শ্রীলংকার ঘটনায় উগ্রবাদীরা অনুপ্রাণিত হতে পারে

ক্র্যাবের অনুষ্ঠানে মনিরুল ইসলাম

প্রকাশ | ২৪ এপ্রিল ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
মঙ্গলবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ক্র্যাব আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন সিটিটিসি ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম
যাযাদি রিপোর্ট পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেছেন, শ্রীলংকায় সিরিজ বোমা হামলার ঘটনায় বাংলাদেশ ও বিশ্বজুড়ে ঝিমিয়ে পড়া উগ্রবাদীরা অনুপ্রাণিত হতে পারে। তবে বাংলাদেশে তাদের সুসংগঠিতভাবে কোনো ধরনের হামলার সক্ষমতা নেই। মঙ্গলবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে আয়োজিত 'মিট উইথ মনিরুল ইসলাম' শীর্ষক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ক্র্যাব)। মনিরুল ইসলাম বলেন, এক দেশের ঘটনায় অন্য দেশের সন্ত্রাসীরা উৎসাহী হয় এবং অনুকরণ করার চেষ্টা করে। হলি আর্টিজানে হামলার পর ইন্দোনেশিয়ার একটি গোষ্ঠী উদ্বুদ্ধ হয়ে নিজেদের মধ্যে প্রচারণা চালিয়েছিল। সর্বশেষ নিউজিল্যান্ডে হামলার পর কিছু গোষ্ঠী তাদের নিজেদের চ্যানেলগুলোতে খ্রিস্টান বা ইহুদিবিরোধী প্রচারণায় তৎপর হতে দেখা গেছে। শ্রীলংকায় হামলার ঘটনায়ও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে উগ্রবাদীদের অনুপ্রাণিত করতে পারে। দেশে কারও কারও মনে আসতে পারে, 'আমরা কিছু করব'। কিন্তু বাংলাদেশে কারও পক্ষে এ ধরনের ঘটনা ঘটানোর সাংগঠনিক সক্ষমতা নেই। যারা আছে, তারা বিচ্ছিন্নভাবে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। ভবিষ্যতেও যেন কোনো গোষ্ঠী প্রস্তুতি নিয়ে কোনো ধরনের নাশকতা চালাতে না পারে, এমন তৎপরতার কথাও জানান তিনি। মনিরুল ইসলাম বলেন, 'হলি আর্টিজানে হামলার পর বিভিন্ন দেশ ভেবেছে আমরা ঠেকাতে পারব না। কিন্তু সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি এবং সর্বস্তরের মানুষের সহযোগিতায় জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণ করা গেছে। তবে নির্মূল করা সম্ভব হয়নি।' তিনি বলেন, সন্ত্রাসবাদ বা জঙ্গিবাদ যেহেতু একটা মতবাদ, তাই কেউ না কেউ এই মতাদর্শে থেকেই যায়। যারা এই মতবাদের, তাদের অনেককেই ইতোমধ্যে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। এ ছাড়া অনেকে নজরদারিতে রয়েছে। শ্রীলংকায় হামলার বিষয়ে এক প্রশ্নের জাবাবে এই অপরাধ বিশেষজ্ঞ বলেন, শ্রীলংকায় দীর্ঘদিন ধরে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের গৃহযুদ্ধ ছিল। লিবারেশন টাইগার্স অব তামিল ইলমের (এলটিটিই) নামে একটি আত্মঘাতী বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রম্নপ তৎপর ছিল সেখানে। গত বছর সর্বশেষ শ্রীলংকায় যে দাঙ্গাটি হয়েছিল, সেটি বৌদ্ধ এবং মুসলমানদের মধ্যে। এ ছাড়া এলটিটিই কখনো কোনো ধর্মীয় গোষ্ঠীকে টার্গেট করে হামলা চালায়নি। তাদের টার্গেট, গভর্নেন্স মেকানিজমে যারা রয়েছে, তারা। কিন্তু শ্রীলংকার গির্জা এবং হোটেলে যে হামলাটি হয়েছে, এটি নিঃসন্দেহে সন্ত্রাসবাদ। নিউজিল্যান্ডে হামলার পর পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গার উগ্রবাদী সংগঠনগুলো খ্রিস্টানদের ওপর ক্ষিপ্ত হতে দেখা গেছে। শ্রীলংকায় খ্রিস্টানদের ধর্মীয় উপাসনালয়ে হামলা হয়েছে, আর এটার ইমপ্যাক্ট বাড়ানোর জন্য হোটেলগুলোতে হামলা করা হয়েছে। মনিরুল ইসলাম বলেন, হামলায় সাধারণত কোনো গোষ্ঠীর শীর্ষ পর্যায়ের কেউ অংশ নেয় না। কিন্তু এখানে তাওহিদ জামাতের শীর্ষ পর্যায়ের একজন সরাসরি হামলায় অংশ নিয়েছে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে এবং তিনি নিহত হয়েছেন। মালদ্বীপ থেকে একটা বড় সংখ্যার লোকজন আইএসে যোগ দিয়েছে। মালদ্বীপের সঙ্গে শ্রীলংকার নৌপথে যোগাযোগ রয়েছে। এ ছাড়া, তাওহিদ জামাতের একটা অংশও আইএসের বায়াত নিয়েছিল। তবে হামলাকারীদের মধ্যে তাদের কেউ ছিল কিনা, এখনই তা বলা মুশকিল বলেও মন্তব্য করেন তিনি। আইএসের কেউ বাংলাদেশে ফিরতে চাইলে ব্যবস্থা জঙ্গি সংগঠন আইএস থেকে নিজ নিজ দেশে ফিরতে চেয়েছেন অনেকেই। বাংলাদেশিরা ফিরতে চাইলে, তাদের ফেরত নেয়া হবে কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মনিরুল ইসলাম বলেন, কেউ যদি ফিরতে চায়, তাদের বিষয়ে আইনগত দিক দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বলেন, মূলত ২০১৪ সালের শেষ দিকে বাংলাদেশ থেকে আইএসে যোগদান করে অনেকে। তাদের কেউ ধরা পড়েছে, কেউ নিহত হয়েছে অথবা কেউ চিহ্নিত হয়েছে। তারা (বর্তমানে আইএসে থাকারা) যদি এখন দেশে ফিরতে চায়, তাহলে তাদের অবশ্যই এয়ারক্রাফট দিয়ে দেশে ফিরতে হবে। এর জন্য তাদের পাসপোর্ট লাগবে। যেহেতু তারা ২০১৪ সালের শেষের দিকে গিয়েছিল, তাদের পাসপোর্ট মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে যাওয়ার কথা। দেশে ফিরতে হলে তাদের নতুন করে পাসপোর্টের আবেদন করতে হবে। তারা সিরিয়ালসহ পার্শ্ববর্তী দেশগুলো থেকে যখন পাসপোর্ট আবেদন পাচ্ছেন, সেগুলো অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে যাচাই-বাছাই করে পাসপোর্ট দিচ্ছেন। তাই তাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে দেশে আসা সম্ভব নয়। এ ছাড়া কেউ যদি ফিরে আসতে চায়, তাহলে আইনগত দিক বিবেচনা করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। সম্প্রতি আইএস'র একটি ভিডিওতে বাংলাদেশে খলিফা নিয়োগের বিষয়ে তিনি বলেন, এটা আইএস'র নিজস্ব দাবি। বাংলাদেশে তাদের কোনো খলিফা নেই। হয়ত প্রবাসী বাংলাদেশিদের কেউ তাদের সঙ্গে থাকতে পারে, তাকেই খলিফা বলে দাবি করছে তারা। রোহিঙ্গাদের জঙ্গিবাদে জড়ানোর সম্ভাবনার বিষয়ে সিটিটিসি বিভাগের প্রধান বলেন, রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের জন্য একটি বড় সমস্যা। তারা দীর্ঘদিন এ দেশে থাকলে সোশ্যাল ডিজঅর্ডারসহ নানা কর্মকান্ডে জড়িয়ে যেতে পারে। তাদের দেশে পাঠাতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে চেষ্টা চালানো হচ্ছে। রোহিঙ্গারা তাদের বাড়ি হারিয়েছে, পরিবারের সদস্যদের হারিয়েছে, তারা ভবিষ্যতে উগ্রবাদে জড়িয়ে পড়তে পারে। তবে দেশের সব গোয়েন্দা সংস্থা তাদের তীক্ষ্ন নজরদারিতে রেখেছে। তারা যদি এমন কিছু করার চেষ্টা করে, তাহলে আমরা গোয়েন্দা তথ্যের মাধ্যমে আগাম জানতে পারব। ধর্মভিত্তিক জঙ্গিবাদের আমদানিকারকরা চিহ্নিত হয়েছে কিনা- এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রথমদিকে যারা আফগানিস্তানে গিয়েছিল, তারাই দেশে ফিরে ধর্মীয় ও সহিংসতাভিত্তিক জঙ্গিবাদের সূচনা করে। প্রথমদিকে এই আমদানিকারকদের অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়। কারও কারও ফাঁসি হয়েছে। তিন-চারজন হয়ত পলাতক রয়েছে, তবে সবাই চিহ্নিত। কারাগারে জঙ্গিবাদ ছড়ানোর বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মনিরুল ইসলাম বলেন, এটি একটি গেস্নাবাল সমস্যা। যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের অনেক দেশে কারাগারে জঙ্গিরা রেডিক্যালাইজড হচ্ছে। বাংলাদেশেও এমন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর অন্যতম কারণ, মামলার দীর্ঘসূত্রতা, যার ফলে দীর্ঘদিন কারাগারে থাকা। তবে এই দীর্ঘসূত্রতা কমাতে দুটি সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইবু্যনাল করা হয়েছে। তাদের মামলাগুলো নিষ্পত্তির চেষ্টা করা হচ্ছে। এ ছাড়া কারাগারগুলোতে সব ধরনের সন্ত্রাসবিরোধী আসামির মেলামেশার সম্ভাবনা খুব কম। অনুষ্ঠানে ক্র্যাবের সভাপতি আবুল খায়ের, সাধারণ সম্পাদক দীপু সারওয়ার, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া ও পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মাসুদুর রহমানসহ ক্র্যাব নেতা ও সিটিটিসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।