শ্রমিক-কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিলের ২৫ কোটি ২২ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দেওয়া অভিযোগপত্র ও পরোয়ানার বিষয়ে হাজিরা ও আত্মসমর্পণ করতে ৩ মার্চ বিচারিক আদালতে যাবেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের এনেক্স ভবনের সামনে ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তার আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুলস্নাহ আল মামুন।
এর আগে শ্রমিক-কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিলের ২৫ কোটি ২২ লাখ টাকা আত্মসাতে গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গত ১ ফেব্রম্নয়ারি উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান আদালতে এ অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
মামলায় দুদক ১৩ জনকে আসামি করলেও অভিযোগপত্রে জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশনের দপ্তর সম্পাদক কামরুল হাসানের নাম যুক্ত করা হয়।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল ইসলাম,
সাবেক এমডি আশরাফুল হাসান, পরিচালক পারভীন মাহমুদ, নাজনীন সুলতানা, শাহজাহান, নূরজাহান বেগম ও এস এম হাজ্জাতুল ইসলাম লতিফী, আইনজীবী ইউসুফ আলী ও জাফরুল হাসান শরীফ, গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি কামরুজ্জামান, সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ মাহমুদ হাসান ও গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের প্রতিনিধি মাইনুল ইসলাম।
আসামিদের মধ্যে পারভীন মাহমুদ জামিনে রয়েছেন। বাকি ১৩ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা।
দুদকের সহকারী পরিচালক (প্রসিকিউশন) আমিনুল ইসলাম বলেন, 'অবহিতকরণের জন্য আজ (বৃহস্পতিবার) অভিযোগপত্র আদালতে উপস্থাপন করা হয়েছে। আগামী ৩ মার্চ এ মামলার ধার্য তারিখ রয়েছে। সেদিনই এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানি হবে।'
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আসামিরা ২৫ কোটি ২২ লাখ টাকা আত্মসাৎ ও অবৈধভাবে রূপান্তর করায় তাদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ আনা হয়েছে। গত বছরের ৩০ মে দুদকের উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান বাদী হয়ে ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে মামলাটি করেন।
হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ: এদিকে, নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের গ্রামীণ টেলিকম ট্রাস্টকে ৫০ কোটি টাকা জমা দিয়েই আপিল করার নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। বিচারপতি মোহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকার ও বিচারপতি সরদার মো. রাশেদ জাহাঙ্গীরের সই করা হাইকোর্টের ২৪ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ সেই রায়ের অনুলিপি প্রকাশ করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে ড. ইউনূসের আইনজীবী আবদুলস্নাহ আল মামুন বলন, এ রায়ের বিরুদ্ধে তারা আপিল আবেদন করবেন। এর আগে গত ১২ ফেব্রম্নয়ারি ড. মুহাম্মদ ইউনূসের গ্রামীণ টেলিকম ট্রাস্টকে ৫০ কোটি টাকা জমা দিয়ে ২০১১ থেকে ২০১৩ করবর্ষের আয়কর আপিল দায়ের করার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
গত ২৮ জানুয়ারি আদালতে উপস্থিত হয়ে শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় শ্রম আপিল আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আবেদন করেন ড. ইউনূস ও গ্রামীণ টেলিকমের অপর তিন কর্মকর্তা। সেই আবেদন খারিজ করে এ রায় দেন হাইকোর্ট।
রায়ে আদালত বলেন, আইন অনুযায়ী যেটা দেওয়ার সেটাই ড. ইউনূসকে দিতে হবে। এখানে অনুকম্পা দেখানোর কোনো সুযোগ নেই।
এ বিষয়ে সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার তাহমিনা পলি জানান, ২০২০ সালে নভেম্বরে ২০১১ থেকে ২০১৩ দুই বছরের প্রায় ২৫০ কোটি টাকা আয়কর দাবি করে গ্রামীণ কল্যাণ ট্রাস্টকে নোটিশ পাঠায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। এরপর জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছে গ্রামীণ কল্যাণ ট্রাস্ট অর্থ নেই বলে মওকুফ চায়। ওই আবেদন এনবিআর প্রত্যাখ্যান করার পরে তারা আয়করের টাকা মওকুফ চেয়েছিলেন। কিন্তু তখন তাদের একটি অ্যাকাউন্টেই প্রায় ৩৫০ কোটি থেকে ৪০০ কোটি টাকার মতো ছিল। কিন্তু অ্যাকাউন্টে অর্থ রয়েছে জানিয়ে এনবিআর অর্থ চেয়ে নোটিশ করে। কিন্তু গ্রামীণ টেলিকম সেই নোটিশ চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করে। রিটের শুনানি নিয়ে নোটিশ কেন বেআইনি বলা হবে না, এ নিয়ে রুলও জারি করেন আদালত।
এরপর গত তিন বছরে বিভিন্ন আদালত ঘুরে মামলাটি হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চে আসে। সেটি শুনানি শেষে গ্রামীণ টেলিকমের রিট আবেদন খারিজ করেন আদালত। সেই সঙ্গে গ্রামীণ টেলিকমকে আদেশ দেন নিয়ম অনুযায়ী দাবি করা আয়করের ২৫ শতাংশ টাকা আগে জমা দিয়ে এরপর এনবিআরের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের করতে।