ভারতে লোকসভা নির্বাচন

বিক্ষিপ্ত অশান্তির মধ্যেই পশ্চিমবঙ্গের ৩ আসনে ভোট

প্রকাশ | ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
ভারতে লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফায় ভোটে শুক্রবার কিছু সহিংসতা ছাড়া মোটামুটি নির্বিঘ্নেই ভোট হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের তিনটি আসনে ভোট নেওয়া হয় কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার এবং জলপাইগুড়িতে। দেশটির ২১টি রাজ্য ও অঞ্চলে লোকসভার ১০২টি আসনে ভোটগ্রহণ হয়েছে। মোট সাত দফায় আগামী ১ জুন পর্যন্ত এই ভোটগ্রহণ চলবে। ৪ জুন ভোটের ফলাফল ঘোষণা করা হবে। এদিন বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত সারা ভারতে গড় ভোট পড়েছে প্রায় ৬০ শতাংশ, আর নির্বাচন কমিশনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গের তিনটি আসনে বিকাল তিনটে পর্যন্ত গড় ভোট পড়েছে ৬৬ শতাংশ। এদিকে, লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফার ভোটের দিন শুক্রবার পশ্চিমবঙ্গে একাধিক স্থানে বিক্ষিপ্ত কিছু অশান্তির ঘটনা ঘটেছে। কোচবিহার শহরের ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে সাধারণ ভোটারকে ভয় দেখানো এবং বাড়ি ভাঙচুর ও মারধরের অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছে তৃণমূল। অন্যদিকে, আলাদা প্রশাসন এবং আর্থিকখাতে আরও বেশি স্বায়ত্তশাসনের দাবি জানিয়ে ইস্টার্ন নাগাল্যান্ড পিপলস অর্গানাইজেশন (ইএনপিও) রাজ্যে 'জন জরুরি অবস্থা' ঘোষণা করে স্থানীয়দের ভোট বয়কট করার আহ্বান জানিয়েছে। যার ফলে নাগাল্যান্ডের ছয়টি জেলায় দুপুর পর্যন্ত ভোট প্রদানের হার প্রায় শূন্য বলে জানিয়েছে এনডিটিভি। হপাশাপাশি কোচবিহার মাথাভাঙায় রহস্যজনক মৃতু্য হয়েছে এক সিআরপিএফ জওয়ানের। বৃহস্পতিবার রাতে নীলেশ কুমার নীলু নামের ওই জওয়ান হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। মাথাভাঙ্গার বাইশগুড়ি হাইস্কুলে তিনি কুইক রেসপন্স টিমের দায়িত্বে ছিলেন। রাতে হঠাৎ তার নাক, মুখ দিয়ে রক্তপাত শুরু হয়। এরপর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। তার মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। ৪২ বছর বয়সি ওই জওয়ানের বাড়ি বিহারের নওয়াদা জেলায় বলে জানা গেছে। এদিকে জলপাইগুড়ি জেলার ডাবগ্রাম ফুলবাড়ি বিধানসভা কেন্দ্রের সিপাইপাড়া এলাকায় বিজেপির একটি বুথ অফিসে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। অভিযোগ উঠেছে, কে বা কারা রাতে বিজেপির বুথ অফিসে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। দলীয় পতাকা থেকে ব্যানার সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এলাকার বুথ সভাপতি তথা বিজেপি কর্মী গৌতম রায় বলেন, বৃহস্পতিবার রাত ৯টার পর এই ঘটনা ঘটেছে। আগে এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি। কাউকে দেখিনি। তাই কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে পারছি না। পুরো ঘটনা প্রশাসনসহ এলাকার বিজেপি বিধায়ক শিখা চট্টোপাধ্যায়কে জানানো হয়েছে। জানা যায়, ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে সকাল ৭টায়, শেষ হবে সন্ধ্যা ৬টায়। এই দফায় পুরো দেশে মোট ভোটারের সংখ্যা ১৬ কোটি ৬৩ লাখ। মোট ১ লাখ ৮৭ হাজার ভোটগ্রহণ কেন্দ্র খোলা হয়েছে। ভোট নেওয়া হয়েছে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম)। ভোটারদের সুষ্ঠুভাবে ভোটদানের জন্য প্রায় ১৮ লাখ ভোটকর্মী মোতায়েন রয়েছেন। প্রথম দফায় দেশ জুড়ে ১৬২৫ জন প্রার্থীর ভাগ্য নির্ধারণ হবে। এর মধ্যে ১৪৯১ জন পুরুষ প্রার্থী, এবং ১৩৪ জন নারী প্রার্থী। হেভিওয়েট প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন ৮ জন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, ২ জন সাবেক মুখ্যমন্ত্রী এবং একজন সাবেক রাজ্যপাল। এদের মধ্যে অন্যতম সড়ক পরিবহণমন্ত্রী নীতিন গড়কড়ি (নাগপুর কেন্দ্র), কেন্দ্রীয় ভূ-বিজ্ঞান ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ মন্ত্রী কিরেন রিজিজু (অরুণাচল পশ্চিম), কেন্দ্রীয় জাহাজ মন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল (দিব্‌রুগড়) এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বিজেপি প্রার্থী নিশীত প্রামাণিক (কোচবিহার) অন্যতম। অন্যদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক অর্থমন্ত্রী পি চিদাম্বরমের পুত্র কংগ্রেসের কার্তি চিদাম্বরম (শিবগঙ্গা), কংগ্রেস নেতা গৌরব গগৈ (জোরহাট), লোকজনশক্তি পার্টির প্রধান চিরাগ পাসওয়ান (জামুই), ডিএমকে প্রার্থী কানিমোঝি করুণানিধি (থুট্টুকুড়ি), ডিএমকে প্রার্থী দয়ানিধি মারাণ (চেন্নাই সেন্ট্রাল)। ভোট শুরুর আগেই যুবসমাজ এবং নতুন ভোটারদের উদ্দেশ্যে বার্তা দিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচন রাজ্যের মোট ৪২ লোকসভার আসনের মধ্যে প্রথম দফায় তিন কেন্দ্রে ভোট হয়েছে। তিনটি কেন্দ্রেই ত্রিমুখী লড়াই (তৃণমূল কংগ্রেস, বিজেপি ও বাম-কংগ্রেস জোট) হলেও নজর থাকবে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস ও প্রধান বিরোধী দল বিজেপির মধ্যে। গত নির্বাচনে এই তিনটি আসনই বিজেপির দখলে ছিল, দ্বিতীয় স্থানে ছিল তৃণমূল কংগ্রেস। উলেস্নখ্য, প্রথম দফার ভোট শেষে আগামী ২৬ এপ্রিল দ্বিতীয় দফায়, ৭ মে তৃতীয় দফায়, ১৩ মে চতুর্থ দফায়, ২০ মে পঞ্চম দফায়, ২৬ মে ষষ্ঠ দফায় এবং সপ্তম শেষ দফার ভোট হবে আগামী ১ জুন। এর মধ্যে প্রথম দফায় সবচেয়ে বেশি সংখ্যক আসনে ভোট নেওয়া হচ্ছে। ভোট গণনা হবে আগামী ৪ জুন।