জ্বালানি তেলের দাম পুনর্র্নির্ধারণ করে বৃহস্পতিবার প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। ছবিটি বৃহস্পতিবার তেজগাঁও থেকে তোলা -যাযাদি
বিশ্ববাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে প্রতি মাসে দাম সমন্বয় শুরুর প্রথম মাসে জ্বালানি তেলের দাম সর্বনিম্ন ৭৫ পয়সা থেকে সর্বোচ্চ ৪ টাকা পর্যন্ত কমেছে।
প্রতি লিটার ডিজেল ও কেরোসিনের দাম ১০৯ টাকা থেকে কমে হয়েছে ১০৮ টাকা ২৫ পয়সা। পেট্রোলের দাম ১২৫ টাকা থেকে কমে ১২২ টাকা হয়েছে। আর অকটেনের দাম ১৩০ টাকা থেকে কমে ১২৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
জ্বালানি তেলের দাম এই হারে পুনর্র্নির্ধারণ করে বৃহস্পতিবার প্রজ্ঞাপন জারি করেছে বিদু্যৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়। এ দিন মধ্যরাত থেকেই নতুন দরে তেল মিলছে পাম্পে। অর্থাৎ ডিজেল ও কেরোসিনের দাম প্রতি লিটারে ৭৫ পয়সা; পেট্রোলে ৩ টাকা এবং অকটেনে ৪ টাকা কমেছে। তাতে অকটেন ও পেট্রোল ব্যবহারকারী গাড়ি ও মোটরসাইকেলের খরচ যতটা কমবে, ডিজেল ব্যবহারকারী বাস বা ট্রাকভাড়া ততটা কমবে না।
জ্বালানি তেলের স্বয়ংক্রিয় মূল্য নির্ধারণের সূত্র নির্ধারণ করে নির্দেশিকা প্রকাশ করা হয় গত ২৯ ফেব্রম্নয়ারি। এতে বলা হয়, দেশে ব্যবহৃত অকটেন ও পেট্রোল ব্যক্তিগত যানবাহনে বেশি ব্যবহৃত হয়। তাই বাস্তবতার নিরিখে বিলাসদ্রব্য (লাক্সারি আইটেম) হিসেবে সব সময় ডিজেলের চেয়ে অকটেন ও পেট্রোলের দাম বেশি রাখা হয়।
অকটেন ও পেট্রোল বিক্রি করে সব সময়ই মুনাফা করে সরকারি প্রতিষ্ঠান বিপিসি। মূলত ডিজেলের ওপর বিপিসির লাভ-লোকসান নির্ভর করে। দেশে ব্যবহৃত জ্বালানি তেলের ৭৫ শতাংশই ডিজেল। দীর্ঘ সময় ধরে ডিজেল বিক্রি করেও মুনাফা করছে প্রতিষ্ঠানটি। তবে বর্তমানে ডিজেল থেকে তেমন মুনাফা হচ্ছে না। খাতের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আরও আগেই দাম কমানোর সুযোগ ছিল।
জ্বালানি তেলের মধ্যে উড়োজাহাজে ব্যবহৃত জেট ফুয়েল ও বিদু্যৎকেন্দ্রে ব্যবহৃত ফার্নেস অয়েলের দাম নিয়মিত সমন্বয় করে বিপিসি। আর ডিজেল, কেরোসিন, পেট্রোল ও অকটেনের দাম নির্ধারণ করে জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ।
ভর্তুকির চাপ এড়াতে ২০২২ সালের আগস্টে জ্বালানি তেলের দাম গড়ে ৪২ শতাংশ বাড়ানো হয়। ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে ২৩ দিনের মাথায় প্রতি লিটারে
৫ টাকা করে কমানো হয় তেলের দাম।
সে অনুযায়ী এত দিন ভোক্তা পর্যায়ে প্রতি লিটার ডিজেল ও কেরোসিন ১০৯ টাকা, পেট্রোল ১২৫ টাকা এবং অকটেন ১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল।
মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ফর্মুলা বা গাইডলাইন অনুসারে এখন থেকে প্রতি মাসেই জ্বালানি তেলের আমদানি মূল্যের আলোকে ভোক্তা পর্যায়ে বিক্রয়মূল্য সমন্বয় করা হবে।
বিশ্ববাজারে জ্বালানি
তেলের দাম নিয়মিত ওঠানামা করলেও বাংলাদেশে দামের পরিবর্তন হতো সরকারের সিদ্ধান্তের দীর্ঘ সময় পর। তাতে কখনও ভোক্তা, আবার কখনও সরকারি সংস্থা বিপিসি লোকসানের মুখে পড়ত।
জ্বালানি তেলের দামে পরিবর্তন এলে যানবাহন, দ্রব্যমূল্যসহ জনজীবনের সর্বত্র প্রভাব পড়ে। দেখা যায়, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়লে দেশেও বাড়ানোর তোড়জোড় হয়, কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে কমলে তার ?সুফল দেশের সাধারণ ভোক্তারা পেত না।
লাভ কিংবা লোকসানের পথে না হেঁটে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে জ্বালানি তেলের দাম নির্ধারণের কথা সরকারের তরফ থেকে বলা হচ্ছিল অনেক দিন ধরেই। সেই ধারাবাহিকতায় চলতি মার্চ মাসের প্রথম দিনই মাসে মাসে দাম সমন্বয়ের নির্দেশিকা প্রকাশ করে জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ। সেই নির্দেশিকায় চলতি মাস থেকেই আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে জ্বালানির দাম পুনর্র্নির্ধারণের ঘোষণা দেওয়া হয়।
গত মঙ্গলবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ডিসি সম্মেলনের একটি অধিবেশন শেষে জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু বলেন, দর সমন্বয় করার স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন পেয়েছে। ফলে দাম নির্ধারণের এ পদ্ধতি চলতি সপ্তাহ থেকেই কার্যকর হচ্ছে।