শনিবার) ডাকসুর প্রথম কার্যকরী পরিষদ সভা অনুষ্ঠিত হবে। সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে প্রভোস্ট কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। ভিসির বাসভবনে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
ডাকসু’র সভা পুরনো সিনেট অডিটোরিয়ামে ও হলগুলোর পরিষদ সভা নিজ নিজ হলে অনুষ্ঠিত হবে।
তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন সূর্যসেন হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল। তিনি বলেন, প্রভোস্ট কমিটির সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রত্যেক হল সংসদের জন্য একজন করে ও কেন্দ্রীয় সংসদের জন্য একজন ট্রেজারার নিয়োগ দেবেন ভিসি। ট্রেজারার শিক্ষকদের মধ্য থেকে নিয়োগ দেয়া হবে।
মাকসুদ কামাল আরও বলেন, প্রভোস্ট কমিটির সভায় ডাকসু নির্বাচনের বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগের বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। এর মাধ্যমে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের চেষ্টা চলছে বলেও আলোচনায় উঠে এসেছে।