দুদক চেয়ারম্যান আমিত্বও একটি বড় সমস্যায় পরিণত হয়েছে

প্রকাশ | ২৭ মার্চ ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
সম্মিলিতভাবে সততা, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সাথে দুর্নীতি দমন ও নিয়ন্ত্রণে আত্মনিয়োগ করে মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্নের দুর্নীতিমুক্ত, বৈষম্যহীন এবং দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণে অংশ নেয়ার আহ্‌বান জানিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ। তিনি বলেন, 'বাংলাদেশের অনেক সমস্যার মধ্যে আমিত্বও একটি বড় সমস্যায় পরিণত হয়েছে। আমিই বড়, আমিই শ্রেষ্ঠ এই মানসিকতা পরিহার করতে হবে। যে যেখানে আছেন সে সেখানে নিজেকে রাজা মনে করবেন, এটা হতে পারে না। বরং যে যত বড় দায়িত্বে রয়েছেন তার আচরণ ততধিক নমনীয় হওয়া সমীচীন।' মঙ্গলবার দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান কার্যালয়ে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন দুদক চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, 'দুর্নীতি দমন কমিশনে আমরা যারা কাজ করি তারা প্রত্যেকেই একই সঙ্গে একই সমতলে অবস্থান করি। ভুল করলে তা স্বীকার করার মানসিকতাও থাকতে হবে। আমরা সবাই যদি ভুল স্বীকার করার মানসিকতা পোষণ না করি কিংবা আমিত্ব পরিহার না করি তাহলে এই দেশ এই জাতি এগোবে না।' দুদক চেয়ারম্যান বলেন, 'আমার বই' কিংবা 'আমার পতাকা' এ জাতীয় শব্দ চয়ন না করে 'আমাদের বই' কিংবা 'আমাদের পতাকা' লিখলে হয়তো শিশু হৃদয়ে আমিত্বের বীজ অঙ্কুরিত নাও হতে পারত। দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রতিরোধ অনুবিভাগের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে ইকবাল মাহমুদ বলেন, '২৭ হাজার সততা সংঘ এবং ২ হাজার সততা ইউনিট গঠন করার মাধ্যমে আপনাদের দায়িত্ব অনেক বেড়ে গেছে। এখন প্রতিটি সততা সংঘ ও সততা স্টোরের কার্যক্রম আপনাদের নিবিড়ভাবে মনিটরিং করতে হবে। কারণ আজকের শিক্ষার্থীরাই ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেবে, তাই তাদের আচরণে-মননে সততা ও নৈতিকাতার যে অমূল্য মূল্যবোধ জাগরিত হচ্ছে তা বিকশিত করতে হলে এসব কার্যক্রম মনিটরিংয়ের কোনো বিকল্প নেই।' তিনি বলেন, 'দুর্নীতি দমন কমিশন আইন অনুসারে কমিশনের একটি সুনির্দিষ্ট কর্মপরিধি রয়েছে। কমিশন এই কর্মপরিধির বাইরে গিয়ে একটি কাজও করবে না। প্রতিটি ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে অহংবোধ থেকে বেরিয়ে আসতেই হবে, তা না হলে সংস্থাগুলোও এগোবে না, দেশও এগোবে না। আমি প্রথম থেকেই বলে আসছি প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি কর্মীই সমগুরুত্বের। মহান স্বাধীনতা দিবসের এই আনন্দঘন মুহূর্তে আসুন, আমরা সম্মিলিতভাবে দুর্নীতি দমন এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠায় একই সমতলে থেকে নিজ নিজ দায়িত্ব সততা ও নিষ্ঠার সাথে পালন করি। তাহলেই মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সঠিক সম্মান প্রদর্শন করা হবে এবং স্বাধীনতা দিবস পালনের সার্থকতা থাকবে।' এ সময় দুদক কমিশনার ড. মো. মোজাম্মেল হক খান বলেন, 'আপনি আচরি ধর্ম, পরেরে শেখাও-এই নীতি মেনে আমরা যদি আমাদের অন্তর্দৃষ্টি, আচরণ এবং দৃষ্টিভঙ্গিকে সমন্বিত করে দুর্নীতির বিরুদ্ধে উচ্চকিত হই তবেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণ করা সহজ হবে।' কমিশনার এ এফ এম আমিনুল ইসলাম বলেন, 'স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আমরা যেন আমাদের কর্মে চর্চা করি এবং সবাই মিলেমিশে দেশ গঠনে কাজ করি।' আলোচনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন দুদক সচিব মুহাম্মদ দিলোয়ার বখ্‌ত, মহাপরিচালক (মানি লন্ডারিং) আ ন ম আল ফিরোজ, ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক মো. আকতার হোসেন, পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন, উপ-পরিচালক মো. আবুল হোসেন প্রমুখ। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মহাপরিচালক (তদন্ত) মো. মোস্তাফিজুর রহমান, মহাপরিচালক (লিগ্যাল) মো. মঈদুল ইসলাম, মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) সারোয়ার মাহমুদ, মহাপরিচালক (বিশেষ তদন্ত) সাঈদ মাহবুব খানসহ পরিচালক, উপপরিচালকসহ বিভিন্ন পদমর্যাদার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।