ভোট বর্জনকারীদের কেউ বাঘাইছড়ির ঘটনা ঘটাতে পারে: সিইসি

প্রকাশ | ২২ মার্চ ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
কে এম নুরুল হুদা
ভোট বর্জনকারী প্রতিদ্বন্দ্বীদের পক্ষে কেউ বাঘাইছড়ির সন্ত্রাসী ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হদা। তিনি বলেন, 'বাঘাইছড়ির ঘটনায় কাউকে এখনো সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে বিষয়টি বলা যাবে। তবে সেখানে (পার্বত্য অঞ্চলে) আঞ্চলিক অনেক গ্রম্নপ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে। তারা ভোট বর্জনও করেছে। সেই প্রতিদ্বন্দ্বীদের কেউ এটা ঘটাতে পারে বলে ধারণা করছি।' বৃহস্পতিবার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন কমিশনের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ ও যুগ্ম সচিব (গণসংযোগ) এস এম আসাদুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন। গত ১৮ মার্চ রাঙামাটির বাঘাইছড়িতে ভোটগ্রহণ শেষে উপজেলা সদরে ফেরার পথে দুর্বৃত্তদের হামলায় নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারী সাতজন নিহত ও ১৪ জন আহত হন। ওই ঘটনার বিষয়ে অবহিত করতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। ঘটনায় নিহতদের স্মরণ করে সিইসি বলেন, 'ওই ঘটনায় নির্বাচন কমিশন মর্মাহত ও এই বর্বরোচিত ঘটনার তীব্র নিন্দা জানায়।' সিইসি এ সময় নিহতদের পরিবারকে ইসির পক্ষ থেকে সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা অনুদান ও আহতদের চিকিৎসার সব দায়দায়িত্ব গ্রহণসহ আহতের ধরন অনুযায়ী অনুদানের ঘোষণা দেন। এছাড়া তিনি ভিকটিমদের পরিবারের সদস্যদের নির্বাচন কমিশনে সম্ভব হলে চাকরি দেয়ার প্রতিশ্রম্নতিও দেন। কে এম হুদা জানান, ওই ঘটনায় দোষীদের গ্রেপ্তারে সাঁড়াশি অভিযান শুরু হয়েছে। ঘটনা তদন্তে বিভাগীয় কমিশনারের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। আর সব বিষয়ে নির্বাচন কমিশন সার্বিকভাবে যোগাযোগ রাখছে। সেখানে কমিশনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা যথেষ্ট ছিল কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'সেখানে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল। তবে যে চোরাগোপ্তা হামলা ঘটেছে, এতবড় দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলের কোথায় কখন এ জাতীয় চোরাগোপ্তা হামলা ঘটে- সে বিষয়টি হিসাবের মধ্যে থাকে না। বিষয়টি আন্দাজ করাও একেবারে সম্ভব নয়।' আরেক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, 'একেবারেই পরিকল্পিতভাবে এক থেকে দেড় মিনিটের মধ্যে এই হামলাটি হয়েছে। ওই বহরে বিজিবির যে নিরাপত্তা বহর ছিল, তাদের পক্ষে ওই সময়ের মধ্যে প্রস্তুতি নিয়ে পাল্টা আক্রমণ করা সম্ভব নয়। তবে তাদের দায়িত্ব পালনে কোনো গাফিলতি ছিল বলে মনে করি না। তারা ঘটনার পরপরই ত্বরিতগতিতে ওই এলাকা তলস্নাশি করেছে।' ভোট বর্জনের কারণে এ ধরনের ঘটনা ঘটার বিষয়টি কমিশনের আশঙ্কায় ছিল কিনা বা সেই অনুযায়ী প্রস্তুতি ছিল কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে নূরুল হুদা বলেন, 'ভোট বর্জনের পর কমিশনের সতর্কতামূলক ব্যবস্থার কারণে তারা নির্বাচন বানচাল করতে পারেনি। আর ভোট বর্জনের রীতি তো আমাদের এখানে নতুন নয়। আগেও অনেকে ভোট বর্জন করেছে। তবে বর্জনের পর এ ধরনের ঘটনা ঘটবে তা বলা যায় না।' ঘটনাস্থলে তদন্ত দল এদিকে রাঙামাটির বাঘাইছড়িতে সাত নির্বাচনকর্মী হত্যার ঘটনা তদন্তে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন তদন্ত দল। চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের সাত সদস্যের এই তদন্ত দল বৃহস্পতিবার সকালে ওই এলাকায় যান বলে বাঘাইছড়ি থানার ওসি মঞ্জুর আলম জানান। ওসি বলেন, সকাল ৮টার সময় তদন্ত কর্মকর্তারা নয় মাইল এলাকা পরিদর্শন করেন। পরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে আহতদের সঙ্গে এবং সেদিন গাড়িতে থাকা আরও বিভিন্ন নির্বাচনী কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেন তারা। তদন্ত কমিটির প্রধান দীপক চক্রবর্তী বলেন, 'প্রাথমিকভাবে কথা বলে যেটা আমরা বুঝতে পেরেছি এটা পস্ন্যান্ড অ্যামবুশ। কাছ থেকে টার্গেট করেই গুলি করা হয়েছে। তবে এখনই আমরা বিস্তারিত জানাতে পারব না। আমরা সব তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা চালাচ্ছি।' তদন্ত কমিটির বাকি সদস্য- চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) আবু ফয়েজ, বাঘাইহাট জোনের মেজর আশরাফ, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা ছাদেক আহমেদ, চট্টগ্রাম ৩০ আনসার ব্যাটালিয়নের পরিচালক ও অধিনায়ক মো. নুরুল আমিন, সদস্যসচিব ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট নজরুল ইসলাম এ সময় উপস্থিত ছিলেন।