শুক্রবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে সাজানো ও আত্মঘাতী প্রতিযোগিতা হচ্ছে

নাগরিক পস্ন্যাটফর্মের সংবাদ সম্মেলন
যাযাদি ডেস্ক
  ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০
আপডেট  : ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:৩৯
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে সাজানো ও আত্মঘাতী প্রতিযোগিতা হচ্ছে

সংসদ নির্বাচন প্রতিযোগিতাপূর্ণ হচ্ছে; তবে তা সাজানো ও অনেকটা আত্মঘাতীমূলক প্রতিযোগিতা। এটা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে না। একে মূলত একটি বিশেষ নির্বাচনী তৎপরতা বলা যায়।

'অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন ও ন্যায্যতার লক্ষ্যে নাগরিক এজেন্ডা' শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলে বক্তারা। শনিবার সকালে রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে 'এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক পস্ন্যাটফর্ম' এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। এতে সভাপতিত্ব করেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান।

নির্বাচন নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এটি প্রতিযোগিতাপূর্ণ হচ্ছে; তবে তা সাজানো ও অনেকটা আত্মঘাতীমূলক প্রতিযোগিতা। স্বেচ্ছায় হোক বা হুমকি ও জোরপূর্বক ভোটার নিয়ে আসা হোক; ভোটার অংশগ্রহণমূলক বলা যাবে। সাংবিধানিকভাবেও শুদ্ধ বলা যাবে, তাই আইনগতভাবে চ্যালেঞ্জ করা যাবে না। তবে এটি আসলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে না।

অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও নীতি বিশ্লেষক ডক্টর দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রার্থীরা যে হলফনামা জমা দিয়েছে, তাতে অনেককেই আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়ে যেতে দেখা গেছে। যে যতবার নির্বাচিত হয়েছে, গাণিতিক হারে তার সম্পদ তত বেড়েছে।

তিনি আরও বলেন, অনেকেরই দেখা গেছে,

সম্পদের পরিমাণ ৫০০ গুণ বেড়ে গিয়েছে, কিন্তু তারা কী সেই সম্পদ অনুপাতে পূর্বের তুলনায় ৫০০ গুণ বেশি কর দিয়েছে? এনবিআর কি কখনো সেই খোঁজ নিয়েছে?

ডক্টর দেবপ্রিয় আরও বলেন, প্রার্থীদের সম্পর্কে আমরা জানতে পারি হলফনামার মাধ্যমে। সেখানে যে সম্পদের বিবরণ দেওয়া হয়েছে এবং যে ট্যাক্সের বিবরণ দেওয়া হয়েছে, সেগুলোর কখনো তুলনামূলক বিশ্লেষণ হয়? যদি তাই হয়, তাহলে অনেকেরই দেখেছি আয় ৫০০ গুণ পর্যন্ত বাড়ল, তাহলে তিনি কি সে হারে কর দিয়েছেন? আমি মনে করি আগামী দিনে এটা খুঁজে বের করা এনবিআরের জন্য একটা বড় চ্যালেঞ্জ।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, 'আইএমএফ বলছে আমাদের কর জিডিপি বাড়াতে হবে। আমি মনে করি এই হলফনামা আমাদের জন্য বড় একটি সুযোগ। এখন এনবিআর কি করে সেটাই দেখার বিষয়। তারা কি আগামী দিনে এ বিষয়গুলো নিয়ে বলবেন?'

বিশিষ্ট এই অর্থনীতিবিদ বলেন, আমরা দেখছি যে যতবার নির্বাচন করেছে, তার আয় গাণিতিকভাবে সে পরিমাণ বেড়ে গেছে। যে যতবার নির্বাচন করেছে, তার আয় ততবার বেড়েছে। তার মানে হলো নির্বাচনে আসাই হলো আয় বাড়ানোর ভালো একটা রাস্তা। কিন্তু এভাবে তো আপনি পুরো রাষ্ট্রকে অধিকারহীন করে দিয়ে সংকীর্ণ একটি গোষ্ঠীকে রাষ্ট্রীয় সম্পদের মালিকানা করে দিচ্ছেন।

দেবপ্রিয় আরও বলেন, নির্বাচনী ইশতেহারে আগামী দিনে যে প্রতিশ্রম্নতি দেওয়া হয়েছে, তার কোনো পর্যালোচনাই এবার হলো না। যে কারণে রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের কাছেই পৌঁছালো না। এটা গণতন্ত্রের বড় ধরনের শূন্যতা তৈরি হলো। নির্বাচনকে ঘিরে এই ইশতেহারটা একটা রাজনৈতিক শূন্যতার মধ্য দিয়ে এসেছে। ফলে সরকার, রাজনীতি ও দেশের মানুষ বঞ্চিত হয়েছে। আমাদের মনে রাখতে হবে, জবাবদিহিতা না থাকলে বৈষম্য বাড়ে।

তিনি আরও বলেন, এ ধরনের নির্বাচন এর আগে দেখেছি ১৯৮৮, ১৯৯৬ সালে দেখেছি। নির্বাচন যদি বহু মানুষের আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন না হয়, তাহলে এর ফলাফলও টিকিয়ে রাখা কঠিন। আগামী দিনে অর্থনীতি যেভাবে জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে, মূল্যস্ফীতি আগামী দিনে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে এই উৎকণ্ঠা সবার মাঝে।

এই নির্বাচনকে 'বিশেষ নির্বাচনী তৎপরতা' উলেস্নখ করে তিনি বলেন, এটাকে সাধারণভাবে আমরা নির্বাচন বলছি। কিন্তু আমাকে যদি জিজ্ঞেস করা হয়, আমি বলি এটি একটি বিশেষ নির্বাচনী তৎপরতা। এর ফলে ইতিহাসের কাছে নাগরিকদের দায় বেড়ে গেল। আগামী দিনে আমাদের ভূমিকা আরও বাড়বে।

তরুণ সমাজকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আমরা যদি নিশ্চুপ থাকি, তাহলে আটলান্টিকের ওপাড় থেকে কেউ এসে পরিবর্তন করে দিয়ে যাবে না। আমাদের এক তৃতীয়াংশই তরুণ, তারা যদি ভূমিকা না রাখে, তাহলে কেউ এসে পরিবর্তন করে দিয়ে যাবে না।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে