মহান স্বাধীনতা দিবস আজ

প্রকাশ | ২৬ মার্চ ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
'এটাই হয়তো আমার শেষ বার্তা, আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন। আমি বাংলাদেশের মানুষকে আহ্বান জানাই, আপনারা যেখানেই থাকুন, আপনাদের সর্বস্ব দিয়ে দখলদার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত প্রতিরোধ চালিয়ে যান। বাংলাদেশের মাটি থেকে সর্বশেষ পাকিস্তানি সৈন্যটিকে উৎখাত করা এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের আগ পর্যন্ত আপনাদের যুদ্ধ অব্যাহত থাকুক।' একাত্তরের ২৫ মার্চের কালো রাতের শেষ প্রহরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এ ঘোষণাকে বাস্তবে রূপ দিতে গর্জে ওঠে মুক্তিপাগল বাঙালির হাতিয়ার। টানা নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছিল স্বাধীনতাকামী ৩০ লাখ মানুষ। পাকিস্তানি শাসকদের শোষণ-নির্যাতনের নাগপাশ ভেঙে ছিনিয়ে এনেছিল স্বাধীনতার রাঙা সূর্য। মুক্তিযুদ্ধ সূচনার গৌরবের দিন মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস আজ। ১৯৭১ সালের এই দিনে বিশ্বের বুকে স্বাধীন অস্তিত্ব ঘোষণা করেছিল বীর বাঙালি। সূচনা করেছিল সশস্ত্র সংগ্রামের। জাতি আজ উৎসব উদ্‌?যাপনের পাশাপাশি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে পালন করবে ৪৯তম মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। স্মরণ করবে মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী বীর শহীদদের। স্মরণ করবে স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে- যিনি একটি পরাধীন জাতিকে মুক্তির মন্ত্রে উজ্জীবিত করেছিলেন, করেছিলেন ঐক্যবদ্ধ; যার ডাকে সাড়া দিয়ে বাংলার মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়েছিল মুক্তিসংগ্রামে। একাত্তরের এদিন বেলাল মোহাম্মদ, আবুল কাসেমসহ চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্রের কয়েকজন কর্মকর্তা ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা এম এ হান্নানের মাধ্যমে প্রথম শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণাটি প্রচার করেন। পরে চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রে থেকে বঙ্গবন্ধুর হয়ে সেনাবাহিনীর বাঙালি অফিসার মেজর জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেন। এ ঘোষণার মধ্যদিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বাঙালি শুরু করে স্বাধীনতার সংগ্রাম। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নির্বিচার হত্যা, ধ্বংস ও পৈশাচিকতার বিরুদ্ধে ৯ মাসের মরণপণ লড়াইয়ের মধ্যদিয়ে অভু্যদয় ঘটে স্বাধীন বাংলাদেশের। স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আলাদা বাণীতে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানরা শুভেচ্ছা এবং অভিনন্দন জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি ও বাংলাদেশের জনগণকে। আজ সরকারি ছুটির দিন। নানা আনুষ্ঠানিকতায় সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে দিবসটি উদ্‌?যাপিত হবে। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিনের কর্মসূচি শুরু হবে। সরকারি-বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ছাড়াও সব সড়ক ও সড়কদ্বীপ সাজানো হবে জাতীয় ও রঙিন পতাকায়। গুরুত্বপূর্ণ ভবনগুলোতেও থাকবে আলোকসজ্জা। সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে সূর্যোদয়ের সময় রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে শুরু হবে মহান শহীদদের প্রতি জাতির শ্রদ্ধা নিবেদন পর্ব। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানসহ সর্বসাধারণের শ্রদ্ধার অর্ঘ্যে ভরে উঠবে জাতীয় স্মৃতিসৌধ। দেশের শান্তি ও অগ্রগতি কামনা করে সব মসজিদে বিশেষ মোনাজাত এবং অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে বিশেষ প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হবে। হাসপাতাল, সরকারি শিশু সদন ও এতিমখানা এবং কারাগারে বন্দিদের দেয়া হবে উন্নত খাবার। বিটিভি, বাংলাদেশ বেতারসহ বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশন স্বাধীনতা দিবসের বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করবে। সংবাদপত্রগুলো প্রকাশ করবে বিশেষ ক্রোড়পত্র। সারাদেশের স্মৃতিসৌধগুলোতে পুষ্পস্তবক অর্পণের পাশাপাশি জেলা-উপজেলা পর্যায়ে কুচকাওয়াজ, মুক্তিযোদ্ধা সংবর্ধনা, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক আলোচনা সভা, চলচ্চিত্র প্রদর্শনী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। দিবসটি উদ্‌?যাপন উপলক্ষে সাভারের নবীনগরে অবস্থিত জাতীয় স্মৃতিসৌধে মঙ্গলবার প্রতু্যষে ফুলের অর্ঘ্য দিয়ে শ্রদ্ধা জানাবেন রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা, জাতীয় সংসদের স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, প্রধান বিচারপতি, সেনাবাহিনীর প্রধান, সাত বীরশ্রেষ্ঠ পরিবারের সদস্যরা, মুক্তিযোদ্ধা, কূটনৈতিক ব্যক্তি, রাজনৈতিক নেতা, স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের জনগণ। ইতিমধ্যে স্বাধীনতা দিবস উদ্‌?যাপনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। ভিভিআইপিদের গার্ড অব অনার, কুচকাওয়াজ ও শুভেচ্ছা জ্ঞাপনের মহড়ার সর্বশেষ প্রস্তুতি দেখতে সোমবার স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণ পরিদর্শন করেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। আওয়ামী লীগের কর্মসূচি: মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে দুই দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে সূর্যোদয় ক্ষণে বঙ্গবন্ধু ভবন, কেন্দ্রীয় ও দেশব্যাপী দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিনের কর্মসূচি শুরু করবে দলটি। ওই দিন সকাল ৬টায় জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন। সকাল ৭টায় বঙ্গবন্ধু ভবনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ। একই দিন টুঙ্গীপাড়ায় সকাল ১০টায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ। পরদিন ২৭ মার্চ বুধবার বিকাল ৩টায় রাজধানীর আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আলোচনা সভার আয়োজন করেছে আওয়ামী লীগ। সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। বিএনপির কর্মসূচি : মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে ৭ দিনব্যাপী কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, ২৬ মার্চ মঙ্গলবার ভোর ৬টায় বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারাদেশের সব ইউনিট কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন। দলের জাতীয় নেতৃবৃন্দ ও সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা ওইদিন সকালে সাভারস্থ জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। সেখান থেকে ঢাকায় ফিরে শহীদ জিয়াউর রহমান বীর উত্তমের মাজারে দলের জাতীয় নেতৃবৃন্দ ও সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা পুষ্পস্তবক অর্পণ ও ফাতেহা পাঠ করবেন। ঐকফ্রন্ট: মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে দুইদিনের কর্মসূচির পালন করবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। এর মধ্যে থাকবে ২৬ মার্চ সকাল ৯টায় সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে বীর শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন এবং ৩১ মার্চ বিকাল তিনটায় রমনা ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে আলোচনা সভা।