কমেছে কুয়াশার দাপট

টানা রোদে শীতের তীব্রতা কমার আশা

সর্বনিম্ন ৯.৭ ডিগ্রি তেঁতুলিয়ায় পঞ্চগড়ে মৃদু শৈতপ্রবাহ অব্যাহত রাতে বাড়তে পারে শীতের তীব্রতা

প্রকাশ | ২০ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
মাঘের বৃষ্টির পর দেশজুড়ে কুয়াশার দাপট কিছুটা কমেছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে দিনের তাপমাত্রা সামান্য বাড়লেও শুক্রবার দেশের ছয় জেলার তাপমাত্রা ছিল ১০ ডিগ্রির নিচে। এদিন দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড হয়েছে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায়। একদিন আগে যা ছিল ৮.৭ ডিগ্রি। টানা রোদের কারণে এদিন ঢাকার তাপমাত্রা প্রায় ২ ডিগ্রি বেড়ে হয়েছে ১৫ ডিগ্রি, আগেরদিন যা ছিল ১৩.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, উপমহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ বিহার ও তৎসংলগ্ন এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। এ অবস্থায় সারা দেশে রাতের তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমতে পারে। এর ফলে আরও বেশি ঠান্ডা অনুভূত হতে পারে। শুক্রবার সকালে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের নদী অববাহিকায় মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা এবং অন্যত্র হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে। কুয়াশার কারণে বিমান চলাচল, অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল এবং সড়ক যোগাযোগে সাময়িক বিঘ্ন ঘটতে পারে। এদিকে বৃহস্পতিবার গভীর রাত থেকে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি হয়েছে নোয়াখালীতে। এতে জনগণের ভোগান্তি পৌঁছেছে চরমে। শুক্রবার জেলায় ১১.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড হলেও ঘনকুয়াশা আর হিমশীতল বাতাসের কারণে কনকনে শীত অনুভূত হয়েছে জেলার সর্বত্র। শুক্রবার সকাল থেকেই রাজধানী ঢাকার আকাশে সূর্যের দেখা পাওয়া গেছে। তাপও ছড়াচ্ছে হালকা হালকা। পাতলা কুয়াশার আবরণও ছিল দিনভর। তবে তাপমাত্রা আগের চেয়ে বেড়েছে। বৃগস্পতিবার দেশের প্রায় ৮ অঞ্চলের তাপমাত্রা ছিল ১০ ডিগ্রিতে আর শুক্রবার ছয় অঞ্চলের তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে। এদিকে ঢাকার তাপমাত্রা বেড়েছে প্রায় ২ ডিগ্রি। আবহাওয়া বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল তেঁতুলিয়ায় ৯.৭ ডিগ্রি, যা গতকাল ছিল দিনাজপুরে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়া রাজারহাটে ১০.১, নিকলি ও ডিমলাতে ১০.৫, শ্রীমঙ্গলে ১০.৭, দিনাজপুরে ১০.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। অন্যদিকে ঢাকায় ১৫ ডিগ্রি, যা গতকাল ছিল ১৩.১ ডিগ্রি। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা তেঁতুলিয়ায় শুক্রবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড হয়েছে তেঁতুলিয়ায়। গত প্রায় দুই সপ্তাহ ধরেই এ অঞ্চলে ঠিকমতো সূর্যের দেখা মিলছে না। হঠাৎ রোদের দেখা মিললেও তাপ ছড়ানোর আগেই ঘনকুয়াশা আর মেঘের আড়ালে ঢেকে যায় সূর্য। দিনভর উত্তরের হিমশীতল বাতাসে দুর্ভোগ বেড়েছে ছিন্নমূল ও খেটে খাওয়া মানুষের। বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন রিকশা ভ্যান চালক, কৃষি শ্রমিকসহ কর্মজীবী মানুষ। তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাসেল শাহ বলেন, 'মেঘাচ্ছন্ন আকাশ আর ঘনকুয়াশার কারণে প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে ঠিকমতো সূর্যের দেখা নেই।' কুড়িগ্রামে বিপর্যস্ত জনজীবন শুক্রবার কুড়িগ্রামের তাপমাত্রা ছিল ১০.২ সেলসিয়াস। কুড়িগ্রামের হাসপাতাল পাড়া এলাকার বাসিন্দা মো. আব্দুল আজিজ বলেন, 'গত ৮-১০ বছরে কুড়িগ্রামে এমন পরিস্থিতি দেখিনি। আজও সেই কুয়াশা পড়ছে। চারিদিক ঢেকে গেছে, বয়স্ক মানুষদের নিয়ে খুব সমস্যা হচ্ছে।' কুড়িগ্রামের রাজারহাট আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার বলেন, 'গত এক সপ্তাহ ধরে জেলায় ৯ থেকে ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে তাপমাত্রা উঠানামা করছে। গত ১০-১২ বছরে জেলায় এমন শীত পড়েনি। কেন না এবছর উত্তরীয় হিমেল হাওয়ার গতি ঘণ্টায় ৮-১২ কিমি। ফলে ঠান্ডার তীব্রতা বেশি অনুভূত হচ্ছে। শুক্রবার তাপমাত্রা ১০.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রয়েছে। এরকম তাপমাত্রা আরও দুই একদিন অব্যাহত থাকতে পারে।' পঞ্চগড়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত পঞ্চগড়েও গত দুইদিন ধরে চলছে মৃদু শৈতপ্রবাহ। হিমালয়ের হিমেল হাওয়ায় হাড়কাঁপানো শীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে মানুষ ও জীবজন্তু। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষ পড়েছেন চরম দুর্ভোগে। শুক্রবার সকালে ৯.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে এ জেলায়। পাথর শ্রমিক আবু তাহের জানান, টানা শীতে কঠিন পরিস্থিতিতে পড়েছেন তিনি। জীবিকার তাগিদে শীত উপেক্ষা করেই দিনভর নদীতে বরফগলা পানিতে পাথর তুলতে হচ্ছে তার। জীবিকার অন্য কোনো পথ না থাকায় ঠান্ডা পানিতে কাজ করে পরিবারের খাবারের জোগান দিচ্ছেন। বাংলাবান্ধায় পাথর শ্রমিকের কাজ করেন ফিরোজা ও কদবানু। তাদের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, নদীতে পাথর উঠছে কম। তাই তাদের কাজও কম। সকালে প্রচন্ড ঠান্ডার কারণে কাজে যেতে দেরি হলে অনেক সময় মহাজন কাজে নিতে চান না। কাজ না করলে তাদের পরিবার চলে না। তাই এই ঠান্ডার মধ্যে বেরিয়েছেন কাজের জন্য। জেলার প্রথম শ্রেণির তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাসেল শাহ জানান, গত দুই দিন ধরে এ জেলায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বইছে। সপ্তাহের বেশি সময় ধরে ভোর থেকে ঘন কুয়াশায় আচ্ছন্ন এ জনপদ। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার সময় সূর্যের মুখ দেখা গিয়েছিল। তবে সূর্যের সামান্য তাপেও ঠান্ডা কমেনি। জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, 'শীতপ্রবণ জেলা হিসেবে প্রতি বছর পঞ্চগড়ে সরকারি-বেসরকারিভাবে পর্যাপ্ত কম্বল বিতরণ করা হয়। এবারও প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল এবং ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয় থেকে এ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ২৮ হাজার শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে।' গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টিতে নোয়াখালীতে জনজীবন বিপর্যস্ত নোয়াখালীতে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি হয়েছে। সেইসঙ্গে অনুভূত হয়েছে হাড়কাঁপানো শীত। এতে মানুষের ভোগান্তি পৌঁছেছে চরমে। বৃষ্টির ফলে দিনের তাপমাত্রা আরও কিছুটা কমবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। নোয়াখালী সদর উপজেলার বাসিন্দা গোলাম হায়দার চৌধুরী বলেন, 'বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি হয়েছে। সূর্যের দেখা গত বেশ কিছুদিন নাই বললেই চলে। যারা ভাসমান মানুষ আছেন বা ফুটপাতে থাকেন তারা খুব কষ্টে আছেন।' রিকশাচালক আলী হোসেন বলেন, 'কুয়াশা ও শীতের তীব্রতার কারণে সকালে গাড়ি নিয়ে বের হতে কষ্ট হয়। হাত-পা ঠান্ডায় জমে যায়। পেটের দায়ে বের হলেও যাত্রী নেই। আয় অর্ধেকে নেমে এসেছে। আয় না করলে ভাত জুটবে না তাই বাধ্য হয়েই রাস্তায় নামি।' নোয়াখালী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, 'নোয়াখালীতে আজ সর্বনিম্ন ১১.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এ ছাড়া মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপের প্রভাবে বিভিন্ন স্থানে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। তবে এ বৃষ্টিপাত স্থায়ী হবে না।' নোয়াখালী জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান বলেন, 'শীতে যেন কোনো অসহায় মানুষ কষ্ট না পায় সেজন্য আমাদের সব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কম্বল বিতরণ করছেন। এছাড়া ব্যক্তিগত উদ্যোগে অনেকেই শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। আমি মনে করি, প্রতিটি সচ্ছল মানুষের উচিত শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানো।'