ঢাকায় মোটরসাইকেলে আগ্রহ বাড়ছে

প্রকাশ | ২৩ মার্চ ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
যাত্রীদের জন্য ঢাকা মহানগরের মোড়ে মোড়ে এভাবে মোটরসাইকেল নিয়ে চালকদের অপেক্ষা এখন নিত্যদিনের দৃশ্য -যাযাদি

পরিবহন সংকট আর যানজটের শহর ঢাকায় দ্রম্নত আর সহজ যাতায়াতের মাধ্যম হিসেবে মোটরসাইকেলের জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে। রাইড শেয়ারিং সেবাও এক্ষেত্রে একটি বড় ভূমিকা রেখেছে। নিজে চলার পাশাপাশি নিজের মোটরসাইকেলে অন্যদের সেবা দিচ্ছেন বাইকাররা। এ বিষয়ে এগিয়ে আসছেন নারীরাও। বিআরটিএর হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে সারাদেশে নিবন্ধিত মোটরসাইকেল আছে ২৫ লাখ ১৯ হাজার ২২৬টি। এর মধ্যে ঢাকায় নিবন্ধিত ছয় লাখ ৩১ হাজার ৩৪০টি। মোটরসাইকেলের ব্যবহার কী হারে বাড়ছে তা নিবন্ধনের বছরওয়ারি হিসাব দেখলেই স্পষ্ট হয়। গত ২৬ মাসে সারাদেশে মোটরসাইকেল নিবন্ধনের হার ৪৬ শতাংশ এবং ঢাকায় ৪৪ শতাংশ বেড়েছে। ঢাকায় ২০১৭ সালে যেখানে ৭৫ হাজার ২৫১টি মোটরসাইকেলের নিবন্ধন দেয়া হয়েছিল, ২০১৮ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় এক লাখ চার হাজার ৬৪টিতে। আর চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে ১৪ হাজার ৬৯৯টি মোটরসাইকেলের নিবন্ধন দিয়েছে বিআরটিএ। ২০১৭ সালে সারাদেশে তিন লাখ ২৬ হাজার ৫৫০টি মোটরসাইকেলে নিবন্ধন দেয়া হয়েছিল। ২০১৮ সালে নিবন্ধন পায় তিন লাখ ৯৫ হাজার ৬০৩টি। আর চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে ৭২ হাজার ৭০৪টি মোটরসাইকেলের নিবন্ধন হয়েছে। গেল সপ্তাহে বিআরটিএর মিরপুর কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায় মোটরসাইকেল নিবন্ধন করতে আসা মানুষের ভিড়। নিজের ব্যবসার কাজে দ্রম্নত যাতায়াত করতে মোটরসাইকেল কিনেছেন বাড্ডার সামিউল আলম। নতুন কেনা মোটরসাইকেল নিবন্ধন করতে বিআরটিএ কার্যালয়ে এসেছিলেন তিনি। সামিউল বলেন, গণপরিবহন সংকট আর যানজটের যে অবস্থা, তাতে কথা দিয়ে কথা রাখা যায় না। 'ব্যবসার কাজে প্রচুর দৌড়াদৌড়ি করতে হয়। বাসে করে কোথাও যাওয়া সময়সাপেক্ষ। অটোরিকশা বা প্রাইভেটকারে যেতেও সময় লাগে, খরচও বেশি হয়। এ কারণে এটা কিনে ফেললাম।' ধানমন্ডির একটি অফিসে কাজ করেন সফটওয়্যার প্রকৌশলী তন্ময়। খিলগাঁওয়ের বাসা থেকে অফিসে যেতে তাকে রীতিমতো যুদ্ধ করতে হত। সে কারণে মোটরসাইকেল কিনে তিনি বিআরটিএ-এতে এসেছিলেন নিবন্ধন নিতে। 'রাজধানীতে লোকাল বাস নাই যথেষ্ট, প্রয়োজনের সময় অটোরিকশাও পাওয়া যায় না। ফলে রাস্তায় চলাচলে ভোগান্তি পোহাতে হয়। সময় বাঁচানোর জন্যই বাইক কেনা। এছাড়া বাইক নিয়ে সহজে চলাফেরা করা যায়।' ডেফোডিল ইউনিভার্সিটির ছাত্র তামিমের বাসা কল্যাণপুরে। তিনি জানালেন, মোটরসাইকেল কেনার পর চলাফেরা করা অনেক সহজ হয়েছে তার জন্য। ব্যক্তিগত মোটরসাইকেল থাকলে যে কোনো সময় যে কোনো জায়গায় হুট করে চলে যাওয়া সম্ভব। এখন টাইম সেইভ হচ্ছে, টাকাও সেইভ হচ্ছে। হাজারীবাগের বাসিন্দা মো. সুমন কামরাঙ্গীরচরে একটি ওয়ার্কশপ চালান। বাসা থেকে যাতায়াত করতে আগে দুইবারে অন্তত ১০০ টাকা রিকশা ভাড়া গুণতে হত। ব্যবসার কাজেও ভোগান্তি পোহাতে হতো। কোনো একটা পার্টস কেনার জন্য ধোলাইখাল যাওয়া লাগলে খুব সমস্যা হইত। যাইতে আসতে তিন ঘণ্টা। রিকশাভাড়াও যাইত ম্যালা। এখন চলিস্নশ মিনিটে ধোলাইখাল যাই-আসি, টাকাও কম লাগে। ১০০ টাকার তেলে দুই দিন চইলা যায়। মোহাম্মদপুরের সাকিফ সন্ত পড়েন ইউল্যাবে। তিনি মোটরসাইকেল কিনেছিলেন বন্ধুদের দেখে, শখ থেকে। কিন্তু এখন উপকার পাচ্ছেন অনেক। 'আমাকে প্রায়ই বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় যেতে হয়। বাসে বা অন্য যানবাহনে সেখানে যেতে আসতে দিন পার হয়ে যায়। মোটরসাইকেলে যাওয়া যায় দ্রম্নত। আর একটা বাইক থাকা এখন ফ্যাশনেরও অংশ।' সৌখিন মোটর বাইকারদের সংগঠন থ্রটলারের প্রতিষ্ঠাতা এবং মোটরসাইকেল বিষয়ক বস্নগার নাভিদ ইশতিয়াক তরু বলেন, বাইক অনেকের প্যাশনের জায়গা। ছেলেরা বাইকের প্রতি একটু বেশি আগ্রহী হয়। এক সময় ঘোড়ার প্রতি মানুষের আগ্রহ ছিল, এখন ঘোড়া নেই, সে জায়গায় বাইকের প্রতি মানুষের আগ্রহ এসেছে। 'আর মোটরসাইকেল সবচেয়ে স্বাধীন বাহন। বাইক নিয়ে যে কোনো সময় যে কোনো জায়গায় যাওয়া যায়, চলার পথে কোথাও ভালো একটা জিনিস চোখে পড়লে বাইক থামিয়ে সেটা দেখে নেয়া যায়। আর যানজটের এই শহরে সবচেয়ে আগে যাওয়ার জন্য বাইকের তো বিকল্প নেই।' মোটরসাইকেলের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দুর্ঘটনা বাড়ায় অনেকের মধ্যে উদ্বেগ রয়েছে। এ বিষয়ে তরুর ভাষ্য, মনোযোগ দিয়ে চালালে দুর্ঘটনার সুযোগ কম। 'দুর্ঘটনার ওপর তো কারও হাত নেই। তারপরও বাইকার যদি সব সময় নিজের নিরাপত্তা চিন্তা করে চালায় তাহলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা অনেক কমে আসে। তাছাড়া প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা সরঞ্জাম ব্যবহার করলে দুর্ঘটনায় পড়লেও বড় ধরনের ক্ষতি এড়ানো যায়।'