এবার আমাদের কূটনীতি হবে অর্থনৈতিক
বাণিজ্য মেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী
প্রকাশ | ২২ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি রিপোর্ট
প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনা বলেছেন, 'আমাদের এখন আর রাজনৈতিক না, কূটনীতি হবে অর্থনৈতিক। আমাদের প্রত্যেকটা কূটনৈতিক মিশনে এই মেসেজ দিয়েছি। ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার কীভাবে আমরা ঘটাব, সেটার ওপর আমাদের কূটনৈতিক মিশনগুলো কাজ করছে, কাজ করবে। সেটাই আমরা চাচ্ছি।'
রোববার দুপুরে বাংলাদেশ-চায়না ফেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে ২৮তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, 'আন্তর্জাতিক বাজারে আমাদের পণ্যের চাহিদা খুঁজতে হবে। আমরা রপ্তানিতে সুনির্দিষ্ট কয়েকটি পণ্যের ওপর নির্ভরশীল। একটা-দুইটা পণ্যের ওপর নির্ভরশীল থাকলে আমাদের চলবে না। আমাদের রপ্তানিকে বহুমুখী করতে হবে, এটা আমি বারবার বলছি। সে ক্ষেত্রে সুযোগ আরও দিতে হবে। আমরা যাদের পণ্যকে সবচেয়ে বেশি সুযোগ দিচ্ছি, তারাই সাফল্য অর্জন করছে। তাহলে আমাদের অন্যান্য পণ্যগুলো কেন বাদ যাবে। তাদেরও আমাদের সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে হবে। যাতে তারাও সেভাবে সুযোগ পায়, ভালোভাবে ব্যবসা করতে।'
তিনি আরও বলেন, 'আমাদের পাটজাত পণ্য রপ্তানি সুযোগ রয়েছে। এটা হচ্ছে পরিবেশবান্ধব একটা পণ্য। এ পণ্যের বিশ্ব বাজারে রয়ে গেছে। পাটকে বহুমুখী ব্যবহারও একটা সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে গবেষণা অব্যাহত রয়েছে। আমরা ধান থেকে শুরু করে তরি-তরকারি সবকিছু গবেষণা করে উৎপাদন বৃদ্ধি শুরু করেছি। যেগুলো শুধুমাত্র শীতকালে পাওয়া যেত এখন ১২ মাস পাওয়া যায়। পাটকে বহুমুখী ব্যবহার করে রপ্তানি করার
ভালো সুযোগ রয়েছে।'
প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'চামড়া আমাদের দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ পণ্য। চামড়া সংরক্ষণ এবং চামড়া বহুমুখী ব্যবহার করা, চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি করা। এ ক্ষেত্রে আমাদের আরও গুরুত্ব দিতে হবে। গার্মেন্টসে যে সুযোগ দিয়েছি, অন্যান্য ক্ষেত্রে সেই সুযোগ দেওয়া আমাদের দরকার।'
এ সময় হস্তশিল্পজাত পণ্যকে ২০২৪ সালের বর্ষপণ্য হিসেবে ঘোষণা দেন এবং ২৮তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার উদ্বোধন ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, তার কাছে ক্ষমতা কোনো ভোগের বস্তু নয়। তার কাছে ক্ষমতা হলো দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের একটা সুযোগ; মানুষের কল্যাণে কাজ করার সুযোগ; মানুষকে সেবা দেওয়ার একটা সুযোগ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, '৭ জানুয়ারির নির্বাচনে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে আপনাদের সামনে উপস্থিত হতে পেরেছি। বাংলাদেশের জনগণের প্রতি আমি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই। তারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোটের মাধ্যমে আমাদের আবার সেবা করার সুযোগ দিয়েছে।'
তিনি আরও বলেন, '৯৬ সাল থেকে যখন সরকার গঠন করেছি সেখান থেকে একটা প্রচেষ্টা, আর্থসামাজিকভাবে বাংলাদেশকে উন্নত করা। বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা। বাংলাদেশের মানুষ যেন বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে চলতে পারে, সেই পদক্ষেপ নেওয়া।'
শেখ হাসিনা বলেন, 'ব্যবসা-বাণিজ্যের যদি প্রসার না ঘটে, কোনো দেশ সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারে না। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘোষণা দিয়েছিলাম, আজকে ডিজিটাল বাংলাদেশ হয়েছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট আমরা উৎক্ষেপণ করেছি। সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করা। আমরা প্রমাণ করেছি, বাংলাদেশের জনগণকে কেউ চ্যালেঞ্জ দিয়ে দাবায় রাখতে পারবে না।'
বাণিজ্য মেলার পর্দা উঠল
সাধারণত বছরের প্রথম দিন মেলা শুরু হলেও এবার সংসদ নির্বাচনের কারণে নির্ধারিত সময়ের ২০ দিন পিছিয়ে মেলা শুরু হলো। দেশের পণ্য প্রদর্শনীর সবচেয়ে বড় এ আসরের আয়োজন করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রপ্তানি উন্নয়ন বু্যরো-ইপিবি।
বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড, তুরস্ক, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, হংকং, সিঙ্গাপুর, নেপালসহ বিভিন্ন দেশের ব্যবসায়ীরা অংশগ্রহণ করছেন এবারের মেলায়। প্যাভিলিয়ন, মিনি প্যাভিলিয়ন, স্টল, রেস্তোরাঁ মিলিয়ে ৩৫১টি স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, যা গত বছর ৩৩১টি ছিল।
এবারের মেলায় স্টলের সংখ্যার পাশাপাশি বেড়েছে দর্শনার্থীদের প্রবেশমূল্যও। গত বছর সাধারণ দর্শনার্থীদের জন্য মেলায় প্রবেশমূল্য ৪০ টাকা এবং ১২ বছরের কম বয়সিদের জন্য ২০ টাকা ছিল। যা এবার বেড়ে যথাক্রমে ৫০ টাকা ও ২৫ টাকা করা হয়েছে।
মেলার প্রবেশদ্বার তৈরি করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু টানেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদু্যৎকেন্দ্রের আদলে। প্রবেশ গেটের সামনের দিকে পদ্মা সেতু, বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল, মেট্রোরেলের আদলে প্রতিচ্ছবি তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া মেলায় থাকছে বঙ্গবন্ধু কর্নার।
প্রদর্শনী কেন্দ্রের ১৪ হাজার ৩৬৬ বর্গমিটার আয়তনের দুটি হলো ছাড়াও সামনে ও পেছনে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্যাভিলিয়ন, মিনি প্যাভিলিয়ন, স্টল নির্মাণ করা হয়েছে।
মাসব্যাপী এ মেলা আগের মতোই সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলবে। আর সাপ্তাহিক ছুটির দিনে মেলা চলবে রাত ১০টা পর্যন্ত।
মেলায় দর্শনার্থীদের যাতায়াতের জন্য রাজধানীর ফার্মগেট ও কুড়িল বিশ্বরোড থেকে সরাসরি মেলা প্রাঙ্গণে আসার জন্য বিআরটিসির বাসের ব্যবস্থা হয়েছে। মেলায় আসতে ফার্মগেট থেকে ৭০ টাকা ও কুড়িল থেকে ৩৫ টাকা মূল্যের টিকিট কাটতে হবে দর্শনার্থীদের।