কোটা পযাের্লাচনা-২

জটিল প্রয়োগ পদ্ধতির কারণে সাফল্য অধরা

জটিল প্রয়োগ পদ্ধতির কারণে সংশ্লিষ্ট কোটা প্রাথীর্রা পুরোপুরি সুফল পাচ্ছেন না। ফলে গত সাতটি বিসিএসে (২৮ থেকে ৩৪তম) কোটার পঁাচ হাজার ৬০৬টি পদ শূন্য থেকে গেছে

প্রকাশ | ২০ জুলাই ২০১৮, ০০:০০

দেলওয়ার হোসাইন
বিসিএস পরীক্ষাসহ অন্যান্য নিয়োগ পরীক্ষায় সরকারের বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। তবে জটিল প্রয়োগ পদ্ধতির কারণে সংশ্লিষ্ট কোটা প্রাথীর্রা পুরোপুরি এর সুফল পাচ্ছেন না। ফলে গত সাতটি বিসিএসে (২৮ থেকে ৩৪তম) কোটার পঁাচ হাজার ৬০৬টি পদ শূন্য থেকে গেছে। কোটা পদ্ধতির এই জটিল প্রক্রিয়া নিরসনের জন্য সরকার এবার সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে। জানা যায়, সরকারের কোটা-সংক্রান্ত গঠিত কমিটি কোটা প্রয়োগের অতীত বিষয় পযাের্লাচনা করছে। এ ছাড়া বিদ্যমান পদ্ধতি বাতিল বা সংস্কার করলে কি লাভ হতে পারে, সে বিষয়েও পযাের্লাচনা করে দেখছে। তবে কোটার বিদ্যমান পদ্ধতির সংস্কার বা বাতিলের প্রয়োজন হলে এর যৌক্তিকতাসহ প্রধানমন্ত্রীকে সুপারিশ করবে এই কমিটি। এরপর সরকার এ বিষয়ে চ‚ড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সরকারি কমর্ কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক যায়যায়দিনকে বলেন, বিদ্যমান কোটার জটিল প্রয়োগ পদ্ধতির কারণে কোটার সুফল প্রাথীর্রা পুরোপুরি পান না। এ কারণে অনেক পদ শূন্য থেকে যায়। সরকারের বিদ্যমান এই পদ্ধতি সংস্কারের জন্য পিএসসি থেকে একাধিকবার সুপারিশ করা হয়েছে। বিদ্যমান পদ্ধতির কোনো সংস্কার না হওয়ায় কোটা সংরক্ষণের নিয়ম নিদির্ষ্ট সময়ের জন্য শিথিলের সুপারিশও করেছে পিএসসি। সম্প্রতি কোটার পদ শূন্য থাকলে সেটা মেধা থেকে নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তিনি আরও বলেন, পদ শূন্য থাকায় দেশের মানুষ সরকারের সেবা থেকে বঞ্চিত হয়। আর কোটার জন্য বিশেষ বিসিএস আয়োজন করতেও অনেক সময় লাগে। সবের্শষ আদমশুমারি অনুযায়ী, দেশে নারী-পুরুষের সংখ্যা প্রায় সমান। বিভিন্ন পরীক্ষায় নারীরা পুরুষদের চেয়েও ভালো ফলাফল করছেন। প্রশাসনের গুরুত্বপূণর্ পদগুলোতেও নারীরা ভালো কাজ করছেন। অথচ বিসিএসে নারীদের জন্য ১০ শতাংশ কোটা থাকার পরও পুরুষদের চেয়ে অনেক পিছিয়ে রয়েছেন তারা। গত ছয়টি বিসিএস পযাের্লাচনা করে দেখা যায়, ৩০তম বিসিএসে নিয়োগ পেয়েছেন পুরুষ ১৬২২ জন বা ৬৮ দশমিক ১ শতাংশ, নারী ৭৬৩ জন বা ৩১ দশমিক ৯৯ শতাংশ। ৩১তম বিসিএসে পুরুষ ১৪৭৫ জন বা ৭০ দশমিক ৩৭ শতাংশ, নারী ৬২১ জন বা ২৯ দশমিক ৬৩ শতাংশ। ৩২তম বিসিএসে পুরুষ ৭৫২ জন বা ৪৪ দশমিক ৯০ শতাংশ, নারী ৯২৩ জন বা ৫৫ দশমিক ১০ শতাংশ। ৩৩তম বিসিএসে পুরুষ ৫২৫২ জন বা ৬১ দশমিক ৭৪ শতাংশ, নারী ৩২৫৫ জন বা ৩৮ দশমিক ২৬ শতাংশ। ৩৪তম বিসিএসে পুরুষ ১৪০০ জন বা ৬৪ দশমিক ৩৭ শতাংশ, নারী ৭৭৫ জন বা ৩৫ দশমিক ৬৩ শতাংশ। ৩৫তম বিসিএসে পুরুষ ১৫৬৫ জন বা ৭২ দশমিক ৫ শতাংশ, নারী ৬০৭ জন বা ২৭ দশমিক ৯৫ জন নিয়োগ পেয়েছেন। একইভাবে জেলা কোটার ক্ষেত্রে দেখা যায়, নিয়মিতভাবে ঢাকা বিভাগ সবচেয়ে বেশি এবং সিলেট বিভাগ সবচেয়ে কম নিয়োগ পেয়েছে। এতে সারাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হওয়ার পরও কয়েকটি জেলা কোটা জটিলতার কারণে পিছিয়ে রয়েছে। কোটার শূন্যপদগুলো পূরণ করতে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ৩২তম বিশেষ বিসিএস নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় পিএসসি। ওই বিসিএসেও এক হাজার ১৩০টি পদ শূন্য রাখতে হয়। এ ছাড়া দেশে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সংখ্যা ১ শতাংশের কম। অথচ তাদের জন্য কোটা রাখা হয়েছে ৫ শতাংশ। তবে সরকারি চাকরিতে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর প্রাথীের্দর জন্য ৫ শতাংশ কোটা সংরক্ষিত থাকলেও বিসিএসের নিয়োগে ৮৭ শতাংশ পদই পূণর্ হয় না। ফলে কোটা সংরক্ষণের প্রকৃত সুবিধা পেতে বিসিএস প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষায় ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর পরীক্ষাথীের্দর জন্য একাধিকবার শতর্ শিথিলের দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এ বিষয়ে চট্টগ্রাম-বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং বলেন, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর কোটার পূণর্ সদ্ব্যবহার করতে প্রয়োজনে আইনের পরিবতর্ন করতে হবে। এসব জাতির মানুষ রাষ্ট্রীয় উন্নয়নে অনেক ভ‚মিকা রাখতে পারে, সে বিষয়টি অনুধাবন করতে হবে। জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বতর্মানে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি ও জেলাগুলো ছোট হওয়ায় আগের মতো প্রকট বৈষম্য নেই। তাই জেলা কোটা তুলে দিয়ে মেধা কোটা আরও বাড়ানো যেতে পারে। এতে মেধাবীরা উপকৃত হবে। একাধিক বাষির্ক প্রতিবেদনে পিএসসিও বলেছে, কোটার প্রয়োগিক জটিলতার কারণে প্রকৃতপক্ষে কোটা পদ্ধতি কোনো কোনো ক্ষেত্রে শতভাগ অনুসরণ করা সম্ভব হয়ে উঠে না। কারণ, প্রথমত প্রিলিমিনারি, লিখিত এবং মৌখিক পরীক্ষায় পাস করলে তবেই প্রাথীর্ কোটা সুবিধা পান। যা কোটা প্রবতের্নর তাৎপযের্র সঙ্গে সাংঘষির্ক। এ ক্ষেত্রে ভারতের ইউনিয়ন পাবলিক সাভির্স কমিশন (ইউপিএসসি) কোটা পদ্ধতি বাস্তবায়নে যে প্রক্রিয়া অনুসরণ করে, সেই প্রক্রিয়া অনুসরণ করা যেতে পারে। ভারতে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা থেকে কোটা অনুসরণ করা শুরু হয়।