১৫ বছরে ৬০ গুণ টাকা ও সম্পদে ফুলেফেঁপে উঠেছেন এমপি মজিদ খান

নির্বাচনী হলফনামা পর্যালোচনা

প্রকাশ | ০৮ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি
হবিগঞ্জ-২ (বানিয়াচং-আজমিরীগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মো. আব্দুল মজিদ খান। জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও টানা তিনবারের সংসদ সদস্য। ২০০৮ সালের নির্বাচনে তার আয়-সম্পদ ছিল নগণ্য। মাথায় ছিল ঋণের বোঝাও। তখন তার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ছিল মাত্র ৬ লাখ ৪৬ হাজার ৭৭৫ টাকা। তবে দীর্ঘ ১৫ বছর তার সম্পদের হিসাব-নিকাশ বদলে গেছে। এখন ঋণের তালিকায় তার নাম নেই। সম্পদের পরিমাণ লাখের অঙ্ক থেকে পৌঁছে গেছে কোটি টাকায়। গত ১৫ বছরের ব্যবধানে তার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে ৬০ গুণ। বর্তমানে \হনগদ টাকাসহ ৪ কোটি ১৭ লাখ ৬৮ হাজার ৫৩৯ টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের মালিক তিনি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এমপি আব্দুল মজিদ খানের স্বাক্ষরযুক্ত নির্বাচন কমিশনে দাখিলকৃত হলফনামা থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হলফনামা থেকে জানা যায়, বর্তমানে তার নগদ টাকার পরিমাণ ২ কোটি ৭১ লাখ ৩৫ হাজার ৫১১ টাকা। এছাড়া স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের তালিকায় দেখানো হয়েছে তার বার্ষিক আয় ২০ লাখ ৪ হাজার ৮৬০ টাকা। এর মধ্যে কৃষি খাত থেকে পান ৪৫ হাজার ৪০০ টাকা, বাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট ও দোকান ভাড়া থেকে পান ৪ লাখ ৭ হাজার ৬১০ টাকা। সঞ্চয়পত্র/ব্যাংক আমানত ৫২ হাজার ২৫০ টাকা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত অর্থের পরিমাণ ৩০ লাখ ২২ হাজার ৩৭৪ টাকা, যানবাহন অস্থাবর সম্পদ মূল্য ৯২ লাখ ৩০ হাজার, স্ত্রীর নামে রয়েছে ১ লাখ ৩০ হাজার ও ১০ ভরি স্বর্ণ। এছাড়া তিনি হলফনামায় আরও কিছু অস্থাবর সম্পদের কথা উলেস্নখ করেছেন। জানা যায়, ২০০৮ সালে যখন প্রথম নির্বাচন করেন তখন তার কৃষিজমি ছিল চার একর। তাও পৈতৃক সূত্রে পাওয়া। কৃষি খাতে বছরে তার আয় ছিল মাত্র ১০ হাজার টাকা। আইনজীবী হিসেবে আয় করতেন ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। তখন স্থাবর-অস্থাবর মিলিয়ে তার মোট সম্পদের পরিমাণ ছিল মাত্র ৬ লাখ ৪৬ হাজার ৭৭৫ টাকার। অকৃষিজমি ছিল ২ লাখ ৪৬ হাজার ৭৭৫ টাকার। তিনটি আধাপাকা ঘর ছিল ১ লাখ ৫০ হাজার টাকার। এরপর ২০১৪ সালের নির্বাচনের সময় আব্দুল মজিদ খানের বার্ষিক আয় বেড়ে দাঁড়ায় ৫ লাখ ১০ হাজার ৪৫০ টাকা। কৃষি খাতে আয় ২৫ হাজার ২০০ টাকা। বাড়িভাড়া থেকে ১ লাখ ৫৫ হাজার ২৫০ টাকা। আর আইন পেশা থেকে ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা। ওই সময়ে তার হাতে নগদ ছিল ১ লাখ; ব্যাংকে জমা ছিল ৩ লাখ টাকা। এই টাকাসহ তার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের মোট পরিমাণ ছিল ১ কোটি ৪১ লাখ ৩৫ হাজার ৭৭৯ টাকা। অবশ্য বাড়ি নির্মাণ বাবদ তিনি ৬৯ লাখ ৭ হাজার ৮০০ টাকার ঋণ দেখিয়েছিলেন তখন। সবশেষ ২০১৮ সালের নির্বাচনে তার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ২ কোটির ওপরে। তখন হলফনামায় বলা হয়, তার আয়ের খাতগুলোর মধ্যে কৃষি থেকে বার্ষিক আয় হয় ২৩ হাজার ৪০০ টাকা, বাড়িভাড়া থেকে বছরে পান ৩ লাখ ৫১ হাজার টাকা, মৎস্য ব্যবসা থেকে বার্ষিক ২০ লাখ টাকা, সংসদ সদস্য হিসেবে বছরে পরিতোষিক ভাতা পান ৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা, রবিশস্য থেকে তার বার্ষিক আয় ৬ লাখ ৩০ হাজার টাকা। নগদ রয়েছে ২ লাখ টাকা। ব্যাংকে জমা আছে ২৫ লাখ ২৪ হাজার টাকা। তার রয়েছে দু'টি গাড়ি। একটি টয়োটা ফরচুনা জিপ। যার মূল্য ২৫ লাখ ৫০ হাজার। অপরটি হার্ড জিপ (৪৫০০ সিসি), যার মূল্য ৫০ লাখ টাকা। তার বাসায় রঙিন টিভি, ফ্রিজ রয়েছে ৪০ হাজার টাকার, ফার্নিচার রয়েছে ২০ হাজার টাকা মূল্যের। তার কৃষিজমির পরিমাণ তিন একর। যার অর্জনকালীন মূল্য ৩০ হাজার টাকা। অকৃষি জমি রয়েছে ৮৩ শতক ৫০ অযুতাংশ। যার অর্জনকালীন মূল্য ১৮ হাজার ৫৫৬ টাকা। আরও ৫০ শতক জমির অর্জনকালীন মূল্য ১ লাখ ৮৬ হাজার ৭৭৫ টাকা। এছাড়াও ৭ কাঠা ৮ ছটাক অকৃষি জমির অর্জনকালীন মূল্য ২০ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। তার ছয়তলা ভিত্তির চারতলাবিশিষ্ট বাসা রয়েছে। ওই বাসার অর্জনকালীন মূল্য ১ কোটি ৯ লাখ ৪৬ হাজার ৭১৩ টাকা। আব্দুল মজিদ খান চতুর্থবারের মতো হবিগঞ্জ-২ (বানিয়াচং-আজমিরীগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চান। তবে আওয়ামী লীগ তাকে মনোনয়ন না দেওয়ায় তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন।