আরসার দুই কমান্ডারের স্বীকারোক্তি

নাশকতার জন্য অস্ত্র-গ্রেনেড মজুত করা হয় আস্তানায়

প্রকাশ | ১৬ মে ২০২৪, ০০:০০

ফারুক আহমদ, উখিয়া (কক্সবাজার)
কক্সবাজারের উখিয়ার লাল পাহাড় এলাকায় বুধবারর্ যাবের অভিযানে আরসা কমান্ডার সলিমুলস্নাহ ও তার সহযোগীকে আটক করের্ যাব -ফোকাস বাংলা
কক্সবাজারের উখিয়ার লাল পাহাড় এলাকায় বুধবারর্ যাবের অভিযানে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদসহ গ্রেপ্তার মিয়ানমারের সন্ত্রাসী সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) শীর্ষ দুই কমান্ডার জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নাশকতার জন্যই পাহাড়ি আস্তানায় অস্ত্র মজুত করা হয়েছিল। গ্রেপ্তাররা হলেন- আরসার অন্যতম প্রধান সমন্বয়ক ও কমান্ডার মো. শাহনুর প্রকাশ মাস্টার সলিম ও রিয়াজ। এর আগে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় উখিয়ার মধুর ছড়া ও ইরানি পাহাড় ক্যাম্প সংলগ্ন এলাকায় অভিযানে অস্ত্রসহ আরসার আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী মাওলানা জুবায়ের প্রকাশ ইব্রাহিমকে গ্রেপ্তার করে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন)। বুধবারর্ যাব-১৫-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন বলেন, 'বেশকিছু দিন ধরে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অরাজকতা সৃষ্টি করে হেড মাঝিসহ কয়েক রোহিঙ্গাকে গুলি ও গলা কেটে হত্যার ঘটনা ঘটছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতের্ যাব গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধি করে এবং তারই ধারাবাহিকতায় সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে উখিয়ার ক্যাম্পসংলগ্ন গহিন পাহাড়ে মিয়ানমারের সন্ত্রাসী সংগঠন আরসার আস্তানার অবস্থান শনাক্ত করা র্ যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার আরাফাত ইসলাম জানান, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতের্ যাব-১৫-এর আভিযানিক দল বুধবার ভোরে উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প-২০ লাগোয়া লাল পাহাড় এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার ও গোলাবারুদ জব্দ করা হয়। গ্রেপ্তার আরসা কমান্ডাররা হলেন- উখিয়ার ১৫ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের শাহনুর প্রকাশ মাস্টার সলিম ও ক্যাম্প ৮ ডবিস্নউ'র রিয়াজ। তাদের কাছ থেকে ৫টি গ্রেনেড, ৩টি রাইফেল গ্রেনেড, ১০টি দেশীয় তৈরি হ্যান্ড গ্রেনেড, ১৩টি ককটেল, একটি বিদেশি রিভলবার, ৯ রাউন্ড নাইনএমএম পিস্তলের অ্যামুনিশন, একটি এলজি এবং ৩টি ১২ বোর কার্তুজ উদ্ধার করা হয়। পরে আদালতের নির্দেশনায় সেনাবাহিনীর বোম ডিস্পোজাল টিম গ্রেনেড ও হাত বোমা নিষ্ক্রিয় করেছে। র্ যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, 'প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তাররা জানান, শাহনুর প্রকাশ মাস্টার সলিম ২০১৭ সালে অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশ করে ক্যাম্প-১৫-এ বসবাস শুরু করে। মিয়ানমার থাকাকালীন সেখানকার জোন কমান্ডারের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। এ সময় আরসা প্রধান আতাউলস্নাহ আবু আম্মার জুনুনির দেহরক্ষী হিসেবেও দুই মাস দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থী হিসেবে ২০১৭ সালে আসার পর মৌলভী আকিজের মাধ্যমে আরসায় পুনরায় যোগ দেন। আরসার হয়ে আধিপত্য বিস্তার ও কোন্দলসহ খুন, অপহরণ, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে পড়েন তিনি। অস্ত্র চালনাসহ বিভিন্ন বিস্ফোরকের ওপর পারদর্শী হওয়ায় তাকে ক্যাম্প-১৫-এর কমান্ডার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। সাম্প্রতিক সময়ে ক্যাম্পে আরসার নেতৃত্বশূন্য হয়ে পড়ায় তিনি আরসার প্রধান সমন্বয়কের দায়িত্ব নেন। পার্শ্ববর্তী দেশে সৃষ্ট সংঘর্ষের ফলে লুটকৃত অস্ত্র-গোলাবারুদ বিভিন্ন মাধ্যমে সংগ্রহ করে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ত্রাস সৃষ্টি করে আসছিলেন। তার বিরুদ্ধে ৩টি হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলা রয়েছে। গ্রেপ্তার রিয়াজও ২০১৭ সালে বাস্তুচু্যত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে এবং বসবাস শুরু করেন। তিনি ২০১৮ সালে মৌলভী ইব্রাহিমের মাধ্যমে আরসায় যোগ দেন এবং প্রাথমিকভাবে পাহারাদারের দায়িত্ব পালন করেন। এ সময় তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ আরসাবিরোধী সংগঠনের সদস্যদের গতিবিধির ওপর নজর রাখতেন। ২০১৯ সালের মাঝামাঝি মিয়ানমার ফিরে গিয়ে ৬ মাসের সামরিক বিভিন্ন বিষয়াদিসহ মাইন, বোমা, হাত বোমা ও বিস্ফোরক তৈরির প্রশিক্ষণ নেন। সম্প্রতি আবার বাংলাদেশে ঢুকে মাস্টার সলিমের অন্যতম সহযোগী হয়ে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডে অংশ নিতেন। তার বিরুদ্ধে ১টি হত্যা মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। এর আগে মঙ্গলবার বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত উখিয়ার মধুর ছড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্প-৪ (এক্স.) এবং ইরানি পাহাড় ক্যাম্প ২০ (এক্স.) এলাকায় বিশেষ যৌথ অভিযান চালিয়ে অস্ত্রসহ আরসা শীর্ষ সন্ত্রাসী মাওলানা জুবায়ের প্রকাশ ইব্রাহিমকে আটক করে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন)। ১৪ এপিবিএন সহ-অধিনায়ক (পুলিশ সুপার) মো. আরেফিন জুয়েলের দিক-নির্দেশনায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অহিদুর রহমানের সার্বিক তত্ত্বাবধানে মধুরছড়া পুলিশ ক্যাম্প এবং ওয়ালাপালং পুলিশ ক্যাম্পের আওতাধীন ক্যাম্প-৪ (এক্স.) এবং ২০ (এক্স.)-এর বিভিন্ন বস্নকে যৌথ অভিযান চালানো হয়। উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি মো. শামীম হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, 'অভিযানকালে তালিকাভুক্ত আরসার শীর্ষ সন্ত্রাসী মৌলভী জোবায়ের প্রকাশ ইব্রাহিমকে ১টি ওয়ান শুটারগান ও ২ রাউন্ড রাইফেলের গুলিসহ গ্রেপ্তার করা হয়। তার বিরুদ্ধে উখিয়া থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।'