'দেশ-জাতি দুঃসময় পার করছে'

প্রকাশ | ২১ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
দেশ ও জাতি এখন বড় দুঃসময় ও কঠিন সময় পার করছে বলে মনে করছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, পেশাজীবী ও সংগঠনের নেতারা। তারা বলেন, জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে ডা. জাফরুলস্নাহর মতো দেশপ্রেমিক, আজীবন মুক্তিযোদ্ধার বড় প্রয়োজন ছিল। শনিবার গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুলস্নাহ চৌধুরীর প্রথম মৃতু্যবার্ষিকীতে আয়োজিত নাগরিক স্মরণসভায় এসব কথা বলেন তারা। রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এই স্মরণসভার আয়োজন করে ডা. জাফরুলস্নাহ চৌধুরী প্রথম মৃতু্যবার্ষিকী স্মরণসভা আয়োজক কমিটি। সভায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ডা. জাফরুলস্নাহ চৌধুরী তার নিজের ও পুরো জাতির অভিভাবক ছিলেন। আজীবন বিপস্নবী মানুষ ছিলেন। নিজের জীবনে কখনো তিনি 'না' বলতে শিখেননি। তার জীবনে কখনো পরাজিতবোধ ছিল না। আজীবন যুদ্ধ করে গেছেন সমাজকে পরিবর্তনের জন্য, মানুষের অধিকার বাস্তবায়নের জন্য। তিনি বলেন, এখন দেশ ও জাতি বড় দুঃসময় পার করছে, কঠিন সময় পার করছে। দেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক অঙ্গণে ভয়াবহ আক্রমণ চলছে। নির্যাতিত হচ্ছেন এ দেশের গণতন্ত্রকামী মানুষ। 'এ দুঃশাসনের অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য হাত-পা ছুড়ছি। যারা রাজনীতি করি, রাজনৈতিক কর্মী আছি, তারা বিভিন্নভাবে চেষ্টা করছি। নির্বিচারে নির্যাতিত হচ্ছি, অনেকে জীবন দিচ্ছেন, প্রাণ দিচ্ছেন। এরপরও এই দানবকে সরানো যাচ্ছে না। এটা বাস্তবতা। এর জন্য জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়া প্রয়োজন। সবাইকে এক হয়ে সোচ্চার হয়ে শুধু রাজপথে নয়, সোচ্চার কণ্ঠে পুরো রাষ্ট্রযন্ত্রকে ঝাঁকি দিতে হবে।' বিএনপি মহাসচিব বলেন, ভয়াবহ শাসনের মধ্যে পড়েছে দেশ। অবলীলায় হত্যা করা হয়, গুম করা হয় এখানে। বিচারব্যবস্থা, জনগণের ভোটাধিকার ধ্বংস করা হয়েছে। নির্বাচনব্যবস্থাকে উপড়ে ফেলা হয়েছে। সব মানুষকে দাসানুদাসে পরিণত করেছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার লেশমাত্র নেই এখানে। সেই চেতনাকে ফিরিয়ে আনতে হলে নতুন করে সবাইকে চিন্তা করতে হবে। ঐক্যবদ্ধ হয়ে ডা. জাফরুলস্নাহর প্রেরণায় অনুপ্রাণিত হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে ভয়াবহ দুঃশাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। ব্র্যাকের চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিলস্নুর রহমান বলেন, ডা. জাফরুলস্নাহ চৌধুরী তার জীবনে চারটি বিষয়ে মূলত কাজ করেছেন। এর মধ্যে স্বাস্থ্যসেবায় যেখানে সাধারণ মানুষ সর্বস্বান্ত হয়ে রাস্তায় বসে পড়তেন, সেখানে তিনি মনোযোগী ছিলেন। নারীর ক্ষমতায়নের পাশাপাশি নারীর সম্মান নিয়ে তিনি সচেতন ছিলেন। নীতি সার্বভৌমত্ব হচ্ছে স্বাধীন দেশের অন্যতম বৈশিষ্ট। যেটায় অসম্ভব রকমের ঘাটতি রয়েছে। তিনি সেখানে কাজ করেছেন। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের বিষয়ে তিনি সবসময় উচ্চকণ্ঠ ছিলেন। এ ছাড়া দেশের সমাজে ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি দিনের পর দিন দেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত পর্যন্ত তার পদচারণা ছিল। ডা. জাফরুলস্নাহর পূর্ণ জীবনে কোনো বিচু্যতি হয়নি, তবে তার অনেক আকাঙ্ক্ষাও পূরণ হয়নি। তিনি বলেন, এখন বাংলাদেশকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য কার্যকরী কৌশলী জোয়ার দরকার। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই জোয়ার সৃষ্টি করলে দেশ এগিয়ে যাবে। সুজনের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, অকুতোভয় ডা. জাফরুলস্নাহকে দেশের জন্য প্রয়োজন ছিল। তিনি সত্যের পক্ষে ছিলেন, দেশের পক্ষে ছিলেন। মানুষের মুক্তির জন্য আজীবন লড়াই করে গেছেন। দেশে মুখোশধারী মুক্তিযোদ্ধার বাইরে তিনি প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। বিপস্নবী ওয়ার্কার্স পার্টি সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, যারা এখন মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে, তারা এই বীর মুক্তিযোদ্ধাকে সম্মান জানায়নি। দেশে এখন গুণী মানুষের সম্মান নিয়ে বেঁচে থাকাটাই কঠিন। বাংলাদেশ এখন দখলদারিত্বে পরিণত হয়েছে। সব রাষ্ট্রীয় কাঠামো ভেঙে পড়েছে। গণ সংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, ডা. জাফরুলস্নাহ চৌধুরী মেরুদন্ড শক্ত করে রাষ্ট্রক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ করে মানুষের জন্য কথা বলেছেন, সবাইকে সাহস জুগিয়েছেন। এক দিনের জন্যও তিনি হতাশ হননি। এই ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে তিনি সবাইকে এক কাতারে নিয়ে এসেছিলেন। ২০১৪ সালের পর ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে তিনি রাজনীতি না করলেও প্রতিবাদে সক্রিয় ছিলেন। আরও বক্তব্য রাখেন- জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান (জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, ভাসানী অনুসারী পরিষদ আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম বাবুল, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি সিনিয়র সহ-সভাপতি তানিয়া রব, গণফোরাম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুব্রত রায় চৌধুরী, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যাপক ডাক্তার এ জেড এম জাহিদ হোসেন, বেলা নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান, ঢাবি শিক্ষক অধ্যাপক আসিফ নজরুল, ফটো সাংবাদিক শহীদুল আলম, ব্রতী নির্বাহী পরিচালক শারমিন মোর্শেদ, গণঅধিকার পরিষদ (একাংশ) সভাপতি নুরুল হক নুর, গণঅধিকার পরিষদ (একাংশ) আহ্বায়ক কর্নেল (অব.) মিয়া মশিউজ্জামান, এফবিসিসিআই সাবেক পরিচালক আব্দুল হক, মায়ের ডাক সংগঠনের সমন্বয়ক সানজিদা এবং প্রয়াত জাফরুলস্নাহ চৌধুরীর মেয়ে বৃষ্টি চৌধুরীসহ আরও অনেকে।