তালিকা তৈরি শুরু

হাইব্রিডদের ব্যাপারে কঠোর হচ্ছে আ'লীগ

এরই মধ্যে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা অনুপ্রবেশকারীদের তালিকা তৈরির কাজ করছে। দলীয় একটি কমিটিও এ বিষয়ে কাজ করছে

প্রকাশ | ১৯ এপ্রিল ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
হাইব্রিড, বহিরাগত ও কাউয়াদের ব্যাপারে নেতাকর্মীদের বারবার সতর্ক করা হলেও এবার এ নিয়ে কঠোর অবস্থান নিতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাতকে যৌন নিপীড়ন ও আগুনে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনার মূল হোতা অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলার সঙ্গে আওয়ামী লীগের স্থানীয় কয়েকজন নেতার জড়িত থাকার ঘটনায় বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে ক্ষমতাসীন দলটি এ সিদ্ধান্ত নিচ্ছে বলে জানা গেছে। টানা তৃতীয় বারের মতো ক্ষমতায় আসায় সারাদেশেই বিএনপি-জামায়াতসহ বিভিন্ন দল থেকে সিরাজের মতো অসংখ্য সুবিধাভোগীরা আওয়ামী লীগে ভিড়েছেন। চলতি বছরের শুরুতে এসব নেতার বিষয়ে খোঁজ নিতে শুদ্ধি অভিযানের কথা বলা হলেও গত চার মাসে তা সম্ভব হয়নি। তবে ফেনীর ঘটনার পর নড়েচড়ে বসেছে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড। দলছুটদের ব্যাপারে দলীয় নেতা ও বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে তাদের ব্যাপারে খোঁজ নেয়া হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে এদের দল থেকে বের করে দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হবে। দলের শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফেনীর সোনগাজী ইসলামীয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় পৌর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও কাউন্সিলর মাকসুদ আলমসহ বেশ কয়েকজন নেতা সম্পৃক্ত থাকায় বিভিন্ন মহলে আলোচনা-সমালোচনা চলছে। এরই মধ্যে মাকসুদের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। তিনি মাদ্রাসা ছাত্রীর গায়ে আগুন দেয়ার ঘটনায় দায়ের করা মামলার ৪ নম্বর আসামি। তাছাড়া এই ঘটনার মূল হোতা অধ্যক্ষ সিরাজকে বাঁচাতে ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় বেশ কয়েকজন নেতা তৎপর ছিলেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয় কয়েকটি সূত্রে জানা গেছে, আশির দশকে ইসলামী ছাত্রশিবিরের মাধ্যমে জামায়াতের রাজনীতি শুরু করেন ফেনীর সোনগাজী ইসলামীয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলা। এরপর ২০১৬ সালের আগ পর্যন্ত যুদ্ধাপরাধীদের মুক্তিসহ সরকারবিরোধী নানা কর্মকান্ডে তিনি লিপ্ত ছিলেন। ওই বছর তাকে জামায়াত থেকে বহিষ্কার করা হলে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাদের ম্যানেজ করে দলে ভিড়েন এবং নিজেকে আওয়ামী লীগ নেতা হিসেবেও পরিচয় দিতে শুরু করেন। মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটিতে বিভিন্ন পদ দেয়াসহ নানা সুযোগ-সুবিধা দিয়ে স্থানীয় প্রভাবশালী নেতাদের ম্যানেজ করে ফেলেন সিরাজ। যার কারণে একজন ছাত্রীকে পুড়িয়ে হত্যার পর তড়িৎ বিভিন্ন প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেয়া হলেও নানা সমালোচনার মুখে পড়তে হচ্ছে আওয়ামী লীগকে। এর আগে দলীয় প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ কেন্দ্রীয় নেতারা অনুপ্রবেশকারীদের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে একাধিক নির্দেশনা দিয়েছেন। মূলত তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করার পর থেকেই এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়ার কথা বলছেন নেতারা। সম্প্রতি আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেছেন, 'অনুপ্রবেশকারী কেউ দলে পদপদবি পেয়েছেন এমন নজির নেই। নিয়মিত সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের মধ্য দিয়েই অনুপ্রবেশকারী, পরগাছা উপড়ে ফেলা হবে।' তবে দলীয়প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের এমন মনোভাবের পরও সিরাজের মতো সুবিধাভোগীদের যারা আস্কারা দিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। এরইমধ্যে বিএনপি-জামায়াতসহ অন্য দল থেকে যারা আওয়ামী লীগে ভিড়ছেন, তাদের ব্যাপারে খোঁজ নিতে জেলা ও মহানগর নেতাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এরপর মহানগর, জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে এসব নেতাদের তালিকা তৈরি করা হবে। তারা যেন নিজের স্বার্থে বা কোনো মহলের সহায়তায় দলের ক্ষতি করতে না পারে সে ব্যাপারে তৃণমূল নেতাদের সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও গাজীপুর মহানগরীর সভাপতি অ্যাডভোকেট আজমত উলস্নাহ খান যায়যায়দিনকে বলেন, মামলা থেকে বাঁচতে বা অন্য কারণে বিএনপি-জামায়াতের যেসব নেতা আওয়ামী লীগে ভিড়েছে, তাদের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে কেন্দ্রের নির্দেশনা পেয়েছেন। নির্দেশনায়, তারা যাতে দলের ভেতর অনুপ্রবেশ করে কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। এর পাশাপাশি যারা বিভিন্ন সময় অন্য দল থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন, তারা কেন আগের দল ত্যাগ করেছেন, তাদের উদ্দেশ্য কী, দলের কোনো ক্ষতি করবে কি না, এসব বিষয়ে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। দলের শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকায় প্রচুর আগাছা ও সুবিধাবাদী ভিড়েছে আওয়ামী লীগে। টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের পরপরই অনুপ্রবেশকারী, দলছুট-হাইব্রিড নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু কিছু নেতা নিজ স্বার্থে এদের দলে রাখেন। কেন্দ্রের প্রভাবশালী নেতা, মন্ত্রী-এমপিদের হাত ধরে জামায়াতের আমির থেকে শুরু করে বিএনপি-জামায়াতের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের কয়েক হাজার নেতা দলে এসেছেন। দলের নেতারা জানান, যে কোনো দল সরকার গঠন করলেই সুর বদলিয়ে অনেক সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজ এমনকি মাদক ব্যবসায়ী সরকারি দলে ভিড়েন। তারা সুযোগ-সুবিধা শিকারে মত্ত হয়, আর বদনাম হয় সরকারের। এ জন্য সরকার গঠনের পর থেকেই দলীয় সভানেত্রী বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখছেন। এরইমধ্যে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা অনুপ্রবেশকারীদের তালিকা তৈরির কাজ করছে। তাছাড়া দলীয় একটি কমিটিও এ বিষয়ে কাজ করছে বলে জানা গেছে। সারাদেশ অন্য দল থেকে যোগ দেয়া নেতাকর্মীদের তালিকা দেখে যাদেরকে দলীয় রাজনীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক মনে হবে, তাদের দল থেকে বের করে দেয়া হবে। এদিকে, মূল দল আওয়ামী লীগ ছাড়াও সহযোগী সংগঠনগুলোর ব্যাপারেও সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। বিভিন্ন সময় ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে। তাই মূল দলের পাশাপাশি অঙ্গ সহযোগী সংগঠনগুলোকেও এসব বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।