সহপাঠিনীর ‘রাগের’ পরিণতিতে হাসপাতালে ঢাবি ছাত্র

প্রকাশ | ২০ জুলাই ২০১৮, ০০:০০

যাযাদি রিপোটর্
ঢামেকে চিকিৎসাধীন ঢাবি শিক্ষাথীর্ শেখ আল আমিন
তারা দুইজনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনার শিক্ষাথীর্; বন্ধুও ছিলেন তারা, বলছেন সহপাঠীরা; কিন্তু এখন দুইজন অনেকটাই শত্রæতার সম্পকের্। এই দুইজনের একজন চতুথর্ বষের্র ছাত্র শেখ আল আমিন এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে; পেটানো হয়েছে তাকে। আল আমিনের দাবি, তার ওই সহপাঠী ‘অন্যদের দিয়ে তাকে পিটিয়েছেন’। দুইজনের অন্যজন রিফাত বেলায়েত অস্বীকার করেছেন পেটানোর অভিযোগ। তবে তিনি স্বীকার করেছেন, ‘ভাব নেয়’ বলে আল আমিনের ওপর ভীষণ রাগ তার। আল আমিনের ওপর হামলায় জড়িতদের শাস্তি দাবিতে তার সহপাঠীরা বুধবার উপাচাযের্র কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন, তাদের মধ্যে অবশ্য ছিলেন না রিফাত। অন্যদিকে রিফাত আবার নিজের নিরাপত্তা চেয়ে প্রক্টরের কাছে একটি আবেদন করেছেন। মাথা ও স্প্যাইনাল কডের্ জখম নিয়ে হাসপাতালে শয্যাশায়ী আল আমিন এখনো কোনো অভিযোগ না দিলেও বিষয়টি গোচরে এসেছে প্রক্টর অধ্যাপক একেএম গোলাম রাব্বানীর কাছে। তিনি বলেন, আমরা প্রাথমিক অনুসন্ধানে দেখেছি, এটা অত্যন্ত ব্যক্তিগত বিষয়। তাই আমরা তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছি। বিভাগের শিক্ষাথীের্দর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হবিগঞ্জের গরিব ঘরের সন্তান আল আমিনের সঙ্গে প্রথম বষের্ই ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয় অবস্থাপন্ন ঘরের রিফাতের। তাদের মধ্যে ‘প্রেম’ ছিল বলেই মনে হয়েছে অন্য সহপাঠীদের। তবে এক বছর আগে দুইজনের সম্পকের্ ফাটল দেখেন সহপাঠীরা। এরপর নানা সময় আল আমিনের সঙ্গে রিফাতকে দুবর্্যবহার করতেও দেখেছেন তারা। এ কারণে বিভাগের এক শিক্ষক তাদের দুইজনকে মৌখিকভাবে একে অন্যের সঙ্গে মিশতেও মানা করে দিয়েছিলেন। এরপর গত সোমবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে ঘটে আল আমিনের ওপর হামলার ঘটনা। সূযের্সন হলের ব্যাডমিন্টন কোটের্র সামনে আল আমিনকে বেদম পেটায় কয়েকজন। তখন রিফাতও উপস্থিত ছিলেন সেখানে। আল আমিন বলেন, ‘আমরা ভালো ফ্রেন্ড ছিলাম। তবে একটি সমস্যার পর থেকে আমি আর ওর সঙ্গে কথা বলি না। ও আমাকে প্রায়ই মারার হুমকি দিত।’ সম্পকের্ ফাটল ধরার বিষয়ে এই শিক্ষাথীর্ বলেন, ‘ও পরীক্ষার শিটের জন্য, ক্যাম্পাসে ঘোরার জন্য আমার সঙ্গে ভালো সম্পকর্ রাখত বলে আমার মনে হয়েছে। ও আমাকে বলত, আমাকে নাকি পছন্দ করে; আবার অন্য ছেলের সঙ্গেও সম্পকর্ রাখত। তাই আমি সরে যেতে চেয়েছি।’ ঘটনার বণর্না দিয়ে আল আমিন বলেন, ‘সোমবার সন্ধ্যার পর আমি সামাজিক বিজ্ঞান চত্বরে টিবারিও নামে আমার এক রোমানিয়ান ফ্রেন্ডের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছিলাম। এমন সময় অপরিচিত একটি নম্বর থেকে ফোন আসে, বলে ‘ভাই আমি আরিফ, আপনার হলের ছোট ভাই। আপনি কোথায়?’ আমি উত্তর দেই। সে জানায়, সে আমার সঙ্গে দেখা করতে আসবে। কিন্তু আসেনি। কিছুক্ষণ পর আমি আমার ওই বিদেশি বন্ধুকে আমার সূযের্সন হল দেখাতে নিয়ে যাই। ব্যাডমিন্টন কোটর্ পযর্ন্ত আসলে দুটি মোটরসাইকেল আমার সামনে এসে দঁাড়ায় এবং পথরোধ করে। এরপর রিফাত সেখানে এসে আমাকে দেখিয়ে দেয়। প্রায় ১৫ জন ছিল ওর সঙ্গে। আমাকে ওরা কিল-ঘুষি মারতে মারতে মাথায় আঘাত করা শুরু করে। একপযাের্য় আমি অজ্ঞান হয়ে যাই। কারা আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসে, সেটাও জানতাম না।’ আল আমিনের ফোনবুকে দেখে অনুসন্ধান চালিয়ে জানা যায়, যে নম্বর থেকে তাকে ফোন দেয়া হয়েছিল, সেদিন সেটা ব্যবস্থাপনা বিভাগের তৃতীয় বষের্র শিক্ষাথীর্ আমজাদ মঞ্জুর। আমজাদ মঞ্জু সূযের্সন হল ছাত্রলীগের উপ-ছাত্র ও ছাত্রবৃত্তি-বিষয়ক সম্পাদক। তিনি হল ছাত্রলীগের সভাপতি সারোয়ারের অনুসারি। সারোয়ার তার কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সবার সামনেই বলেন, আল আমিনের বাসা হবিগঞ্জ বলে তিনি সিলেট যাওয়ার বিষয়ে তথ্যের জন্য ফোন দিয়েছিলেন। তবে আমজাদ দিয়েছেন ভিন্ন তথ্য। তিনি বলেন, রুমমেট এক ‘বড় ভাই’য়ের কথায় তিনি আল আমিনকে সেদিন ফোন দিয়েছিলেন। ‘রুমমেট ভাই বলল, তাই ফোন করে উনাকে (আল আমিন) হলে আসতে বলেছি।’ দুই জায়গায় দুই তথ্য দিচ্ছেন কেনÑ এ প্রশ্নে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি মঞ্জু। আমজাদ মঞ্জুর ওই রুমমেট তামজীদ হোসেন তামিম বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক। তিনি ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষাথীর্। হামলাকারী হিসেবে আরও একজনের নাম বলেছেন তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষাথীর্রা। তিনি মাস্টারদা সূযের্সন হল ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এবং শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের স্নাতকোত্তরের শিক্ষাথীর্ এমএইচ পারভেজ। তাদের সবার বাড়িই নোয়াখালী জেলায়। এর মধ্যে পারভেজ নোয়াখালী ছাত্র কল্যাণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক, তামজিদ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, মঞ্জু আইসিটি-বিষয়ক সম্পাদক এবং রিফাত বেলায়েতও এই সংগঠনে সক্রিয়। আমজাদ মঞ্জু জেলা সমিতির কল্যাণে রিফাতকে চেনেন বলে জানিয়েছেন। তবে রিফাত বলেছেন, তিনি আমজাদ মঞ্জুকে চেনেন না। আর পারভেজ বলেছেন, রিফাত তার বন্ধু হলেও ঘটনার সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা নেই। আমি তখন হলে ঘুমাচ্ছিলাম। রিফাত আর আল-আমিন দুইজনেই আমার বন্ধু। আমি এ ঘটনা সম্পকের্ কিছুই জানতাম না। পরে জানতে পেরে আল-আমিনকে হাসপাতালে দেখতে গেছি। ঘটনার প্রেক্ষাপট জানতে চাইলে রিফাত বলেন, ‘এক বছর আগে আল আমিন আমার বাসায় এসে আমাকে মেরেছিল। আমি তাকে আটকাতে চেয়েছিলাম, কিন্তু আমার মা তাকে ছেড়ে দেয়। তার প্রতি আমার প্রচÐ ক্ষোভ ছিল। আমি যখনই তার কাছে কিছু বলতে যাই, সে আমাকে অপমান করে, প্রচÐ অপমান করে, টিজ করে, আমার রাগ আরও বেড়ে যায়।’ ঘটনার দিনের বণর্নায় রিফাত বলেন, ‘সেদিন ও (আল আমিন) আগে ক্লাসে আসে, আমি পরে আসি। আমি চাই, সে আমার প্রতি নত থাকুক, কিন্তু সে এমন মুখভঙ্গি করে যে, আমার রাগ আরও বেড়ে যায়। সেদিন রাতে তার সঙ্গে আমার শ্যাডোতে দেখা হয়। আমি ওকে বলি, তুই আমার সঙ্গে এমন করিস কেন? ‘এরপর কথা কাটাকাটি হয়। সে আমার দিকে তেড়ে আসে। আমি চিৎকার করলে তখন আশপাশের ছেলেরা এসে ওকে মেরেছে। আমি ছিলাম ওখানে।’ আল আমিনের ওপর হামলাকারীদের কাউকে চেনেন না বলে দাবি করেন রিফাত। ঘটনা শ্যাডোর হলে; সূযের্সন হলের ব্যাডমিন্টন খেলার স্থানে কেন গেলেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যাব না? সে আরেকটা ছেলের সঙ্গে কথা বলতে বলতে যাচ্ছিল। তাকে দেখলেই আমার রাগ লাগে।’ খবর বিডি নিউজ