উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ৬ ঘণ্টার মধ্যে চার খুন
প্রকাশ | ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০
উখিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি
কক্সবাজারের উখিয়ার কুতু পালং লম্বাশিয়া ও ইরানি পাহাড় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ৬ ঘণ্টার ব্যবধানে সন্ত্রাসীদের গোলাগুলি ও হামলায় চার রোহিঙ্গা নিহত হয়েছেন। এ সময় গুরুতর আহত হয়েছেন আরও দুই রোহিঙ্গা।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ও রাতে উখিয়ার ১৫ ও ১৭ নম্বর ক্যাম্পে পৃথক হামলা চালিয়ে সন্ত্রাসীরা তিনজনকে হত্যা করে। এর আগে একই দিন দুপুরে ইমাম হোসেন (৩০) নামে আরেকজন রোহিঙ্গাকে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।
ক্যাম্পের রোহিঙ্গা মাঝিরা জানান, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তারিত কেন্দ্র করে মিয়ানমারের সশস্ত্র রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আরএসও-আরসার কিলিং স্কোয়াডের সদস্যদের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনায় ওই চার রোহিঙ্গা নিহত হয়েছেন।
এ ঘটনায় দুজন রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করেছে ক্যাম্পে আইন শৃঙ্খলার দায়িত্বে নিয়োজিত আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ান (এপিবিএন)। এপিবিএন পুলিশের অধিনায়ক মো. আমির জাফর জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ রাখতে ক্যাম্পে টহল জোরদারসহ সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শামীম হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ১৭ নম্বর ক্যাম্পের সি/৭৭ বস্নক এলাকায় ১০/১২ আরসা সদস্য একত্রিত হয়ে ওই ক্যাম্পের এইস/৭৭ বস্নকের বাসিন্দা আবুল বশরের ছেলে আবুল কাসেম (৩৫) নামে এক রোহিঙ্গাকে মাথায় উপর্যুপরি গুলি করে। এতে ঘটনাস্থলে তার মৃতু্য হয়। তিনি দীর্ঘদিন ক্যাম্পে আরসার বিরুদ্ধে শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত ছিলেন।
অপরদিকে রাত ৮টায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে
১৫ নম্বর ক্যাম্পের জি/৩ বস্নক এলাকায় আরসা ও আরএসও সদস্যদের মাঝে গুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটে। এ সময় আরসা সন্ত্রাসীদের গুলিতে ওই ক্যাম্পের বাসিন্দা মো. আলীর ছেলে মো. জোবায়ের (১৬) ঘটনাস্থলে নিহত হন এবং ১৫ নম্বর ক্যাম্পের জি/৬ মো. শফির ছেলে আনোয়ার সাদেক (২৭) ও জি/৩ বস্নক এলাকার বাসিন্দা কামাল উদ্দিনের ছেলে জয়নাল উদ্দিন (২৮) এবং জি/৭ সৈয়দুল বশরের ছেলে আয়াছ (১৮) গুলিবিদ্ধ হন। পরে আশপাশের রোহিঙ্গারা
আহতদের উদ্ধার করে ক্যাম্পে অবস্থিত এমএসএফ হাসপাতালে নেওয়ার পথে আনোয়ার সাদেকের (২৭) মৃতু্য হয়। বাকিদের হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে এবং নিহতদের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য জেলা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ঘটনার পরপরই এপিবিএন ও থানা পুলিশ রাতে সন্ত্রাসীদের ধরতে অভিযান চালিয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ।
এর আগে মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটার দিকে ৪ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সন্ত্রাসীদের গুলিতে ইমাম হোসেন (৩০) নামে আরেক রোহিঙ্গা যুবক নিহত হয়। সাধারণ রোহিঙ্গারা জানিয়েছেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তার ও সাধারণ রোহিঙ্গাদের ভয়ভীতি দেখাতে আরসা ও আরএসও সন্ত্রাসীরা এই হত্যাকান্ড সংঘটিত করছে। আমাদের প্রাণের নিরপত্তা এখন হুমকির মুখে। আমরা প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজনের উখিয়া সভাপতি আলহাজ নূর মোহাম্মদ সিকদার জানান, সশস্ত্র রোহিঙ্গারা দিন দিন দেশের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রম্নপের মধ্যে গোলাগুলি, খুন, রাহাজানি, ছিনতাই, মাদক পাচার ও অস্ত্র তৈরি রীতিমতো স্থানের মধ্যে আতঙ্ক ও উদ্বেগ বিরাজ করছে।