আজ থেকে ব্যাংকের মাধ্যমে বিতরণ

ব্যাংকে বিতরণের আগেই ফুটপাতে চকচকে নোট

প্রকাশ | ৩১ মার্চ ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
রাজধানীর গুলিস্তান, সদরঘাট, মিরপুর, ফার্মগেট ও রায়সাহেব বাজার এলাকায় নতুন নোটের পসরা বসিয়ে বিক্রি করতে দেখা যায় নিয়মিত এবং মৌসুমি ব্যবসায়ীদের -সংগৃহীত
রোজার ঈদ উপলক্ষে এবার সরকারি-বেসরকারি ৮০টি ব্যাংক শাখার মাধ্যমে আজ থেকে নতুন টাকার নোট বাজারে ছাড়বে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে গেলে এবার নতুন নোট মিলবে না। এদিকে ব্যাংক থেকে নতুন নোট বিতরণের এক সপ্তাহ আগে থেকেই মৌসুমি ব্যবসায়ীরা চকচকে নোটের পসরা নিয়ে ফুটপাতে বসে গেছেন; দামও হাঁকছেন গতবারের তুলনায় বেশি। গত ২০ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংক আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়, ৩১ মার্চ থেকে নতুন টাকা পাওয়া যাবে ব্যাংকের শাখায়। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের ঘোষণার পরের দিন থেকেই কোনো কোনো ব্যবসায়ীর কাছে পাওয়া যাচ্ছে নতুন টাকার নোট। মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংক ও সেনা কল্যাণ ভবনের সামনের ফুটপাতে নতুন টাকা নিতে এসেছিলেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকুরে নাইমুল ইসলাম। দরদাম করে দু'টি ১০ টাকার নতুন নোটের বান্ডেল (প্রতিটিতে ১০০টি নোট) নিতে বিক্রেতাকে অতিরিক্ত ৩০০ টাকা দিলেন তিনি। কয়েক দিন পর ব্যাংকেই তো পাওয়া যেত নতুন নোট। তাহলে ফুটপাত থেকে নিচ্ছেন কেন জানতে চাইলে নাইমুল বলেন, 'এবার আগেই বাড়ি যাব। ঈদের সময়ে নতুন টাকা নিতে বিড়ম্বনা পোহাতে হয়। বেশি টাকা দিয়ে কিনতেই যখন হবে, আগেই কিনে নিলাম। লাগলে পড়ে আরও কিনব।' ফুটপাতে নতুন নোট কীভাবে আসে, সে প্রশ্ন নতুন নয়। কিন্তু কখনও এর কোনো জবাব পাওয়া যায় না। এবারও যাচ্ছে না। এ বিষয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে বাংলাদেশ ব্যাংকের ?মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, 'বাংলাদেশ ব্যাংক চাহিবা মাত্র টাকা বদলে দেয়। সেই টাকা দিয়ে কোনো ব্যক্তি কি করল, তা দেখার বিষয় আমাদের না।' কিছু ব্যবসায়ীর কাছে সারা বছরই পর্যাপ্ত পরিমাণে নতুন নোট পাওয়া যায়, সেটা কীভাবে তারা পান- এমন প্রশ্নের উত্তরে কোনো মন্তব্য করতে চাননি মুখপাত্র। ব্যাংক যেহেতু ৩১ মার্চের আগে নতুন নোট ছাড়েনি, সে কারণে ফুটপাতের দোকানিদের বেশি দাম নেওয়ার সুযোগ বেড়েছে। গতবারও ব্যাংক চাহিদার তুলনায় কম নতুন নোট ছাড়ায় ব্যবসায়ীরা প্রতি বান্ডেলে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা করে বেশি নিয়েছিলেন। গুলিস্তানের ফুটপাতে সারা বছরই নতুন টাকা বদলে দেওয়ার ব্যবসা করেন হাসানুজ্জামান শান্ত। তিনি বলেন, 'গত ঈদের পর থেকে ১০ টাকার নোটের বান্ডেল ১০০ টাকার নিচে বিক্রি করিনি। আমরা ৮০ টাকায় কিনে আনি। এবার বাজার কেমন যাবে জানি না।' তাদের ঠিক করা নির্দিষ্ট লোকের পাশাপাশি অনেকেই গুলিস্তানে এসে তাদের কাছে নতুন টাকার নোট দিয়ে যায় বলে জানালেন এই বিক্রেতা। ফুটপাতে ১০ ও ২০ টাকার নতুন নোটের প্রতি বান্ডেলে নেওয়া হচ্ছে অতিরিক্ত ১৫০ টাকা। ৫ টাকার নতুন নোটের বান্ডিলেও (বান্ডেলে ১০০ নোট) বেশি দিতে হচ্ছে ১৫০ টাকা। ২০ টাকার নোটের এক বান্ডেলে অতিরিক্ত দিতে হচ্ছে ২০০ টাকা। অথচ বাংলাদেশের আইনে এভাবে মুদ্রা বিক্রি অপরাধ। বাংলাদেশের অনুমোদিত মুদ্রার বিনিময় করতে অতিরিক্ত কোনো ফি, চার্জ বা অর্থ নেওয়া দন্ডনীয়। তবে ফুটপাতের এসব দোকানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নজির মেলে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে ছাড়াও রাজধানীর গুলিস্তান, সদরঘাট, মিরপুর, ফার্মগেট, রায়সাহেব বাজার এলাকায় নতুন নোটের পসরা বসিয়ে থাকেন নিয়মিত ও মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। ব্যাংক থেকে নতুন নোট গত বছর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পাশাপাশি বাণিজ্যিক ব্যাংকের ৪০টি শাখার মাধ্যমে নতুন টাকার নোট বিতরণ করা হয়েছিল। এবার সেই সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। আজ থেকে ঢাকা, মুন্সীগঞ্জ, সাভার, গাজীপুর, চট্টগ্রাম ও নারায়ণগঞ্জ এলাকার নির্ধারিত ব্যাংক শাখা থেকে নতুন নোট নেওয়া যাবে। সাপ্তাহিক ছুটির দিন ছাড়া এসব শাখা থেকে ৫, ১০, ২০, ৫০ ও ১০০ টাকার নতুন নোট সংগ্রহ করা যাবে আগামী ৯ এপ্রিল পর্যন্ত। অর্থাৎ আট দিন এসব শাখা থেকে নতুন নোট নিতে পারবেন গ্রাহকরা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক বলেন, একজন গ্রাহক মোট সাড়ে ১৮ হাজার টাকার নতুন নোট নিতে পারবেন পুরনো টাকা দিয়ে। প্রতিটি শাখাকে দৈনিক কমপক্ষে ৯০ জনকে নতুন টাকা দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ হিসাবে একটি শাখা দৈনিক কমপক্ষে ১৬ লাখ ৬৫ হাজার টাকার নতুন নোট বিতরণ করবে। আর একদিনে ৮০টি শাখার মাধ্যমে বিতরণ হবে ১৩ কোটি ৩২ লাখ টাকার নতুন নোট। এভাবে আট দিনে নতুন নোট ছাড়া হবে ১০৬ কোটি ৫৬ লাখ টাকার। সাধারণত বছরে দুই ঈদে নতুন টাকার নোট ছাড়া হয়। আঙুলের ছাপ দিয়ে নতুন টাকা সংগ্রহ করতে পারেন গ্রাহকরা। গতবার এক ব্যক্তি সর্বোচ্চ সাড়ে ৮ হাজার টাকার নতুন নোট সংগ্রহ করতে পেরেছিলেন। ১৫ হাজার কোটি টাকার নতুন নোট ছাড়তে পাঁচটি কাউন্টার খুলেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। ঝামেলা ছাড়া নতুন নোট সংগ্রহে অনেকেই বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান শাখায় যেতেন। কিন্তু এবার সে সুযোগ বন্ধ। এর কারণ জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, 'বাংলাদেশ ব্যাংক কেপিআই (কি পয়েন্ট ইনস্টলেশন) ভুক্ত হওয়ায় অধিকতর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সাধারণের প্রবেশ সংকোচন করা হয়েছে। এ কারণে নতুন টাকা বিতরণ করবে না বাংলাদেশ ব্যাংক।' নতুন নোট পাওয়া যাবে ব্যাংকের যেসব শাখায় এবারে যেসব শাখায় মিলবে নতুন নোট- সোনালী ব্যাংকের জাতীয় সংসদ ভবন শাখা, সোনালী ব্যাংকের রমনা করপোরেট শাখা, সোনালী ব্যাংকের ইব্রাহীমপুর শাখা, সোনালী ব্যাংকের মুন্সীগঞ্জ করপোরেট শাখা, সোনালী ব্যাংকের কোর্ট বিল্ডিং শাখা, জনতা ব্যাংকের পোস্তগোলা শাখা, জনতা ব্যাংকের টিএসসি করপোরেট শাখা, জনতা ব্যাংকের আব্দুল গণি রোড করপোরেট শাখা, জনতা ব্যাংকের রজনীগন্ধা কচুক্ষেত করপোরেট শাখা, অগ্রণী ব্যাংকের জাতীয় প্রেস ক্লাব করপোরেট শাখা, অগ্রণী ব্যাংকের মিরপুর শাখা (মিরপুর-১), অগ্রণী ব্যাংকের রামপুরা টিভি শাখা, রূপালী ব্যাংকের স্থানীয় কার্যালয় শাখা, রূপালী ব্যাংকের উত্তরা মডেল টাউন করপোরেট শাখা, পূবালী ব্যাংকের সদরঘাট শাখা। ইসলামী ব্যাংকের গাজীপুর চৌরাস্তা শাখা, ইসলামী ব্যাংকের কাঁচপুর শাখা, ইসলামী ব্যাংকের খিলগাঁও শাখা, ব্র্যাক ব্যাংকের সাত মসজিদ রোড শাখা, ব্র্যাক ব্যাংকের শ্যামলী শাখা, ব্র্যাক ব্যাংকের বনানী শাখা, প্রিমিয়ার ব্যাংকের বনানী শাখা, এনসিসি ব্যাংকের যাত্রাবাড়ী শাখা, ব্যাংক এশিয়ার বনানী-১১ শাখা, উত্তরা ব্যাংকের যাত্রাবাড়ী শাখা, আইএফআইসি ব্যাংকের গুলশান শাখা, যমুনা ব্যাংকের গুলশান করপোরেট শাখা, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের বাবুবাজার শাখা, ন্যাশনাল ব্যাংকের মহাখালী শাখা, দি সিটি ব্যাংকের ইসলামপুর শাখা, সাউথ বাংলা অ্যাগ্রিকালচার ব্যাংকের বিজয়নগর শাখা, গেস্নাবাল ইসলামী ব্যাংকের নবাবপুর শাখা, সাউথইস্ট ব্যাংকের কারওয়ান বাজার শাখা। ওয়ান ব্যাংকের লালবাগ শাখা, ট্রাস্ট ব্যাংকের কারওয়ান বাজার শাখা, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের বসুন্ধরা সিটি (পান্থপথ) শাখা, প্রাইম ব্যাংকের এলিফ্যান্ট রোড শাখা, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের ফরেন এক্সচেঞ্জ শাখা, সাউথইস্ট ব্যাংকের করপোরেট শাখা, মার্কেন্টাইল ব্যাংকের ধানমন্ডি শাখা, সাউথইস্ট ব্যাংকের প্রধান শাখা, এনআরবিসি ব্যাংকের ধানমন্ডি শাখা, ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংকের লোকাল অফিস শাখা, মার্কেন্টাইল ব্যাংকের প্রধান শাখা (দিলকুশা), যমুনা ব্যাংকের লালমাটিয়া শাখা, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের প্রধান শাখা, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের রায়েরবাজার শাখা, ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংকের নিউমার্কেট শাখা, এক্সিম ব্যাংকের মতিঝিল শাখা, ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংকের মিরপুর শাখা, এনসিসি ব্যাংকের দিলকুশা শাখা, এক্সিম ব্যাংকের মিরপুর শাখা, গেস্নাবাল ইসলামী ব্যাংকের মিরপুর শাখা, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের মৌলভীবাজার শাখা, উত্তরা ব্যাংকের বাবুবাজার শাখা, দি সিটি ব্যাংকের মগবাজার শাখা, এনসিসি ব্যাংকের মগবাজার শাখা, ন্যাশনাল ব্যাংকের উত্তরা শাখা, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের মালিবাগ চৌধুরীপাড়া শাখা। আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের উত্তরা মডেল টাউন শাখা, সাউথইস্ট ব্যাংকের কাকরাইল শাখা, ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংকের দক্ষিণখানের এসএমই অ্যান্ড অ্যাগ্রিকালচার শাখা, এনসিসি ব্যাংকের মালিবাগ শাখা, এবি ব্যাংকের প্রগতি সরণি শাখা, মার্কেন্টাইল ব্যাংকের নারায়ণগঞ্জ শাখা, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের প্রগতি সরণি শাখা, এক্সিম ব্যাংকের শিমরাইল শাখা, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের দক্ষিণ বনশ্রী শাখা, এনআরবিসি ব্যাংকের ভুলতা শাখা, ঢাকা ব্যাংকের বনশ্রী শাখা, ঢাকা ব্যাংকের নন্দীপাড়া শাখা, প্রিমিয়ার ব্যাংকের নারায়ণগঞ্জ শাখা, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের নন্দীপাড়া শাখা, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের সাভার শাখা, ওয়ান ব্যাংকের বাসাবো শাখা, প্রাইম ব্যাংকের সাভার শাখা, প্রাইম ব্যাংকের বসুন্ধরা শাখা, ট্রাস্ট ব্যাংকের কেরানীগঞ্জ শাখা, প্রিমিয়ার ব্যাংকের বসুন্ধরা শাখা এবং ন্যাশনাল ব্যাংকের শ্রীনগর শাখা।