বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড টেস্ট সিরিজ

আজ শুরু দ্বিতীয় টেস্ট

প্রকাশ | ০৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০

ক্রীড়া ডেস্ক
ওয়ানডে বিশ্বকাপের ব্যর্থতা ঝেরে ফেলে সিরিজের প্রথম টেস্টে সফরকারী নিউজিল্যান্ডকে দাঁড়াতেই দেয়নি স্বাগতিক বাংলাদেশ। প্রথম টেস্টে বড় ব্যবধানে জিতে দুই ম্যাচের সিরিজে ১-০-তে এগিয়েও আছে টাইগাররা। সিলেটে অনুষ্ঠিত প্রথম টেস্টের মতো আজ বুধবার মিরপুর টেস্টেও আধিপত্য ধরে রাখতে চায় স্বাগতিকরা। কিউইদের বিপক্ষে প্রথমবার টেস্ট সিরিজ জয়ের লক্ষ্য নিয়ে আজ মাঠে নামবে টাইগাররা। অন্যদিকে প্রথম টেস্টের ভুলগুলো সুধরে দারণভাবে ঘুরে দাঁড়াতে চায় কিউইরা। এমন এক সমীকরণকে সামনে রেখে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে নিউজিল্যান্ডের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। আর এই ম্যাচটি শুরু হবে সকাল সাড়ে ৯টায়। বাংলাদেশ ও নিউজিল্যান্ডের মধ্যকার টেস্ট ম্যাচটি সরাসরি দেখা যাবে গাজী টিভি ও টি স্পোর্টসে। মিরপুরে মঙ্গলবার সকালেই খানিকটা বৃষ্টি হয়ে গেল। এরপর সারাদিন মেঘলা আকাশ, ঘণ্টা দুয়েকের মতো উইকেট আগলে রাখলেন প্রধান কিউরেটর গামীনি ডি সিলভা। দুপুর ১২টার পর কাভারে ঢাকা উইকেটের সামনে কিছু সময় দাঁড়িয়ে থাকলেন নিউজিল্যান্ড কোচ লুক রনকি। গ্রাউন্ডসম্যানরা এসে কাভার সরানোর পর দুই পাশে দাঁড়িয়ে বুঝে নেওয়ার চেষ্টা করলেন এই ২২ গজে কি অপেক্ষা করছে। মিরপুরের উইকেট যে, সব সময়ই একটা ধাঁধা। একইসঙ্গে নিম্নচাপে কাভারে ঢাকা উইকেট আরও রহস্য তৈরি করছে। তার চেয়েও যে, রহস্যময় তাইজুল ইসলামদের ঘূর্ণিবল। সেই রহস্যভেদ করে ম্যাচ জিততে মরিয়া কিউইরা। নাজমুল হোসেন শান্তদের সহজ হিসাব- যেভাবে সিলেটে খেলে তারা জয় পেয়েছে তারই আরেকটি প্রদর্শন করা মিরপুরে। নিউজিল্যান্ডকে প্রথমবারের মতো টেস্ট সিরিজে হারানোর সুযোগ কোনোভাবে হাতছাড়া করতে চায় না স্বাগতিকরা। টেস্টের পাঁচ দিনের মধ্যে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে দু'দিন। এমনটা হলে উইকেটে তাই ধারণার চেয়েও পরিবর্তন হওয়া স্বাভাবিক। তবে সিলেটের মতো মিরপুরেও টস গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়াবে। সর্বশেষ দুই টেস্টে আয়ারল্যান্ড ও আফগানিস্তানের এই মিরপুরে বাংলাদেশের পেসাররা ২১ উইকেট নিলেও এবার প্রতিপক্ষ ভিন্ন। উইকেটের চরিত্রও ভিন্ন হওয়া স্বাভাবিক। এক টেস্টের নেতৃত্ব দেখেই চারদিকে নাজমুল হোসেন শান্তর প্রশংসা ভেসে আসছে। চাপে পড়েও কখন দমে জাননি। অধিনায়কত্ব এবং নেতৃত্বের যে সাহসিকতা সেটা সামনে থেকেই সামলে দলকে জয় এনে দিয়েছেন। এরই মধ্যে কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে তাকে নেতৃত্বের সবুজ সংকেত দিয়ে রেখেছেন। মিরপুর টেস্টে ভালো করতে পারলে আরও একধাপ এগিয়ে যাবেন। তবে মিরপুরের উইকেট বোঝা যে কঠিন সেটা হাথুরুসিংহেও জানালেন। দলের ওপর বার্তা নিয়ে কোচ বলেন, 'বার্তা একই থাকবে। আমাদের যে শক্তি আছে তা নিয়েই খেলা। নিজেদের সামর্থ্য বোঝা, প্রতিটি সেশন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা। দল হিসেবে এরা তরুণ কিন্তু 'দক্ষতার দিক থেকে অনেক ভালো।' ঘরের মাটিতে বাংলাদেশের বোলারদের পারফরম্যান্স নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। ম্যাচের ফল কেমন হবে সেটা নির্ভর করে ব্যাটারদের পারফরম্যান্সের ওপর। সিলেট টেস্টে বাংলাদেশের দুই ইনিংসেই তিনশ' ছাড়ানো স্কোর হয়েছে। মিরপুরেও জিততে হলে যে ব্যাটিংয়ে তারই পুনরাবৃত্তি করতে হবে। বড় দলগুলোর বিপক্ষে মধুর সম্ভাবনার সামনে খুব কমই থাকে বাংলাদেশ। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ঐতিহাসিক সিরিজ জয়ের হাতছানি। ড্র করতে পারলেই সিরিজ জয় নিশ্চিত হবে। বাংলাদেশ চায় ধারাবাহিকতার আরেকটি প্রতিফলন দেখিয়ে জয় তুলে নেওয়া। এজন্য ক্রিকেটারদের মানসিকতা ধরে রাখার দিকেই মনোযোগী বাংলাদেশ অধিনায়ক। দু'দিনের অনুশীলন শেষে নিজেদের কম্বিনেশনও ঠিক করে ফেলেছে স্বাগতিকরা। সিলেট টেস্টের একাদশ নিয়েই মাঠে নামলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। এদিকে বাংলাদেশে গরম না থাকায় স্বস্তি পাচ্ছে নিউজিল্যান্ড। একইসঙ্গে অর্ধ কোটি জনসংখ্যার বিশাল দেশ থেকে এসে বাংলাদেশে প্রচুর মানুষ দেখে বরাবরই আনন্দ পায় নিউজিল্যান্ড। ঢাকাতেই তো আড়াই কোটির উপরে মানুষের বাস। মিরপুরে দুদিন অনুশীলন করে দ্বিতীয় টেস্টে ভালো করার আত্মবিশ্বাস পাচ্ছে কিউইরা। অধিনায়ক টিম সাউদি বলেন, 'প্রথম টেস্টে হারা অবশ্যই হতাশার ছিল। এখানে আরও ভালো ক্রিকেট খেলার সুযোগ রয়েছে। এখানকার সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে আরও ভালো ক্রিকেট খেলতে হবে। বিশ্বের এই প্রান্তে খেলা সব সময়ই চ্যালেঞ্জ। আমরা সামনের পাঁচ দিনের জন্য তাকিয়ে আছি।' নিউজিল্যান্ড একাদশে দু'একটা পরিবর্তন আনার ইঙ্গিত দিয়ে রাখলেন। বিশ্বকাপে দারুণ পারফরম্যান্স করা অলরাউন্ডার রাচিন রবীন্দ্রকে ছাড়া মাঠে নামে। সর্বশেষ দু'দিনে তাকে অনেকটা সময় নেটে দেখা গেল। তার সঙ্গে একাদশে সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনায় রয়েছেন মিচেল স্যান্টনারও। দু'দলই টস ভাগ্য নিজেদের পক্ষে দেখার অপেক্ষা করছে।' সিলেটে প্রথম টেস্ট ১৫০ রানে জিতে সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ম্যাচে জয় বা ড্র করতে পারলেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং জিম্বাবুয়ে ছাড়া অন্য কোনো দলের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো টেস্ট জয়ের স্বাদ নেবে টাইগাররা। নিয়মিত অধিনায়ক সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, তাসকিন আহমেদ, লিটন দাস ও এবাদত হোসেনের মতো গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়দের ছাড়াই প্রথম টেস্টে জয় পায় বাংলাদেশ। ঘরের মাঠে বড় দলের বিপক্ষে জয় অবশ্য বাংলাদেশের জন্য নতুন কিছু নয়। কিন্তু অস্ট্রেলিয়া এবং ইংল্যান্ডের বিপক্ষে যেভাবে জিতেছিল টাইগাররা, এবারের জয়টি তার চেয়ে ভালো উইকেটে খেলে পেয়েছে। যা বাংলাদেশ দলের আত্মবিশ্বাস কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। সিলেটের উইকেট স্পিন সহায়ক হলেও মিরপুরের মতো বেশি টার্ন ছিল না। এছাড়াও বাউন্স ছিল, একইসঙ্গে উইকেট থেকে সুবিধাও পেয়েছে ব্যাটসম্যানরা। কিন্তু মিরপুরের উইকেট হবে সম্পূর্ণ ভিন্ন। যদি বেশি টার্ন না থাকে, তাহলে বাউন্সও হবে না এবং ধীর প্রকৃতির উইকেট হবে। ফলে ব্যাটসম্যানরা কঠিন পরীক্ষার মুখে পড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যা-ই হোক না কেন, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম টেস্টে জয় পাওয়ায় আয়ারল্যান্ড, আফগানিস্তানের পর ঘরের মাঠে চলতি বছর টানা তৃতীয় সিরিজ জয়ে চোখ বাংলাদেশের। যদিও টেস্ট ফরম্যাটে বাংলাদেশের রেকর্ড শোচনীয়। তবে দলের অগ্রগতি দেখে মনে হচ্ছে খুব শিগগিরই এ থেকে বেরিয়ে আসবে দল। এখন পর্যন্ত ১৩৯টি টেস্ট ম্যাচ খেলে ১৯টিতে জয়, ১০২টিতে হার ও ১৮টি ড্র করেছে বাংলাদেশ। আর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১৮টি ম্যাচ খেলে মাত্র ২টিতে জয়, ১৩টিতে হার এবং ৩টিতে ড্র করেছে বাংলাদেশ। ওয়েস্ট এবং জিম্বাবুয়ে বাদে, শুধুমাত্র নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দু'টি টেস্ট জিতেছে বাংলাদেশ। তাই তো কিউইদের বিপক্ষে প্রথমবার টেস্ট সিরিজ জয়ে চোখ রাখছে টাইগাররা।